‘পিঠে ছুরি মারা’ চুক্তি : যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ায় নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতদের ডেকে পাঠাল ফ্রান্স
চীনকে মোকাবিলায় সম্প্রতি একটি বিশেষ নিরাপত্তা চুক্তি ঘোষণা করেছিল যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু, চুক্তি সাক্ষরের দুদিন যেতে না যেতেই যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে সম্পর্কে টানাপোড়েনের জেরে দেশ দুটিতে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতদের ডেকে পাঠাল ফ্রান্স। সংবাদমাধ্যম ফ্রান্স২৪ নিউজ চ্যানেল এবং এবিসি নিউজ এ খবর জানিয়েছে।
ত্রিদেশীয় চুক্তিটির নাম দেওয়া হয়েছিল ‘এইউকেইউএস’ (AUKUS)। এই চুক্তিতে ছিল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, কোয়ান্টাম ও সাইবার প্রযুক্তি সংক্রান্ত বিষয়গুলো। চুক্তি অনুযায়ী, দেশ তিনটি নিজেদের উন্নত প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি পরস্পরের সঙ্গে ভাগাভাগি করবে বলে যৌথ ঘোষণায় জানানো হয়েছিল।
কিন্তু, ত্রিদেশীয় চুক্তির ফলে অস্ট্রেলিয়া ফ্রান্সের নকশায় সাবমেরিন তৈরির একটি চুক্তি বাতিল করে। অস্ট্রেলীয় নৌবাহিনীর জন্য ১২টি সাবমেরিন তৈরির জন্য ২০১৬ সালে ৫০ বিলিয়ন অস্ট্রেলীয় ডলারের একটি কাজ পেয়েছিল ফ্রান্স। ওই চুক্তিটি ছিল অস্ট্রেলিয়ার এ যাবৎকালের সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা চুক্তি। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে দেরি হচ্ছিল। বিলম্বের অন্যতম কারণ ছিল—প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদানের অনেকগুলো নিজেরা স্থানীয়ভাবে সরবরাহ করতে চাইছিল অস্ট্রেলিয়া।
এদিকে, অস্ট্রেলিয়ার কাছে ফ্রান্সের সাবমেরিন বিক্রির চুক্তি বাতিলের ঘটনাকে কেন্দ্র করে অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নাখোশ ফ্রান্স।
ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যঁ ইভ লু দ্রিয়া বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে স্বাক্ষরিত নিরাপত্তা চুক্তির ‘ভয়ঙ্কর পরিণতি’ বিবেচনায় নিয়ে ওয়াশিংটন ও ক্যানবেরায় নিযুক্ত ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূতদের ডেকে পাঠানো হয়েছে। ওই নিরাপত্তা চুক্তির কারণে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ফ্রান্সের সাবমেরিন বিক্রির চুক্তি বাতিল হয়ে গেছে।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁর ব্যক্তিগত নির্দেশে রাষ্ট্রদূতদের ডেকে পাঠানো হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তির ভিত্তিতে অস্ট্রেলিয়া প্রথম বারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের গোপন সামরিক তথ্য ব্যবহার করে পারমাণবিক সাবমেরিন নির্মাণ করতে পারবে।
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়া দাবি করেছে, ভারত মহাসাগর ও প্রশান্ত মহাসাগরে চীনের ক্রমবর্ধমান সামরিক উপস্থিতি থেকে সৃষ্ট উদ্বেগের কারণে তারা এ চুক্তি করেছে। চুক্তিটি চূড়ান্তভাবে ঘোষিত হওয়ার মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে ফ্রান্স বিষয়টি জানতে পেরেছিল।
এ চুক্তি স্বাক্ষরের তীব্র নিন্দা জানিয়ে গতকাল শুক্রবার বিবৃতি দিয়েছে চীন। ফলে, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়া চুক্তিটি সই করে একইসঙ্গে চীন ও ফ্রান্সকে ক্ষুব্ধ করেছে।
ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী গতকাল শুক্রবার এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার এই চুক্তি স্বাক্ষরকে ‘পেছন থেকে বা পিঠে ছুরি মারা’ বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, মিত্র দেশগুলোর এই অপ্রত্যাশিত আচরণ অনাকাঙ্ক্ষিত অনেক ঘটনার জন্ম দেবে।
তবে, হোয়াইট হাউসের একজন মুখপাত্র বলেছেন, বাইডেন প্রশাসন এ ঘটনার জন্য দুঃখিত এবং এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য শিগগিরই ফ্রান্সের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে।
অস্ট্রেলিয়াকে পরমাণু শক্তিচালিত সাবমেরিন সরবরাহের সিদ্ধান্তের জের ধরে চীন ক্ষোভ প্রকাশ করেছে৷ চীনের অভিযোগ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়া আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার মারাত্মক ক্ষতি করছে৷
অন্যদিকে, হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জেন সাকি বলেন, মার্কিন প্রশাসন মোটেই চীনের সঙ্গে সংঘাত চায় না৷ এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নিরাপত্তা রক্ষাই ওয়াশিংটনের উদ্দেশ্য৷ যুক্তরাষ্ট্র থেকে সাবমেরিন প্রযুক্তি গ্রহণের সিদ্ধান্ত পুরোপুরি অস্ট্রেলিয়ার ছিল বলেও সাকি মনে করিয়ে দেন৷