প্রাণভয়েই দেশ ছাড়তে হয়েছে, দাবি মোরালেসের
প্রাণ হারানোর ভয়ে মেক্সিকোয় রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়েছেন বলে দাবি করেছেন বলিভিয়ার সদ্য পদত্যাগ করা প্রেসিডেন্ট ইভো মোরালেস।
মোরালেসকে বহনকারী একটি মেক্সিকান বিমান গতকাল মঙ্গলবার মেক্সিকো সিটিতে পৌঁছানোর পর এক সংক্ষিপ্ত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
মোরালেস বলেন, তাঁকে ক্ষমতা ছাড়ার জন্য চাপ দেওয়া হয়েছিল, তবে তিনি স্বেচ্ছায়ই পদত্যাগ করেছেন। ‘আর যেন রক্ত না ঝরে, তা নিশ্চিত করতেই’ ক্ষমতা ছেড়ে দিয়েছেন বলে দাবি করেন মোরালেস।
মোরালেস এ সময় দাবি করেন, তাঁকে ‘উৎখাতের ষড়যন্ত্রকারী’রা হত্যার জন্য তাঁর মাথার দাম ঘোষণা করেছিল ৫০ হাজার ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৪২ লাখ ৪০ হাজার ১৭৩ টাকা)।
এ সময় বলিভিয়া সরকার ও নিজের পক্ষ থেকে জীবন বাঁচানোর জন্য মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেস ম্যানুয়েল লোপেজ ওবরাডরের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এই বাম নেতা।
মোরালেস বলেন, ‘আমার দেহে যতক্ষণ প্রাণ আছে, আমি রাজনীতিতে সক্রিয় থাকব, লড়াই জারি থাকবে।’
ইদানীংকালে বামপন্থীদের দুর্গে রূপ নিয়েছে মেক্সিকো। দেশটির সরকার কূটনৈতিকভাবে লাতিন আমেরিকার অন্যান্য দেশের বামপন্থী নেতাদের পাশে দাঁড়িয়ে আসছে।
ক্ষমতাসীন জোটের কয়েকটি দল সরে দাঁড়ালে এবং সেনাবাহিনী প্রেসিডেন্টকে পদত্যাগের আহ্বান জানালে গত রোববার মোরালেস সরকারের পতন হয়। গত ২০ অক্টোবরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে, এমন দাবিতে বিক্ষোভ করছিলেন বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীরা। বিক্ষোভের একপর্যায়ে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন ১৪ বছর ধরে রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকা আদিবাসী ও বামপন্থী নেতা ইভো মোরালেস। ভাইস প্রেসিডেন্ট আলভারো গার্সিয়া লিনেরা ও সিনেট প্রেসিডেন্ট আদ্রিয়ানা সালভাতিয়েরা আগেই সরে দাঁড়ান। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
গত রোববার নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা অর্গানাইজেশন অব আমেরিকান স্টেটস জানায়, ২০ অক্টোবরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কারচুপির স্পষ্ট প্রমাণ মিলেছে। সংস্থাটি ওই নির্বাচনের ফল বাতিলের আহ্বান জানায়।
মোরালেস এতে সম্মতি জানিয়ে নির্বাচন কমিশনকে ঢেলে সাজিয়ে নতুন নির্বাচন দেওয়ার কথা বললেও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো, সেনাবাহিনী ও পুলিশপ্রধানরা তাঁকে পদত্যাগের আহ্বান জানান।
২০০৬ সাল থেকে রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্বে থাকা দেশটির প্রথম আদিবাসী নেতা মোরালেস গত অক্টোবরে চতুর্থবারের মতো প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হন। কোনো ব্যক্তি তিনবারের বেশি প্রেসিডেন্ট পদে আসীন হতে পারবেন না, এমন আইন ছিল বলিভিয়ায়। ২০১৬ সালে সাংবিধানিক আদালতের বিতর্কিত রায়ে ওই নির্দেশনা তুলে দেওয়া হয়। প্রার্থী হন মোরালেস। ভোট শেষে ফল গণনা শুরু হলে ২৪ ঘণ্টার জন্য তা স্থগিত করা হয়। পরে প্রতিপক্ষ দলীয় প্রার্থীর চেয়ে ১০ শতাংশের মতো বেশি ভোট পেয়ে জয়ী হন মোরালেস।
নির্বাচনের পরপর শুরু হওয়া বিক্ষোভে অন্তত তিনজনের প্রাণহানি ঘটে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পোশাকধারী বেশ কিছু লোকও সরকারবিরোধী এই বিক্ষোভে অংশ নেয়।
প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের পর শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের জন্য আন্দোলনকারীদের ধন্যবাদ জানান গত মাসের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সামান্য ভোটের ব্যবধানে দ্বিতীয় স্থানে থাকা বিরোধী নেতা কার্লোস মেসা।