‘পার্টিগেট’ ইস্যুতে দলে বিদ্রোহের মুখে বরিস জনসন
কোভিড-১৯-এর নিয়ম ভেঙে পার্টি করার অভিযোগে নিজ দলে বিদ্রোহের মুখে পড়েছেন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে এ খবর জানিয়েছে।
বিপাকে পড়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। করোনাকালে নিয়ম ভেঙে পার্টি করার অভিযোগ (‘পার্টিগেট’) উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। আর, এ নিয়ে নিজের দল কনজারভেটিভ পার্টির ভেতরেই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন বরিস জনসন। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে জিতে আসার পর এটাই জনসনের সামনে দলের অন্দরমহলে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্চ হিসেবে দেখা দিয়েছে।
এরই মধ্যেই দলের এক পার্লামেন্ট সদস্য বরিস জনসনের বিরোধিতা করে বিরোধীদের সমর্থন করছেন। কনজারভেটিভ পার্টির অন্তত ৫৪ জন আইনসভা সদস্য দলীয় কমিটির কাছে জনসনের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন।
‘পর্ক পাই প্লট’
কনজানভেটিভ পার্টির মধ্যে এ বিদ্রোহকে বলা হচ্ছে ‘পর্ক পাই প্লট’। কারণ, কনজারভেটিভ পার্টির যে পার্লামেন্ট সদস্য প্রথম বিদ্রোহ করেছেন, তিনি রুটল্যান্ড-মেল্টনের প্রতিনিধি। আর এ জায়গাকে বলা হয় মেল্টন পর্ক পাইয়ের কেন্দ্র। অবশ্য লন্ডনে ‘পর্ক পাই’ কথাটি গালি হিসেবেও ব্যবহার করা হয়।
বরিস জনসনের মাথাব্যথা কেবল একজন পার্লামেন্ট সদস্যকে নিয়েই নয়। পার্লামেন্টে দলের ৩৬০ সদস্যের মধ্যে ৫৪ জন এরই মধ্যে জনসনকে নেতৃত্ব থেকে সরানোর দাবি নিয়ে দলীয় কমিটিকে চিঠি দিয়েছেন বা দিচ্ছেন। রক্ষণশীলদের পক্ষে থাকা সংবাদপত্র ডেইলি টেলিগ্রাফ জানিয়েছে, ২০ জন সদস্য চিঠি পাঠানোর পরিকল্পনা করেছেন, বাকিরা চিঠি পাঠিয়ে দিয়েছেন।
অন্যদিকে, ডানপন্থি টাইমস জানিয়েছে, অন্তত ৫৮ জন পার্লামেন্ট সদস্য প্রকাশ্যে জনসনের সমালোচনা করেছেন।
ডয়চে ভেলের প্রতিনিধি শার্লট চেলসম-পিল বলছেন—এখনও বোঝা যাচ্ছে না যে, জনসনের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনা হবে কি না, তবে বিরোধী পার্লামেন্ট সদস্যেরা বলছেন—প্রধানমন্ত্রী সরবেন কি না—সে প্রশ্ন আর নতুন নয়। আলোচনার বিষয় হলো—কবে তিনি সরে দাঁড়াবেন?
বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে—কনজারভেটিভ পার্টির জনপ্রিয়তা কমছে। অনেক সদস্য আর নির্বাচিত হয়ে আসতে পারবেন না। তাঁরা এর জন্য বরিস জনসনকে দায়ী করছেন। বিশেষ করে যাঁরা ইংল্যান্ডের উত্তর ভাগের প্রতিনিধিত্ব করেন, তাঁদের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। তাঁদের বলা হয় ‘রেড ওয়াল সিট’-এর প্রতিনিধি। এ সব কেন্দ্রে লেবার পার্টি খুবই জনপ্রিয়। কিন্তু, সেখানকার ভোটদাতারা ব্রেক্সিটের পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন বলে কনজারভেটিভ প্রার্থীরা জিতেছিলেন।
পদত্যাগ করবেন না জনসন
গতকাল বুধবার ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ছিল প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করার দিন। প্রশ্নোত্তর পর্বে রীতিমতো উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পার্লামেন্ট। বরিস জনসন স্পষ্ট জানান, তাঁর ইস্তফা দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই। তিনি তাঁর সাবেক পরামর্শদাতার অভিযোগও অস্বীকার করেছেন। সাবেক পরামর্শদাতা ডমিনিক কামিংসের অভিযোগ ছিল—করোনাকালে পার্টি করা নিয়ে মিথ্যা কথা বলেছিলেন বরিস জনসন। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘নিজের মদ নিজে আনো পার্টি’ যে লকডাউনের নিয়ম ভেঙে হবে, সে কথা তাঁকে কেউ বলেননি।
এ ছাড়া পার্লামেন্টে বিরোধী দল লেবার পার্টির কঠোর সমালোচনার মুখেও পড়েছেন বরিস জনসন। লেবার পার্টির নেতারা বলেছেন, প্রতি সপ্তাহে জনসন উদ্ভট ও অবাস্তব যুক্তি দিচ্ছেন। তিনি কোনোভাবেই পার্টিগেটের দায় এড়িয়ে যেতে পারেন না।