সাবেক শাসক দেশেই ভবিষ্যৎ খুঁজছে হংকংয়ের মানুষ
চীন হংকংয়ে জাতীয় নিরাপত্তা আইন চালু করার পর সেখানে আর নিরাপদ বোধ করছেন না অনেক হংকংবাসী। ভিটেমাটি ছেড়ে অনেকেই বিদেশে পাকাপাকিভাবে থাকার কথা ভাবতে শুরু করেছেন।
হংকংবাসীর প্রবল আপত্তি সত্ত্বেও সম্প্রতি সেখানে জাতীয় নিরাপত্তা আইন চালু করেছে চীন। গত ৩০ জুন ওই আইন চালুর সময়ে চীনা প্রশাসন দাবি করেছিল, নতুন আইন একান্তই দুষ্কৃতকারী ও অপরাধীদের কথা মাথায় রেখে চালু করা হয়েছে। কিন্তু হংকংবাসীর অভিযোগ, এ আইন চালু হওয়ার পর রাতারাতি শহরের ছবি বদলে গেছে। স্বাধীন, স্বায়ত্তশাসিত হংকং শহরের প্রাণটাই যেন খাঁচায় আটকে ফেলেছে এ আইন। সংবাদমাধ্যম বিবিসি ও আনন্দবাজার এ খবর জানিয়েছে।
হংকং শহরজুড়ে রাজনৈতিক প্রতিবাদ সভা ও মিছিল নিষিদ্ধ হয়েছে। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা রাজনৈতিক কোনো বিষয়ে অংশ নিতে পারছে না। এমনকি গ্রন্থাগারে রাজনীতিবিষয়ক যেকোনো বই নেড়েচেড়ে দেখার সুযোগও হারিয়েছে পাঠক। সব সময় মানুষের ওপর নজরদারি চালাচ্ছে রাষ্ট্র।
আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নতুন আইনে স্পষ্ট করে এ ধরনের নির্দেশিকা ছিল না। তবে এ সবই নিরাপত্তার জন্য করা হচ্ছে বলে দাবি পুলিশ ও প্রশাসনের।
নিজের শহরটাকে আর চিনতে পারছেন না হংকংবাসী সেরেনা ও মাইকেল। তাঁদের জন্ম হংকংয়েই। যুক্তরাজ্যে কখনো পা রাখেননি তাঁরা। কিন্তু নিজের শহর ছেড়ে এবার পাকাপাকিভাবে যুক্তরাজ্যে চলে যেতে চান মাইকেল ও সেরেনা। তাঁদের কাছে যুক্তরাজ্যের অনাবাসী পাসপোর্ট আছে। সম্প্রতি ব্রিটিশ সরকার জানিয়েছে, অনাবাসী পাসপোর্টধারী (বিএনও) হংকংবাসী ছয় বছর যুক্তরাজ্যে থাকার পর ইংল্যান্ডের নাগরিকত্ব পাবেন। এ ঘোষণার পর হংকং ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেরেনা-মাইকেলের মতো অনেকেই। সন্তানের ভবিষ্যতের কথা ভাবতে হচ্ছে অনেক দম্পতিকে।
জাতীয় নিরাপত্তা আইনের বিরোধিতায় গত বছর থেকেই উত্তাল হংকং। সেরেনা জানান, চীনের একটি সংস্থায় কাজ করার কারণে প্রত্যক্ষভাবে কখনো বিক্ষোভে যোগ দেননি তিনি। কিন্তু তাঁর এক বন্ধু, একটি চীনা ব্যাংকের কর্মী, বিক্ষোভে যোগ দিয়ে সম্প্রতি চাকরি হারিয়েছে। ক্ষুব্ধ সেরেনার দাবি, নিজের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হারিয়েছে হংকংয়ের মানুষ।
সেরেনা-মাইকেলের মতো অনেকেই হংকং ছাড়ার কথা ভাবছেন। চীনের নতুন নীতির বিরোধিতা করে কানাডা ও অস্ট্রেলিয়াও হংকংবাসীর জন্য ভিসা-সংক্রান্ত ছাড়ের কথা ঘোষণা করেছে। অভিবাসন-সংক্রান্ত নীতি নিয়ে সম্প্রতি বিশ্বজুড়ে সমালোচনার মুখে পড়েছে যে যুক্তরাষ্ট্র, তারাও জানিয়েছে, হংকংবাসীর থাকতে দেওয়ার বিষয়টি তারা ভেবে দেখবে।
প্রথম আফিম যুদ্ধের পরিণতিতে ১৮৪২ সালে হংকং চীনের হাতছাড়া হয়। এরপর হংকংয় হয় ব্রিটিশ উপনিবেশ। দ্বিতীয় আফিম যুদ্ধের পর হংকংয়ে ব্রিটিশ শাসন আরো পাকাপোক্ত হয়। অবশেষে ১৮৯৮ সালে হংকংকে ৯৯ বছরের জন্য লিজ নেয় যুক্তরাজ্য।
এরপর আশির দশকে এসে হংকংয়ের ভবিষ্যত নিয়ে আলোচনা শুরু করে যুক্তরাজ্য ও চীন। ১৯৮৪ সালে চীন-যুক্তরাজ্য যৌথ ঘোষণায় সিদ্ধান্ত হয় চীনের মূল ভূখন্ডের অধীনে যাবে হংকং। সে অনুযায়ী, ১৯৯৭ সালের ১ জুলাই হংকংয়ের শাসনভার বেইজিংয়ের হাতে তুলে দেয় ব্রিটিশরা।