মিয়ানমারে চীনা সহায়তায় নির্মিত পাইপলাইনে জান্তাবিরোধীদের হামলা
মিয়ানমারের মান্দালয় অঞ্চলের নাটোগি উপশহর এলাকায় জান্তাবিরোধী স্থানীয় গোষ্ঠীর হামলায় চীনা-সহায়তায় তেল ও গ্যাস পাইপলাইনের একটি অফ-টেক (তেল অবমুক্ত করা) স্টেশন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মিয়ানমারের অনলাইন সংবাদমাধ্যম ইরাবতি এ খবর জানিয়েছে ।
সংবাদমাধ্যমের খবর—গত সোমবার রাত ২টার দিকে নাটোগি-পিপলস ডিফেন্স ফোর্সের (এনপিডিএফ) সদস্যেরা অফ-টেক স্টেশনের ১৩ নিরাপত্তাকর্মীর ওপর আক্রমণ করেন। তাঁরা দুটি রাইফেল গ্রেনেড ব্যবহার করে এ হামলা চালান। স্টেশনটি নাটোগি শহরের ছয় কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত বলে খবরে জানানো হয়েছে।
এনপিডিএফের মুখপাত্র এবং মাইংইয়ান জেলা-পিডিএফ ব্যাটালিয়ন-৪ এর কমান্ডার কো তোয়ান্তে বলেছেন, আক্রমণের সময় অফ-টেক স্টেশনের প্রাচীর বিস্ফোরকের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এনপিডিএফ দাবি করছে—হামলায় মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী হতাহত হয়েছে। গত মঙ্গলবার ইরাবতিকে কো তোয়ান্তে বলেছেন, ‘আমরা শুধু শাসক বাহিনীকে নিশানা করেছি, পাইপলাইন স্টেশন নয়।’
এনপিডিএফ বলেছে, অফ-টেক স্টেশনে শাসক বাহিনীর ওপর আক্রমণ করতে হয়েছিল, কারণ তারা এলাকায় তাদের অভিযানের সময় বেসামরিক লোকদের ওপর নিপীড়ন ও লুটপাটের জন্য কুখ্যাত হয়ে উঠেছিল।
রাখাইন উপকূল থেকে দক্ষিণ চীন পর্যন্ত তেল ও গ্যাস পাইপলাইনগুলো ২০১১ সালে নির্মিত হয়েছিল। এবং কার্যক্রম শুরু হয়েছিল ২০১৩ সালের জুলাই মাসে। ম্যাগওয়ে এবং মান্দালয় অঞ্চল ও শান রাজ্যের মধ্য দিয়ে ৯৭৩ কিলোমিটার দীর্ঘ পাইপলাইনগুলো চীনের ইউনান প্রদেশে গেছে।
পিডিএফের হামলার পর নাটোগি শহরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এমনকি আশপাশের এলাকাতেও তৎপরতা বাড়িয়েছে শাসকগোষ্ঠী।
নাটোগির এক বাসিন্দা মঙ্গলবার ইরাবতিকে জানিয়েছেন, ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) সঙ্গে জড়িত কয়েকজনসহ সোমবার ও মঙ্গলবার শহরে প্রায় এক ডজন লোককে শাসক বাহিনী গ্রেপ্তার করেছে।
এদিকে, রোববার সন্ধ্যায় নাটোগি-পিডিএফ সদস্যদের হামলায় উপশহর এলাকায় শাসক দলের দুজন নিহত হয়েছেন।
গত ফেব্রুয়ারিতে সামরিক অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমারে চীনবিরোধী মনোভাব বৃদ্ধি পায়। অনেকে মনে করেন—জান্তা সরকারের ক্ষমতা দখলের পেছনে বেইজিংয়ের হাত ছিল। সে সময়ে চীনের পাইপলাইনগুলো উড়িয়ে দেওয়ার আহ্বানসহ চীনা পণ্য বয়কটের আহ্বান জানানো হয়েছিল।
এসব ঘটনার পর পাইপলাইনের নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিল চীন। এর পরিপ্রেক্ষিতেই গত বছরের মার্চ থেকে সরকার তাদের সুরক্ষার জন্য অতিরিক্ত বাহিনী নিয়োগ করেছে।
গত বছরের মে মাসে মান্দালয় অঞ্চলের সিন্টগাইং শহর এলাকায় পাইপলাইনের পাহারায় থাকা শাসক দলের তিন সৈন্যকে হত্যা করে অজ্ঞাতপরিচয় হামলাকারীরা।
সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে বেসামরিক সশস্ত্র প্রতিরোধের তীব্রতার পরিপ্রেক্ষিতে আন্দোলন চলাকালে দেশে চীনা বিনিয়োগের কোনো ক্ষতি না করতে চীন মিয়ানমারের বেসামরিক জাতীয় ঐক্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
জানুয়ারির শুরুতে সাগাইংয়ের তিগয়াইং এলাকায় চীনা সহায়তায় নির্মিত তাগাং তাউং নিকেল-প্রসেসিং প্ল্যান্ট সরবরাহকারী বিদ্যুতের পাইলনে একটি স্থানীয় প্রতিরোধ গোষ্ঠী আক্রমণ করার পরে এ অনুরোধ জানায় চীন।
মিয়ানমারের জান্তারা সারা দেশে পিডিএফসহ অনেক জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীর আক্রমণের সম্মুখীন হচ্ছে। এতে বাহিনীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতিও হচ্ছে বলে জানা গেছে।