সপ্তাহের ব্যবধানে আবারও ‘গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা’ চালাল উত্তর কোরিয়া
এক সপ্তাহের ব্যবধানে উত্তর কোরিয়া একটি কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণ কেন্দ্রে গতকাল শুক্রবার আরেক দফা পরীক্ষা চালিয়েছে। দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম কেসিএনএ আজ শনিবার এ খবর জানিয়েছে। কৌশলগত পারমাণবিক সুরক্ষা জোরদার করার অংশ হিসেবে এ পরীক্ষা চালানো হয়েছে বলে দাবি করেছে কেসিএনএ।
উত্তর কোরিয়ার প্রতিরক্ষা বিজ্ঞান একাডেমির মুখপাত্রের বরাত দিয়ে কেসিএনএ জানিয়েছে, সোহায়ি উপগ্রহ উৎক্ষেপণ কেন্দ্রে পরীক্ষাটি চালানো হয়। তবে কী ধরনের পরীক্ষা চালানো হয়েছে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু জানায়নি গণমাধ্যমটি। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
এর আগে গত ৭ ডিসেম্বর একটি কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণ কেন্দ্রে ‘খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি পরীক্ষা’ চালানো হয়েছে বলে দাবি করে উত্তর কোরিয়া।
এই পরীক্ষার ফল উত্তর কোরিয়ার কৌশলগত অবস্থানের মান উন্নয়নে ব্যবহার করা হবে বলে জানিয়েছিল কেসিএনএ। তবে এর বেশি তথ্য জানায়নি সংস্থাটি।
বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন, কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণে শক্তি জোগাবে, এমন কোনো ভূমিভিত্তিক ইঞ্জিন কিংবা আন্তমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে উত্তর কোরিয়া। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানায়।
উত্তর কোরিয়া যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সংলাপের পথ বন্ধ করে দেওয়ার পরপরই এমন পরীক্ষা চালানোর খবর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে উঠে আসে।
এক বিবৃতিতে ৭ ডিসেম্বর জাতিসংঘে নিযুক্ত উত্তর কোরিয়ার দূত কিম সং বলেন, ‘এ মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দীর্ঘ কোনো আলাপ-আলোচনার প্রয়োজন আমাদের নেই। আর সমঝোতার টেবিল থেকে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ বিষয়টি এরই মধ্যে অনেক দূরে সরে গেছে।’
যুক্তরাষ্ট্রকে নতুন একটি পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি উপস্থাপন করতে চলতি বছর শেষ পর্যন্ত সময় দিয়েছে উত্তর কোরিয়া। এ ক্ষেত্রে উত্তর কোরিয়া শর্ত জুড়ে দিয়েছে, চুক্তিতে দেশটির ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা শিথিলের বিষয়টি থাকতেই হবে। অন্যথায় উত্তর কোরিয়া ‘নতুন পথ’ বেছে নেবে।
এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত সপ্তাহে বলেন, উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সমঝোতা চুক্তির বিষয়ে তিনি এখনো আশাবাদী।
উত্তর কোরিয়ার সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড বিষয়ে কেসিএনএর প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘সাম্প্রতিক এই পরীক্ষার ফল আরো একবার নিকট ভবিষ্যতে উত্তর কোরিয়ার কৌশলগত অবস্থানের পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।’
‘বাগযুদ্ধ’
যুক্তরাজ্যে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ন্যাটো সম্মেলনে চলতি মাসের শুরুতে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উনকে ‘রকেটম্যান’ বলে সম্বোধন করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
এ ছাড়া ট্রাম্প বলেন, উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে সামরিক শক্তি ব্যবহারের অধিকার রাখে যুক্তরাষ্ট্র। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
ট্রাম্পের এমন বক্তব্যের পর উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থায় দেওয়া এক বিবৃতিতে দেশটির উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী চো সন-হুই হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ট্রাম্পের বক্তব্যের কারণে দুই বছর আগের ‘বাকযুদ্ধ’ আবার শুরু হতে পারে।
উত্তর কোরিয়ার উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী চো সন-হুই বলেন, ‘এখনকার এমন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে যদি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কোনো ভাষা ও অভিব্যক্তির কারণে মারমুখী পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়, তাহলে অবশ্যই সেটা বয়সের কারণে বোধবুদ্ধি লোপ পাওয়া বৃদ্ধের আচরণ হিসেবেই গণ্য হবে।’
২০১৭ সালে প্রথমবার উত্তর কোরিয়া ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ‘ডোটার্ড’ বা বৃদ্ধ ও দুর্বল ব্যক্তি বলে অভিহিত করে।
পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ কার্যকর করতে ২০১৮ সালের জুনে সিঙ্গাপুরে মুখোমুখি বৈঠক করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কিম জং-উন। এরপর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে আরেক দফা বৈঠক করেন দুই নেতা।
কিন্তু দুটি বৈঠকই কার্যত নিষ্ফল হয়। এর পর উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়াকে বিভাজনকারী অসামরিক অঞ্চলে আকস্মিক সাক্ষাৎ করেন ট্রাম্প-কিম। ওই সাক্ষাৎ-পরবর্তী সময়ে একের পর এক স্বল্পপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালায় উত্তর কোরিয়া।
কয়েক মাস ধরে দুই দেশের মধ্যে নতুন করে বিদ্বেষপূর্ণ বাদানুবাদ শুরু হয়েছে।
এর আগে ২০১৭ সালে ট্রাম্প ও কিম একে অন্যের বিরুদ্ধে ‘ঢিল মারলে পাটকেল খেতে হয়’ এমন ঢঙে তর্কযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন। সে সময় কিমকে ‘খুদে রকেটম্যান’ ও ‘পাগলা’ বলেন ট্রাম্প। অন্যদিকে কিম মার্কিন প্রেসিডেন্টকে ‘মানসিকভাবে বিপর্যস্ত দুর্বল বৃদ্ধ’ বলে মন্তব্য করেন।