রাশিয়া ও ইউরোপের জ্বালানি যুদ্ধ এখনও চলমান : আইইএ
ইউক্রেনে হামলার আগে রাশিয়ার জ্বালানির ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল ছিল ইউরোপের দেশগুলো। ২০১৯ সালে নিজেদের চাহিদার ৫০ শতাংশেরও বেশি গ্যাস রাশিয়া থেকে আমদানি করেছিল। এমতাবস্থা ছিল ২০২২ সালের শুরু পর্যন্ত। তবে, ইউক্রেনে আগ্রাসনের পর থেকেই পরিস্থিতি পরিবর্তন হয়। একচেটিয়াভাবে ইউক্রেনকে সমর্থন করতে থাকে ইউরোপের দেশগুলো। দেয় নিষেধাজ্ঞাও। এতে করে ইউরোপে জ্বালানি রপ্তানি কমিয়ে দেয় মস্কো। শুরু হয় ‘জ্বালানি যুদ্ধ’। বিপাকে পড়ে ইউরোপের বাসিন্দারা।
ইউরোপের দেশগুলোর সঙ্গে রাশিয়ার জ্বালানি যুদ্ধ এখনও চলছে, এটি এখনও শেষ হয়নি। এমনকি, কবে শেষ হবে, তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। খোদ এ তথ্য দিয়েছেন ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সির (আইইএ) প্রধান ফাতিহ বিরল। আজ বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে দ্য গার্ডিয়ান।
ফাতিহ বিরল বলেন, ‘এই শীতে রাশিয়ান গ্যাস ছাড়াই উতরে গিয়েছে ইউরোপের দেশগুলো। এটি তাদের জন্য একটি বড় সফলতা। তবে, এখনও সামনের শীতকে ভীতি রয়েছে।’
গার্ডিয়ান বলছে, ইউক্রেনকে সহযোগিতার জেরে পশ্চিমা দেশগুলোর বিরুদ্ধে জ্বালানিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন। জ্বালানি সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। শীতে মানুষজন যেন কষ্ট পায় সে ব্যবস্থা করেছিল।
গত গ্রীষ্মে সরবরাহ কমিয়ে দেওয়ায় গ্যাস মজুতে তোড়জোড় শুরু করে ইউরোপের দেশগুলো। এতে করে পার পেয়ে যায় তারা। তারপরেও বিদ্যুৎহীন থাকতে হয়েছে ইউরোপের বাসিন্দাদের।
ব্রিটিশ সংবাদপত্র ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ফাতিহ বলেন, ‘রাশিয়া জ্বালানিকে কার্ড হিসেবে ব্যবহার করেছে, তবে এতে তারা জয়ী হতে পারেনি। কিন্তু ইউরোপ জ্বালানি যুদ্ধে বিজয়ী হয়েছে এটি বলা যাবে না। আমার ধারণা, ইউরোপ কৌশলগত দিক থেকে বিজয়ী হয়েছে। তবে, অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী হওয়া ঝুঁকিপূর্ণ। তাদের চলতি বছরের জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া উচিত।’
মার্কিন বিনিয়োগ ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান জেফরিস এই সপ্তাহে জানিয়েছে, ইউরোপীয় গ্যাস মজুতের ট্যাংকগুলো বর্তমানে ৬৪ শতাংশ পূর্ণ। গত পাঁচ বছরের শীতে মজুতের পরিমাণের থেকে গড়ে ৪৫ শতাংশ ওপরে রয়েছে।
প্রতিবেদনে গার্ডিয়ান জানিয়েছে, গত বছরের প্রায় অর্ধেক সময় পর্যন্ত পাইপলাইনে করে রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক ছিল। এ সময়ে মজুত করতে পেরেছে ইউরোপের দেশগুলো। তবে, পাইপলাইনে করে এখন আর গ্যাস আসছে না। এর মানে দাঁড়ায়, দেশগুলোকে এলএনজি আমদানি বাড়াতে হবে। তবে, চীনে মহামারির লকডাউন উঠে যাওয়ায় এলএনজি আমদানি বাড়িয়ে দেবে তারা। এতে করে এশিয়ার এলএনজি আমদানিতে বেগ পোহাতে হবে ইউরোপকে।
আইইএ প্রধান বলেন, ‘বর্তমানে পাইপলাইন দিয়ে ২০ শতাংশ রাশিয়ার গ্যাস ইউরোপে আসছে। এগুলো আসছে ইউক্রেন ও তুরস্ক দিয়ে।’