লেবাননে সংস্কার দেখতে চায় বিশ্ব দাতাগোষ্ঠী, সহায়তার আশ্বাস
লেবাননের রাজধানী বৈরুতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় আর্থিক সহায়তার অনুরোধ জানিয়েছিল দেশটির সরকার। বিশ্বের দাতা সংস্থাগুলোও এগিয়ে এসেছে সাহায্যের জন্য। তবে সাহায্য করার পাশাপাশি তারা চায়, লেবাননে সরকারের সরকারের সংস্কার হোক। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ আয়োজিত গতকাল রোববার বিশ্ব দাতাদের এক ভার্চুয়াল সম্মেলনে এ কথা বলে তারা। সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলে এ খবর জানিয়েছে।
এদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), চীন, মিশরসহ অন্যান্য দেশের প্রতিনিধিরা বলেছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা সরবরাহ করবে এবং লেবাননের জনগণকে হতাশ হবে দেবে না। সম্মেলনে মানবিক ত্রাণ হিসেবে ২৯৮ মিলিয়ন ডলার সহায়তা জোগাড় হয়েছে বলে জানিয়েছেন ম্যাক্রোঁ।
দাতারা জানিয়েছেন, এই সহায়তা সরাসরি লেবাননের জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে। এর আগে পর্যবেক্ষকরা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছিলেন, দুর্নীতির কারণে তহবিলগুলো অন্যদিকে প্রবাহিত করা হতে পারে।
ইন্টারন্যাশনাল মনিটরি ফান্ড (আইএমএফ) জানিয়েছে, লেবাননকে সহায়তার জন্য তারা নিজেদের প্রচেষ্টা দ্বিগুণ করতে প্রস্তুত। তবে এর আগে দেশটির সরকারকে সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিতে হবে।
আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিভা বলেছেন, এ সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিলে লেবাননের জনগণের জন্য বিলিয়ন বিলিয়ন সাহায্যের দ্বার খুলে যাবে।
জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেইকো মাস এর আগে লেবাননে রাজনৈতিক সংস্কারের আহ্বান জানিয়ে বলেছিলেন, এই বিপর্যয়ের আগেও দেশটি বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিল।
হেইকো আরো বলেছিলেন, জরুরি সংস্কার ছাড়া টেকসই সংস্কার হতে পারে না।
এদিকে সরকারের পদত্যাগের দাবিতে লেবাননে বিক্ষোভ বাড়ছে। এরই মধ্যে বৈরুতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষে অনেকেই আহত হয়েছেন। এ ছাড়া এক পুলিশ সদস্যের নিহতের খবরও পাওয়া গেছে।
অন্যদিকে, জনগণের ক্ষোভের মুখে লেবাননের চারজন সংসদ সদস্য পদত্যাগ করেছেন। কাতায়েব পার্টির তিনজন সংসদ সদস্য এবং একজন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য জানিয়েছেন, তাঁরা ১২৮ সদস্যের পার্লামেন্ট থেকে পদত্যাগ করছেন।
পদত্যাগের পর সংসদ সদস্য নাদিম গেমায়েল বলেন, ‘আমরা এবং আরো কয়েকজন সম্মানিত সংসদ সদস্য রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের মুখোশ খুলে দেব।’
এদিকে নারী সংসদ সদস্য পলা ইয়াকুবিয়ানও তাঁর পদত্যাগের কথা ঘোষণা করেছেন। তিনি লেবাননের অন্যান্য আইন প্রণেতাদের প্রতিও একই আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি টুইটারে বলেন, ‘ভেতর থেকে বিরোধিতা আর কাজে লাগবে না।’
এ ছাড়া, এ সপ্তাহের শুরুতে লেবাননের ডেমোক্রেটিক দলের সংসদ সদস্য মারওয়ান হামাদেহ বৈরুত বন্দর বিস্ফোরণের প্রতিবাদে পার্লামেন্ট থেকে পদত্যাগ করেন। তিনি বলেছিলেন, বৈরুতে বিস্ফোরণের পর এমন ‘অকার্যকর সরকারের’ অংশ হয়ে তিনি আর সম্মানিত বোধ করছেন না।
এ ছাড়াও বৈরুত বিস্ফোরণে সরকারের অবহেলাকে দায়ী করে পদত্যাগ করেন জর্ডানে নিযুক্ত লেবাননের রাষ্ট্রদূত ট্র্যাসি চামৌন। তিনি বলেছিলেন, ‘এ বিস্ফোরণ আমাদের দেখিয়ে দিল, লেবাননে নেতৃত্বের পরিবর্তন প্রয়োজন।’
মঙ্গলবার বৈরুত বন্দরে বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত অন্তত ১৬০ জনের মৃত্যু হয়েহে। আহত হয়েছেন প্রায় ছয় হাজার মানুষ। এছাড়া এখনো নিখোঁজ রয়েছেন অনেকে। এ বিস্ফোরণের পর এরই মধ্যে চরম অর্থনৈতিক সংকটে থাকা দেশটিতে সাধারণ মানুষের ক্ষোভও নতুন মাত্রা পেয়েছে।
বৈরুতের গভর্নর অফিসের তথ্য অনুযায়ী, ছয় বছরেরও বেশি সময় ধরে বৈরুত বন্দরে অরক্ষিতভাবে সংরক্ষণ করা কয়েক হাজার টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটে আগুন লেগে এ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। লেবাননের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বিস্ফোরণের ঘটনা এটি। এর ফলে দেশটির আর্থিক ক্ষতি হয়েছে আনুমানিক ১০ থেকে ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।