নাইজেরিয়ায় সমকামীদের ‘সোজা পথে আনতে’ যা যা করা হয়
নাইজেরিয়ায় সমকামীদের জন্য গত সপ্তাহ ছিল এক গুরুত্বপূর্ণ সময়। ‘একই লিঙ্গের মানুষের প্রতি প্রকাশ্যে ভালোবাসা প্রদর্শনের’ দায়ে অভিযুক্ত ৪৭ জন পুরুষের বিরুদ্ধে করা এক মামলার শুনানি হওয়ার কথা ছিল গত মঙ্গলবার। যদিও পরে তা হতে পারেনি, কারণ সরকারপক্ষের সাক্ষী হাজির হননি।
অত্যন্ত ধর্মভীরু দেশ নাইজেরিয়ার বিচারক বলেছেন, এর পরের শুনানির দিনেও যদি সাক্ষী হাজির না হয়, তাহলে তিনি মামলা খারিজ করে দেবেন।
বিবিসি বাংলার খবরে বলা হয়, সমকামীদের শুধু যে পুলিশি হয়রানি, জোর করে অর্থ আদায় বা ব্ল্যাকমেইলের শিকার হতে হয়, তাই নয়—সেখানে কিছু অঞ্চলে সমকামী নারী বা পুরুষদের ‘স্বাভাবিক পথে’ আনতে তাদের ওপর মর্মান্তিক পন্থায় নানা রকম নির্যাতনও চালানো হয়ে থাকে।
দেশটিতে ২০১৪ সালে সমকামীদের বিয়ে নিষিদ্ধ করে ২০১৪ সালে একটি আইন করেছিলেন প্রেসিডেন্ট গুডলাক জোনাথন। মানবাধিকারকর্মীরা বলেন, এর পর থেকে দেশটিতে সমকামী পুরুষ ও নারীরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন।
বিবিসির নাইজেরিয়া সংবাদদাতা মাইয়েনি জোনস তিনজন নাইজেরিয়ানের কাছে জানতে চেয়েছিলেন একজন সমকামী হিসেবে দেশটিতে কীভাবে জীবন কাটাতে হয় তাঁদের। নিরাপত্তার স্বার্থে তাঁদের আসল নাম বদলে দেওয়া হয়েছে।
যৌনাঙ্গে তেল ঢালা
নাইজেরিয়ান তরুণী আপুনানউ বলেন, তাঁকে সমকামিতা থেকে ফিরিয়ে আনতে তথাকথিত ‘চিকিৎসা’ দেওয়া হয়। তিনি বলেন, ‘আমার যৌনাঙ্গে তেল ঢেলে দেওয়া হয়।’
ওই তরুণী বলেন, ‘আমি জানি না, ওই তেলে কী মেশানো ছিল, কিন্তু সেটা গোলমরিচের মতো কিছু একটা হবে। আমি খুবই অস্বস্তি বোধ করছিলাম।’
আপুনানউ নিশ্চিত ছিলেন না যে এই তেল ঢালা চিকিৎসা দিয়ে কী অর্জন হবে। তিনি বলেন, ‘আমি ভাবলাম, সমকামিতা ত্যাগ করার সঙ্গে এর কী সম্পর্ক? তবে আমার মনে হচ্ছিল, মেয়ে হয়ে আরেকজন মেয়ের প্রতি আকর্ষণের এ অনুভূতি যেন চলে যায়, সেজন্য যেকোনো কিছু নিতে আমি রাজি আছি।’
তিন দিন ধরে মারধর
তরুণ স্যামুয়েল যখন তাঁর পরিবারকে বললেন, তিনি অন্য পুরুষের প্রতি আকর্ষণ বোধ করেন, তখন এর প্রতিক্রিয়া হলো খুবই খারাপ। স্যামুয়েল বলেন, ‘আমার জন্ম খুবই ধার্মিক এক খ্রিস্টান পরিবারে। তারা মনে করে, সমলিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ একটা শয়তানি ব্যাপার। তারা ব্যাপারটা নিল এমনভাবে যেন আমার জন্ম হওয়াটাই ঠিক হয়নি, আমাকে দেখলে যেন তাদের বমি আসে।’
স্যামুয়েল আরো বলেন, “আমার বোন আমাকে ‘সুপথে ফিরিয়ে আনার’ জন্য চিকিৎসা দিতে একজন লোক আনে। তিনি আমার চিকিৎসা শুরু করেন। তিনি মাঝেমধ্যে আসতেন, আধ্যাত্মিক ব্যায়াম করাতেন, এর মধ্যে ছিল আমাকে উলঙ্গ করা এবং চাবুক মারা। প্রথম দিন সাতবার। দ্বিতীয় দিন ১৪ বার। আমি ব্যথা সহ্য করার ক্ষমতা সম্পূর্ণ হারিয়ে মাটিতে পড়ে গেলাম। তৃতীয় দিন থেরাপি চলার সময় আমি জ্ঞান হারালাম।’
পুলিশি হয়রানি
গ্যাব্রিয়েল নামের আরেকজন বলেন, ‘নাইজেরিয়ায় সমকামী হওয়াটা খুবই ভয়ের ব্যাপার।’ মানবাধিকারকর্মীরা বলেন, ২০১৪ সালের আইনের পর পুলিশি হয়রানি এবং অর্থ আদায় স্পষ্টভাবেই বেড়ে গেছে।
গ্যাব্রিয়েল বলেন, ‘আমাকে যারা ধরে নিয়ে গিয়েছিল, তারা পুলিশ হলেও ইউনিফর্ম পরা ছিল না। তারা আমাকে একটা বাসে তুলল, হুমকি দিতে লাগল আমাকে বলাৎকার করার। এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আপনি সমকামীদের পছন্দ না করতে পারেন, কিন্তু এমনভাবে সীমারেখা লঙ্ঘন করতে পারেন না।’