রাশিয়া ইস্যুতে ম্যাক্রোঁর বক্তব্যে হতবাক ইউরোপীয় মিত্ররা
ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) নিজের মতো করে রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাক—ইউরোপীয় আইনপ্রণেতাদের প্রতি এমন আহ্বান জানিয়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। ফরাসি প্রেসিডেন্টের এমন আহ্বান ইউক্রেনে রাশিয়ার দখল-অভিযানের হুমকি মোকাবিলায় পশ্চিমের অবস্থানে ভাঙন ধরাতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সংবাদমাধ্যম ভয়েস অব আমেরিকার খবরে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে ইউরোপকে আঞ্চলিক নিরাপত্তার বিষয়টি নিজেদের হাতে নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে ইইউ সহযোগীদের বোঝাতে অতীতে ম্যাক্রোঁকে হিমশিম খেতে হয়েছে।
অবশ্য, ইউরোপীয় আইনপ্রণেতাদের উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ম্যাক্রোঁ যে ইইউকে তার নিজস্ব নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা সম্পর্কে চুক্তির বিষয়ে রাশিয়ার সঙ্গে রফা করতে বলেছেন, একে রাশিয়ার রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যম স্বাগত জানিয়েছে।
তবে, মধ্য-ইউরোপীয় ও বাল্টিক অঞ্চলের একাধিক নেতা বলেছেন, ম্যাক্রোঁর এমন মন্তব্য সময়োপযোগী হয়নি। এবং এতে ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে যে—যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউকে পরস্পরের বিরুদ্ধে প্ররোপিত করে যুক্তরাষ্ট্র যে পশ্চিমা ঐক্যের কথা বলছে, তাতে ভাঙন ধরানোর চেষ্টা করবে রাশিয়া।
সুইডেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী কার্ল বিল্ট বলেছেন, তিনি বুঝতে পারছেন না ম্যাক্রো ‘নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার নতুন ব্যবস্থা’ বলতে ঠিক কী বোঝাতে চেয়েছেন।
কার্ল বিল্ট এক টু্ইটবার্তায় বলেন, ‘আগামী কয়েক মাস বরং বর্তমানে চলমান ১৯৮৯-পরবর্তী ব্যবস্থার প্রতি জোরালো সমর্থনের কথাই বলবে।’
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন এরই মধ্যে বলেছেন, রাশিয়া ‘খুব অল্প সময়ের নোটিশে হামলা চালাতে পারে।’
ইউক্রেনের গোয়েন্দা বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, রাশিয়া এরই মধ্যে ইউক্রেনের সীমান্ত বরাবর এক লাখ ২৭ হাজার সৈন্য মোতায়েন করেছে।
ইউরোপীয় পার্লামেন্টে দেওয়া ভাষণে ম্যাক্রোঁ বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের মধ্যে সমন্বয় রক্ষা করা ভালো, তবে রাশিয়ার সঙ্গে ইউরোপের নিজের সংলাপ থাকাটাও অত্যন্ত জরুরি।’
ম্যাক্রোঁ বলেন, ইউরোপীয়দের একটি নতুন পরিকাঠামো তৈরি করা উচিত, যা তারা ‘আমাদের সঙ্গে, ইউরোপীয়দের সঙ্গে এবং ন্যাটোতে আমাদের মিত্রদের জানাবে। এবং রাশিয়ার সঙ্গে সমঝোতা আলোচনার জন্য সে বিষয়ে প্রস্তাব দিতে পারে।’
এ ছাড়া ম্যাক্রোঁ জোর দিয়ে বলেন, সীমান্তগুলো অলঙ্ঘনীয় হওয়া উচিত। এবং ন্যাটোতে যোগ দিতে ইউক্রেন কিংবা অন্য যেকোনো দেশের বিরুদ্ধে রাশিয়াকে ভেটো দিতে দেওয়া ইইউ’র উচিত হবে না।
ইইউ’র কর্মকর্তারা বলছেন—যুক্তরাষ্ট্র থেকে আলাদাভাবে রাশিয়ার সঙ্গে ইউরোপীয়দের নিজেদের সংলাপ চালানোর ব্যাপারে ম্যাক্রোঁর আহ্বান তাঁদের হতবাক করেছে। পশ্চিমা কূটনীতিকেরা বলছেন—ফ্রান্সের এ নেতা তাঁর ভাষণের আগে অন্যান্য জাতীয় নেতাদের সঙ্গে কোনো শলাপরামর্শ করেননি। তবে, বৃহস্পতিবারই ইউরোপীয় কর্মকর্তারা ওয়াশিংটনকে তাঁদের অবস্থান পুনরায় নিশ্চিত করেছেন।