রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলার কার্যক্রম শুরু আজ
মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা গণহত্যার ঘটনায় নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) গাম্বিয়ার করা মামলার শুনানি শুরু হচ্ছে আজ।
গাম্বিয়া বলছে, আজ মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া তিন দিনের শুনানিতে জাতিসংঘের ১৭ সদস্যের বিচারক প্যানেলকে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে বলা হবে। এদিকে, গাম্বিয়াকে সহযোগিতার জন্য যৌথ বিবৃতি দিয়েছে নেদারল্যান্ডস ও কানাডা। জাতিসংঘ সদর দপ্তরে আইসিজের নবনিযুক্ত রেজিস্ট্রার ফিলিপ গটিয়ার জানিয়েছেন, এই আদালতের রায়ই চূড়ান্ত, অবশ্যপালনীয় এবং আপিলের সুযোগ নেই। বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গাম্বিয়ার মামলা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত কর্তৃক গণহত্যার অভিযোগ তদন্তের সিদ্ধান্ত মিয়ানমারের এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। অন্যদিকে, মিয়ানমারকে বিশ্বব্যাপী বয়কটের আহ্বান জানিয়ে গতকাল সোমবার নেদারল্যান্ডসের হেগে ক্যাম্পেইন শুরু করেছে ফ্রি রোহিঙ্গা মুসলিম কোয়ালিশন।
আজ মঙ্গলবার থেকে আইসিজেতে শুরু হওয়া শুনানির প্রথম পর্বে বাদী গাম্বিয়া তার যুক্তিপূর্ণ বক্তব্য তুলে ধরবে। আগামীকাল বুধবার আত্মপক্ষ সমর্থন করে বক্তব্য দেবে বিবাদী মিয়ানমার। এর পর ১২ ডিসেম্বর হবে যুক্তিতর্ক। প্রথমে গাম্বিয়া যুক্তি উপস্থাপন করবে, পরে মিয়ানমার তা খণ্ডনের সুযোগ পাবে। গাম্বিয়ার পক্ষে মামলা লড়বেন দেশটির অ্যাটর্নি জেনারেল এবং আইন ও বিচারমন্ত্রী আবুবকর তামবাদো। তিনি ১৯৯৪ সালে রুয়ান্ডায় গণহত্যার মামলায় এক দশকের বেশি সময় লড়াই করেছেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আবুবকর তামবাদো বলেন, তাঁর পরিকল্পনায় রয়েছে, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অবিলম্বে সহিংসতা বন্ধে বিচারকরা যেন মিয়ানমারের প্রতি নির্দেশ দেন। পাশাপাশি তিনি আদালতকে অনুরোধ করবেন প্রমাণ সংরক্ষণ করতে, যা গণহত্যার মামলায় পরে সহায়ক হবে। মিয়ানমারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মুখোমুখি হওয়ার সময় গাম্বিয়ার সাবেক স্বৈরাচারের অধীনে বসবাসের অভিজ্ঞতা তুলে ধরার কথা আবুবকর তামবাদোর। অন্যদিকে মিয়ানমারের পক্ষে আদালতে বক্তব্য ও যুক্তি খণ্ডন করবেন দেশটির স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি। মিয়ানমার টাইমস জানিয়েছে, সু চির সঙ্গে থাকবেন দেশটির আইনজীবীরাও।
গত ১১ নভেম্বর রাখাইনে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে পরিচালিত অভিযানে গণহত্যা চালানোর অভিযোগ এনে মিয়ানমারের নামে জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালতে মামলা করেছিল গাম্বিয়া। ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) পক্ষে গাম্বিয়া এ মামলা করে। নিধনযজ্ঞ পেরিয়ে যাওয়ার প্রায় আড়াই বছর পর প্রথমবারের মতো কোনো দেশ এমন পদক্ষেপ নেয়।
রাখাইনে সংঘটিত রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞে সু চির বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ এনে গাম্বিয়ার করা মামলায় দেশটির পক্ষে আইনি লড়াইয়ের জন্য একটি টিম গঠিত হয়েছে। সেই টিমের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর সু চি।
আন্তর্জাতিক বিচার আদালত, যা বিশ্ব আদালত হিসেবেও পরিচিত তাতে দায়ের করা মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে যে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের অভিযানের মধ্যে ছিল হত্যা, গুরুতর শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি সাধন, ভৌত বিনাশ বয়ে আনার মতো পরিস্থিতি তৈরি, জন্ম রোধের ব্যবস্থা চাপিয়ে দেওয়া ও জোরপূর্বক স্থানান্তর। এগুলো গণহত্যার বৈশিষ্ট। কারণ এসবের উদ্দেশ্য ছিল রোহিঙ্গা গোষ্ঠীকে পুরোপুরি বা আংশিকভাবে ধ্বংস করে দেওয়া।
রাখাইন রাজ্যের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে বিদ্রোহীদের হামলার জবাবে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট আগস্টে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে এক কঠোর বিদ্রোহ দমন অভিযান শুরু করে। এ সময় গণধর্ষণ, হত্যা ও ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়াসহ জাতিগত নির্মূল অভিযান থেকে বাঁচতে সাত লাখের অধিক রোহিঙ্গা পালিয়ে প্রতিবেশী বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। চলতি বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত জাতিসংঘের অনুসন্ধানী দলের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত রাখাইনে ছয় লাখ রোহিঙ্গা রয়েছে। অত্যন্ত শোচনীয় পরিস্থিতিতে যাদের বসবাস করতে হচ্ছে।