বিদেশি সিনেমা-পোশাক ও চালচলনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা কিম জং উনের
উত্তর কোরিয়ায় এক আইনে বিদেশি সিনেমা, পোশাকপরিচ্ছদসহ কাউকে পাওয়া গেলে কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। সাম্প্রতিক এই আইনকে দেশটির সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উনের বিনা হাতিয়ারের যুদ্ধ হিসেবে বর্ণনা করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
শুধু নাটক-সিনেমা বা পোশাকই নয়, বিদেশি গালাগাল ব্যবহার করতে দেখলেও তার ওপর শাস্তির খড়গ নেমে আসছে। কারো কাছে দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র বা জাপানের তৈরি ভিডিওর সংগ্রহ বেশি পরিমাণে ধরা পড়লে তার মৃত্যুদণ্ডের বিধান থাকছে। আর, যারা এসব দেখেছে বলে প্রমাণ মিলবে, তাদের দেওয়া হবে ১৫ বছরের কারাদণ্ড।
নতুন আইনে বিদেশি নাটক-সিনেমা বা অন্যান্য ভিডিও দেখা, পোশাক-পরিচ্ছদ বা চালচলনকে ‘প্রতিক্রিয়াশীল চিন্তা’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
শুধু নাটক-সিনেমা পর্যন্ত ব্যাপারটি সীমাবদ্ধ থাকছে না। কয়েকদিন আগে রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে চিঠি লিখে কিম জং উন দেশটির যুব লীগের প্রতি অদ্ভূত আহ্বান জানিয়েছেন। বলেছেন, তরুণদের মধ্যে ‘অনৈতিক, ব্যক্তিকেন্দ্রিক ও সমাজতন্ত্রবিরোধী আচরণ’ দেখলে যেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
বিবিসির খবরে বলা হয়, বিদেশি কথাবার্তা, হেয়ারস্টাইল ও পোশাক-পরিচ্ছদ চিরতরে নির্মূল করতে চাইছেন উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন। এগুলোকে তিনি ‘মারাত্মক বিষ’ হিসেবে আখ্যায়িত করছেন।
উত্তর কোরিয়ায় টানা লকডাউন চলছে। নেই ইন্টারনেট বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। শুধু কয়েকটি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেল চালু রয়েছে। সেখানে দেশটির সর্বোচ্চ নেতা যা চান, সেগুলোই দেখানো হয়।
তরুণ প্রবাসী উত্তর কোরিয়ান ইয়ুন মি-সো বিবিসিকে জানান, ১১ বছর বয়সে প্রথম একজনকে মৃত্যুদণ্ড দিতে দেখেন তিনি। এবং ওই ঘটনা প্রতিবেশীদের সবাইকে দেখতে বাধ্য করা হয়। তিনি বলেন, ‘আমার পরিষ্কার মনে আছে—চোখ বাঁধা একটা লোক... সেটি ছিল ভয়াবহ এক অভিজ্ঞতা। কান্নায় চোখ বাঁধার কাপড় ভিজে চুপচুপ করছিল। সবার সামনে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়।’
সাংস্কৃতিক কট্টরপন্থা উত্তর কোরিয়ায় নতুন নয়। ২০০২ সালে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিযান চালিয়ে নাটক-সিনেমার ২০ হাজার সিডি জব্দ করা হয়।
২০০৯ সালে ১৬ বছর বয়সী কিশোর কিম গিয়্যুম-হিয়োক তার বন্ধুকে একটি ডিভিডি দেওয়ার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হয়। গিয়্যুম-হিয়োকের বাবা চীন থেকে ডিভিডিগুলো এনেছিলেন।