বহু ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি আফগানরা
নতুন তালেবানি শাসনের অধীনে অধিকার খর্ব হওয়া থেকে শুরু করে কোভিড মহামারি, খরা, বিপর্যস্ত অর্থনৈতিক অবস্থাসহ নানামুখী চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে আফগানিস্তানের মানুষ। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত একটি ভার্চুয়াল সম্মেলনে বিশেষজ্ঞেরা এসব কথা বলেছেন। খবর এএনআই’র।
‘আফগানিস্তানের মানবিক সংকট : এগিয়ে যাওয়ার উপায়’ শিরোনামের অনুষ্ঠিত সম্মেলনের আয়োজক ছিল দ্য ডেমোক্রেসি ফোরাম (টিডিএফ)।
অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্যে টিডিএফ-এরর সভাপতি লর্ড ব্রুস উল্লেখ করেন, এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারকে প্রভাবিত করে—এমন বিস্তৃত সমস্যা রয়েছে, যা সমস্ত মনোযোগ পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু, তা সত্ত্বেও তিনি যে বিষয়টি অনুভব করেছেন তা হলো—আফগানিস্তানের দুর্দশার ওপর নজর দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশটির মুদ্রার হ্রাস এবং আমদানি করা খাদ্যের ওপর নির্ভরতা যে পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে, তাতে খাদ্য সংকট ভয়াবহ আকারে দেখা দিতে পারে বলে তিনি মনে করেন।
লর্ড ব্রুস আরও বলেন, বিশ্বব্যাংকের আফগানিস্তান পুনর্গঠন ট্রাস্ট তহবিলের মাধ্যমে আফগানিস্তানে বরাদ্দ করা বৈদেশিক রিজার্ভের একটি বড় অঙ্ক দেওয়া হয়েছে ইউনিসেফকে। যার মাধ্যমে সংস্থাটি আফগানিস্তানের এক কোটি ২৫ লাখ মানুষকে নভেল করোনাভাইরাসের টিকাসহ মৌলিক ও অপরিহার্য স্বাস্থ্য সেবা দিতে পারে।
এ ছাড়া বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচিও ২৭ লাখ মানুষকে খাদ্য সহায়তা দিতে পারবে। কিন্তু, আফগান সরকারের সহযোগিতা এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন ছাড়া, অন্যান্য সম্ভাব্য উদ্যোগের সঙ্গে, যেমন—ছোট ছোট ব্যবসার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া, মূল সরকারি খাতের কর্মীদের মজুরি পরিশোধ শুরু করা, পারিশ্রমিক পরিশোধে ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে ধীরে ধীরে ক্রমান্বয়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছাড় করা ছাড়া কোনো উদ্যোগ টেকসই হবে না বলে সতর্ক করেন লর্ড ব্রুস।
অন্যদিকে, আফগানিস্তানে চলমান সংকট থেকে বেরোনোর সুস্পষ্ট কোনো পথ খোলা নেই জানিয়ে সামিটে জর্জটাউন ইউনিভার্সিটির সিকিউরিটি স্টাডিজের অধ্যাপক ড. সি ক্রিস্টিন ফেয়ার বলেন, আফগানিস্তানে আজ যে সমস্যা, তা চলে আসছে বিংশ শতাব্দীর শুরু থেকে; যখন ব্রিটিশদের দেওয়া অর্থের বিনিময়ে আফগানিস্তান একটি ‘ভাড়াটে’ রাষ্ট্র হিসেবে জাতিগুলোর মধ্যে প্রবেশ করে। এরপর শূন্যস্থানটি পূরণ করে রাশিয়া, তারপর ইউএসএসআর, তারপর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যার বিশাল রাষ্ট্র-নির্মাণ যন্ত্র আফগানদের চাহিদার ওপর ভিত্তি করে ছিল না, বরং দেশটির অভ্যন্তরীণ স্বার্থ অন্য সহযোগী দেশগুলোর সৈন্যদের দ্বারা পরিচালিত হতো।
ড. ফেয়ার আফগানিস্তানে অর্থনৈতিক টেকসইয়ের দিকে মনোযোগ দিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অক্ষমতায় তাঁর হতাশা প্রকাশ করেন। তিনি দুর্নীতির বাস্তুতন্ত্রের কথা বলেছেন, যা আন্তর্জাতিক ব্যবস্থারই নির্মিত, কিন্তু আফগান অভিজাতদের দ্বারা ফুলে-ফেঁপে উঠেছিল।
আফগানিস্তান পলিসি ল্যাবের নির্বাহী পরিচালক এবং আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ ড. তিমুর শরণ আফগানিস্তানের অর্থনৈতিক ও মানবিক সংকট মোকাবিলায় ব্যান্ড-এইড বা প্রলেপ দেওয়ার মতো প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করে বলেন, এসব প্রচেষ্টা টেকসই নয়। ড. তিমুর দেশটির অর্থনীতিকে চালিত করা, জনগণকে শিক্ষা ও কাজের সুযোগ দেওয়ার এবং ব্যাংকিং ও তারল্য সংকট সমাধানের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। আফগানিস্তানে বর্তমানে যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে তাতে যুক্তরাষ্ট্রের আরও বড় ধরনের নেতৃত্ব দেখানো উচিত বলে মনে করেন ড. তিমুর।
বিশেষজ্ঞেরা বলেন, আফগানিস্তানের এগিয়ে যাওয়ার পথ খোঁজার চাবিকাঠি হলো তালেবানের অবশ্যই দেশকে শাসন করার এবং বড় ধরনের পরিবর্তন আনার সক্ষমতা দেখাতে হবে। যেমন—শিক্ষা ও কাজের ক্ষেত্রে নারীর অধিকার, সব স্তরে নারীর অন্তর্ভুক্তি, প্রতিনিধিত্বের ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য আনা ইত্যাদি। রাজস্ব সংগ্রহ এবং অর্থনীতির ক্ষেত্রে তালেবানকে অবশ্যই স্বচ্ছ হতে হবে। সরকারি কর্মচারীদের বেতন না দিলে রাজস্ব কোথায় যাচ্ছে তা খতিয়ে দেখা এবং স্থানীয় সংঘাত মোকাবিলায় সেখানকার অপরাধমূলক সমস্যার অবশ্যই সমাধান করা উচিত বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞেরা।