নারীর সঙ্গে করমর্দন না করায় আটকে গেল নাগরিকত্ব
প্রয়োজনীয় সব শর্ত পূরণ করেও জার্মানির নাগরিকত্ব পাচ্ছেন না এক মুসলিম চিকিৎসক। নাগরিকত্ব পাওয়ার পরীক্ষায় খুব ভালো করেছিলেন ওই ব্যক্তি। কিন্তু নাগরিকত্ব সনদ নেওয়ার সময় এক নারীর সঙ্গে হাত মেলাতে রাজি হননি তিনি। এতেই ঘটে বিপত্তি।
লেবাননের ৪০ বছর বয়সী ওই চিকিৎসক ২০১২ সাল থেকে জার্মানিতে আছেন। জার্মানিতে মেডিসিনে পড়াশোনা করে একটি ক্লিনিকে সিনিয়র ফিজিশিয়ান হিসেবে কাজ করছেন। নাগরিকত্বের আবেদন করার সময় জার্মানির সংবিধান মেনে চলা এবং চরমপন্থার বিরোধিতা করার অঙ্গীকারও করেছিলেন ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করে। কিন্তু ঝামেলা বাধে ২০১৫ সালে, নাগরিকত্বের জন্য নির্ধারিত পরীক্ষায় ওই চিকিৎসক খুব ভালো ফল করার পর। সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে এ খবর জানিয়েছে।
বছর পাঁচেক আগে নাগরিকত্বের পরীক্ষা পাসের সনদ দেওয়ার সময় সংশ্লিষ্ট এক নারী কর্মকর্তা সৌজন্যমূলকভাবে ওই চিকিৎসকের সঙ্গে হাত মেলাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু লেবানিজ ওই চিকিৎসক জানিয়ে দেন, কোনো নারীর সঙ্গে তিনি হাত মেলাবেন না। এরপরই সনদ স্থগিত রেখে ওই ব্যক্তির নাগরিকত্বের আবেদনও বাতিল করা হয়। বিষয় পরে আদালত পর্যন্ত গড়ায়।
লেবাননের ওই চিকিৎসক শুরুতে দাবি করেন, তিনি নিজের স্ত্রীকে কথা দিয়েছেন, অন্য কোনো নারীর হাত স্পর্শ করবেন না। তাই নারী কর্মকর্তার সঙ্গে হাত মেলানো তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়।
কিন্তু পরে নাগরিকত্বের আবেদন পুনর্বিবেচনার জন্য আপিল করার সময় আদালতে তিনি বলেন, আসলে কোনো পুরুষের সঙ্গেও তিনি হাত মেলান না।
কিন্তু জার্মানির স্টুটগার্টের প্রশাসনিক আদালতেও ওই চিকিৎসকের আবেদন প্রত্যাখ্যাত হয়। নাগরিকত্ব না দেওয়ার সিদ্ধান্ত বহাল রেখে স্টুটগার্টের আদালত রায় দেন, কোনো পুরুষের সঙ্গেও হাত না মেলানোর দাবি আসলে একটা কৌশলমাত্র।
তারপর স্টুটগার্টের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক আদালত ভিজিএইচে আপিল করেন লেবাননের ওই চিকিৎসক। গত শনিবার সেই আদালতও আবেদন প্রত্যাখ্যান করে জানিয়েছেন, ‘সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের মৌলবাদী ধারণার’ বশবর্তী হয়ে ‘যৌন আকর্ষণজনিত বিপদের আশঙ্কা’ থেকে কেউ যখন নারীর সঙ্গে করমর্দন করতে অস্বীকৃতি জানায়, তখন সে ব্যক্তি ‘জার্মানিতে সবার সঙ্গে মিলেমিশে বসবাস করার’ ব্যবস্থাকেই প্রত্যাখ্যান করে। আদালত আরো জানান, বাদী চাইলে কেন্দ্রীয় প্রশাসনিক আদালতের শরণাপন্ন হতে পারেন।