বিজয় দিবস উপলক্ষে মালির লোকজনকে বিনামূল্যে চিকিৎসা
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে পশ্চিম আফ্রিকার মালির লোকজনকে বিনামূল্যে চিকিৎসা দিয়েছেন বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা। গত ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে মালির গুন্দাম শহরে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়। গুন্দামে কর্মরত বাংলাদেশ পুলিশের বিএএনএফপিইউ টু কন্টিনজেন্ট ও স্থানীয় সংগঠন এসএলপিএফইএফের যৌথ উদ্যোগে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হয়। এতে সার্বিক সহযোগিতা দেয় ইউএন পুলিশ ও গুন্দাম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। চিকিৎসক ও রোগীদের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনে সাহায্য করেন দুজন ভাষা সহকারী।
এ নিয়ে গত ১৬ ডিসেম্বর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দেন শান্তিরক্ষী মিশনে দায়িত্বরত ও চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত ডা. মেহেদী হাসান। পরে তাঁর সঙ্গে ফেসবুক মেসেঞ্জারে যোগাযোগ করলে তিনি বিস্তারিত জানান।
ডা. মেহেদী হাসান বলেন, ‘মাটির টান বলে একটা কথা আছে। এইটার মর্ম বোঝা যায় মাটি ছেড়ে এলে। মাটিকে ভুলে থাকার চেষ্টা করলেও ভুলে থাকা যায় না। আর এই মাটির টানে পরেই হাজার মাইল দূরে বসেও আমরা দেশকে স্মরণ করি। মাতৃভূমির প্রতিটি দিবস আমরা পালন করি আমাদের মতো করে। এই দিনগুলোতে দেশের জন্য একটা মায়া আমাদের তাড়িয়ে বেড়ায়। এটা যারা প্রবাসী, শুধু তারাই হয়তো উপলব্ধি করতে পারে। এই মায়া, এই মাটির টানে পড়েই এবারের বিজয়ের মাসকে ঘিরে থাকে আমাদের বেশ কিছু আয়োজন। গতানুগতিক আনুষ্ঠানিকতাগুলোর বাইরেও এবার বিজয় দিবস সামনে রেখে উদ্যোগ নেওয়া হয় ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প করার।’
ডা. মেহেদী হাসান আরো বলেন, ‘আমাদের বিএএনএফপিইউ টু কন্টিনজেন্টের কমান্ডার বাংলাদেশ পুলিশের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ মাসুদ রানা স্যারের উদ্যোগ ও প্রচেষ্টায় এবং সবার সহযোগিতায় গত ১৪ ডিসেম্বর পশ্চিম আফ্রিকার মালির গুন্দাম শহরে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প করা হয়। ১৪ ডিসেম্বর ভোরে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে সব শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের পরই আমরা চলে যাই ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পে। এটি আয়োজন করা হয় স্থানীয় নারী ও শিশুবিষয়ক একটা সংগঠনের কার্যালয়ে। এর কাছাকাছিই রয়েছে আইডিপি ক্যাম্প (অভ্যন্তরীণ শরণার্থী)। ফলে রোগী হয় অনেক। সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত সেবা দেওয়া হয়। আমরা মোট ১২৩ জন রোগীকে চিকিৎসাসেবা প্রদান করি।’
‘সব বয়সের সব ধরনের রোগীই উপস্থিত হয়। আমরা দুজন চিকিৎসক আমি ডা. মেহেদী হাসান ও ডা. অমিত কুমার সরকার এবং ছয়জন নার্স যথাক্রমে মো. লুৎফর রহমান, মো. আরাফাত রহমান, মো. সালাহ উদ্দিন, মো. মোক্তার আলম, স্মৃতি খাতুন ও সুলতানা—আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি। কিন্তু চাপ এত বেশি ছিল যে আগত সবাইকে সেবা প্রদান করা সম্ভব হয়নি। শেষ দিকে আবারও ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে অপেক্ষারত অনেককে ফিরিয়ে দিতে হয়েছে।’
ডা. মেহেদী হাসান বলেন, ‘প্রাপ্তবয়স্ক রোগীর পাশাপাশি ক্যাম্পে উপস্থিত হয় অনেক শিশু। শিশুদের জন্য তো আমাদের আলাদা কোনো ব্যবস্থা বা ওষুধ ছিল না। কিন্তু এরপরও প্রতিটা শিশু হাসিমুখে ফিরে গেছে। কারণ আমরা প্রত্যেক শিশুকে ভিটামিন সি (সিভিট) খাইয়ে দিয়েছি। এতেই তারা অনেক খুশি! এই মেডিকেল ক্যাম্প করায় স্থানীয় জনগণ যেমন খুশি, তেমনি খুশি আমাদের কন্টিনজেন্টের প্রত্যেক সদস্য।’
ক্যাম্পের সার্বিক নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা রক্ষায় ছিলেন ৩০ জন পুলিশ সদস্য। তাদের নেতৃত্বে ছিলেন চারজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার যথাক্রমে শাহেদা সুলতানা, সুমন রঞ্জন সরকার, মো. তোফায়েল হোসেন সরকার ও ফাহিমা কাদের চৌধুরী। তাঁরাই ক্যাম্পের সার্বিক বিষয় তদারকি ও দেখভাল করেন।
চিকিৎসা ক্যাম্পে বক্তব্য দেন বিএএনএফপিইউ টু কন্টিনজেন্টের কমান্ডার বাংলাদেশ পুলিশের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ মাসুদ রানা। আরো উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি কমান্ডার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খন্দকার মো. শামীম হোসেন ও অপারেশনস অফিসার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নূরে আলম।
ডা. মেহেদী হাসান আরো বলেন, ‘ক্যাম্পে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা গ্রহণকৃত সবার মধ্যে বিনামূল্যে ওষুধও বিতরণ করা হয়। এই ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প খুবই ক্ষুদ্র একটা কাজ। তবু এটা বাংলাদেশ ও মালি এ দুই দেশের জনগণের মধ্যে সৌহার্দ্যের একটা প্রতীক হয়ে থাকবে। এই কাজে ন্যূনতম গর্ব করার জন্য যদি কেউ দাবিদার হয় তাহলে তারা বাংলাদেশের জনগণ। কারণ এই ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পের সব ব্যয় তারাই বহন করেছে, যারা খাজনা দেয়, আয়কর দেয়, ভ্যাট দেয়। তাই এর সব কৃতিত্ব বাংলাদেশের আপামর জনগণেরই।’