বিতর্কে তুমুল বাগ্যুদ্ধ, ‘ট্রাম্প ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে প্রেসিডেন্ট’, বললেন বাইডেন
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে দুই প্রার্থীর প্রথম বিতর্কে তুমুল বাগ্যুদ্ধ হয়েছে। বিতর্কে একে অন্যকে দেশের স্বাস্থ্য, অর্থনীতি ও ব্যক্তিগত বিষয়াদি তুলে ধরে ঘায়েল করার চেষ্টা করেন। শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ছিলেন ট্রাম্প।
মহামারি নভেল করোনাভাইরাস নিয়ে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন বলেন, ‘প্রেসিডেন্টের কোনো পরিকল্পনাই নেই। তিনি কিছুই করেননি।’ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
করোনায় আক্রান্তের বিবেচনায় অন্য দেশগুলোর তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রের নাজুক অবস্থান তুলে ধরেন বাইডেন। ট্রাম্প তা খারিজ করে দেন এবং এসব নিয়ে ভুয়া খবর ছড়ানো হচ্ছে বলে দাবি করেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, করোনার ভ্যাকসিন ও জীবনরক্ষাকারী ওষুধ প্রায় হাতের নাগালে চলে এসেছে।
ট্রাম্প বলেন, ‘এটা চীনের দোষ। এটা হওয়ার কথা ছিল না। আমরা অনেক কিছু করেছি।’
জবাবে বাইডেন ট্রাম্পকে তাঁর বাঙ্কার থেকে বেরিয়ে আসতে বলেন। বাইডেন বলেন, ‘আপনার চোরাবালি থেকে বেরিয়ে আসুন। আপনাকে গলফ মাঠের বাইরে আসতে হবে।’
এদিকে, আয়কর ইস্যুতেও বেশ বেকায়দায় রয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। নিউইয়র্ক টাইমস এক প্রতিবেদনে জানায়, ট্রাম্প ২০১৬ ও ২০১৭ সালে মাত্র ৭৫০ ডলার করে আয়কর দেন। এর আগে ১৫ বছরের মধ্যে ১০ বছরে আয়কর দেননি তিনি। এদিকে ২০১৯ সালে বাইডেন তিন লাখ ডলার আয়কর দিয়েছেন বলে জানা গেছে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে বাইডেনের নির্বাচনী প্রচারণা দলের পক্ষ থেকে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়।
বাইডেন বলেন, ট্রাম্প বেশির ভাগ স্কুলশিক্ষকের চেয়ে কম আয়কর দিয়েছেন। ব্যবসায় ক্ষতি দেখিয়ে ট্রাম্প আয়কর ফাঁকির চালাকি করেছেন বলে অভিযোগ তোলেন বাইডেন।
‘আপনি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বাজে প্রেসিডেন্ট’, ট্রাম্পের উদ্দেশে বলেন বাইডেন।
মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার আয়কর দিয়েছেন বলে দাবি করে ট্রাম্প নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনের তথ্যগুলো নাকচ করার চেষ্টা করেন।
বাইডেন অভিযোগ করেন, ট্রাম্প মূলত হোয়াইট হাউসে নিজের এবং সমর্থক ধনাঢ্য ব্যক্তিদের সুবিধা আদায় করেছেন।
বিতর্কের ঘণ্টাখানেক পার হওয়ার পর পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায়, বিতর্কের সঞ্চালক ফক্স টিভির সাংবাদিক ক্রিস ওয়ালেস দুজনকে বাদানুবাদ থামাতে বলেন। সঞ্চালক বলেন, বাদানুবাদ কম হলেই দেশ ভালো চলবে। যথারীতি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকেই বেশিবার থামাতে হয়েছে ওয়ালেসের।
বিশ্লেষক জেফ জেলেনি বলেন, বিতর্কজুড়ে ট্রাম্পের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। কিন্তু এর মানে এই নয় যে ট্রাম্প বিতর্কে জিততে যাচ্ছেন। সঞ্চালক ও প্রতিদ্বন্দ্বীর কথার মধ্যে সমানে কথা ঢুকিয়ে দিচ্ছেন ট্রাম্প। সে তুলনায় বাইডেন ধীরে এগোচ্ছেন। বিতর্কের শেষ পর্যায়ে দুজনের পারফরম্যান্স নিয়ে সিএনএন অনলাইনে এ মন্তব্য করেন জেলেনি।
ক্লিভল্যান্ডের কেইস ওয়েস্টার্ন রিজার্ভ ইউনিভার্সিটির হেলথ এডুকেশন ক্যাম্পাস ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকে দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে দ্বৈরথ অনুষ্ঠিত হয়। ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের ক্যাম্পাসে বিতর্ককে ঘিরে উৎসবের আমেজ তৈরি হয়। পুরো ইউনিভার্সিটিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। স্থানীয় পুলিশের পাশাপাশি ন্যাশনাল গার্ড আর্মি মোতায়েন করা হয়। বিভিন্ন সড়কে প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত করা হয়। চলমান বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনে ক্লিভল্যান্ডে ব্যাপক সহিংস ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কয়েক স্তরে নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
মূল ভেন্যু-সংলগ্ন এলাকায় অস্থায়ী স্টুডিও স্থাপন করে বিতর্ক কাভার করে যুক্তরাষ্ট্রের মূলধারার বিভিন্ন গণমাধ্যম।
বিতর্কে নিরপেক্ষ কমিশন থেকে ছয়টি প্রশ্ন করা হয়। প্রতিটি প্রশ্নের জন্য বরাদ্দ ছিল ১৫ মিনিট। বিষয়গুলো হলো সাফল্য ও ব্যর্থতার খতিয়ান, সুপ্রিম কোর্ট, মহামারি করোনাভাইরাস, অর্থনীতি, বর্ণবৈষম্য ও সহিংসতা ও নির্বাচনের বিশুদ্ধতা।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিতর্ক একটি অন্যতম অনুষঙ্গ এবং এটি নির্বাচনে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। মার্কিন রাজনীতিতে প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের দলীয় মনোনয়ন নিতে হলেও বিতর্ক প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতে হয়। সেখানে প্রার্থীদের প্রজ্ঞা, মেধা ও সহনশীলতাসহ অনেক কিছু সম্পর্কে ধারণা পায় ভোটাররা।
যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে প্রার্থীদের মধ্যে বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে তিনটি প্রেসিডেন্সিয়াল ডিবেট ও একটি ভাইস প্রেসিডেন্সিয়াল ডিবেট। ওহাইওর ক্লিভল্যান্ড ছাড়াও ১৫ অক্টোবর ফ্লোরিডার মায়ামি ও ২২ অক্টোবর টেনেসির ন্যাশভিলে ট্রাম্প-বাইডেনের মধ্যে এবং ৭ অক্টোবর ইউটার সল্টলেক সিটিতে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে রিপাবলিকান প্রার্থী মাইক পেন্স ও ডেমোক্রেটিক দলের প্রার্থী কমলা হ্যারিসের মধ্যে বিতর্ক অনুষ্ঠিত হবে।