সিরাজুদ্দিন হাক্কানির পশতুনপন্থি অবস্থান নিয়ে তালেবানে ফাটল!
আফগান সরকারকে হটিয়ে সহজে কাবুল দখল করতে পারলেও ক্ষমতা ধরে রাখা নিয়ে বেশ চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে তালেবান। কারণ, কট্টর ইসলামপন্থি সশস্ত্র তালেবান গোষ্ঠীটির মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব ফের দানা বাঁধছে। সংবাদ সংস্থা এএনআই’র বরাতে সংবাদমাধ্যম আফগানিস্তান সান এ খবর জানিয়েছে।
বিশেষ করে তালেবানের শীর্ষ নেতা মোল্লা বারাদারের অন্তরালে চলে যাওয়ার পর থেকে অন্তর্দ্বন্দ্বের আঁচ বেশি পাওয়া যাচ্ছে। তালেবানের মধ্যে এ দ্বন্দ্বের বিষয়টি আফগানিস্তানের উত্তরের প্রদেশগুলোতে মোল্লা বারাদারের নেতৃত্বাধীন কান্দাহারের প্রভাবকে ইঙ্গিত করছে।
সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, মোল্লা বারাদারের নেতৃত্বাধীন কান্দাহার গ্রুপটি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং হাক্কানি নেটওয়ার্কের (এইচকিউএন) নেতা সিরাজুদ্দিন হাক্কানির রক্ষণশীল দৃষ্টিভঙ্গি এবং প্রকাশ্য পশতুনপন্থি অবস্থান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
বারাদার ও হাক্কানি উপদলের মধ্যে মতপার্থক্য, বিশেষ করে অ-পশতুন জাতিগত গোষ্ঠীগুলোর দ্বারা অধ্যুষিত প্রদেশগুলোতে, তালেবানের পদমর্যাদার অবক্ষয় ঘটাতে পারে।
তালেবানের দ্রুত কাবুল দখলের পেছনে একটি কারণ ছিল তাদের অধীনে অ-পশতুন ক্যাডারদের অন্তর্ভক্ত করার সাফল্য। যার ফলে সংখ্যাগরিষ্ঠ পশতুন সম্প্রদায়ের বাইরেও তালেবান এখন তাদের র্যাঙ্কে সংখ্যালঘু জাতিগত গোষ্ঠীগুলোকে ‘ম্যানেজ’ করা নিয়ে নানা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।
টাইমস অব ইসরায়েলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশেষ করে উত্তরের প্রদেশে পরিস্থিতি তীব্রতর হচ্ছে। সেখানে অ-পশতুন জাতিগোষ্ঠীর আধিপত্য রয়েছে।
খবরে বলা হয়েছে, দায়েশের (আইএসআইএস) সঙ্গে ‘যোগাযোগ’ থাকার অভিযোগে গত বছরের ডিসেম্বরে পশতুন ক্যাডারদের নিরস্ত্র করার চেষ্টা করেছিল তাজিক ও উজবেক তালেবান যোদ্ধারা। এ নিয়ে বিক্ষিপ্ত কয়েকটি ঘটনা ঘটে।
গত ১৩ জানুয়ারি ফারিয়াবের মাইমানা শহরে জ্যেষ্ঠ উজবেক তালেবান কমান্ডার মাখদুম আলম রব্বানীকে গ্রেপ্তার করার পরে রাস্তায় বিক্ষোভ শুরু হয়। এ ঘটনা আফগানিস্তানের উত্তর প্রদেশে বিশেষ করে পশতুন এবং অ-পশতুন তালেবান কমান্ডার যোদ্ধাদের মধ্যে উত্তেজনা বাড়িয়ে দেয়। উজবেক কমান্ডার ফারিয়াব, জোজজান, সার-ই-পুল ও সামাঙ্গান প্রদেশে প্রভাব বিস্তার করে বলে জানা যায়। টাইমস অব ইসরায়েল বলেছে, তালেবান শাসনামলে পশতুনদের আধিপত্য নিয়ে বিক্ষোভকারীরা অভিযোগ প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে এসব বিক্ষোভ দ্রুত জাতিগত রূপ লাভ করে।
মাখদুম আলম অপহরণের সঙ্গে জড়িত থাকার ইঙ্গিত দিয়ে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তদন্ত করা হচ্ছে জানিয়ে তালেবান বলেছে, তিনি ৩০০টির বেশি অ্যাসল্ট রাইফেল, আরপিজিসহ অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুকিয়ে রেখেছিলেন।
খবরে আরও বলা হয়েছে, সিরাজুদ্দিন হাক্কানি ঘোষণা করেন—মখদুম আলমকে মুক্তি দেওয়া হবে না এবং ১৩ জানুয়ারি তাজিক তালেবান কমান্ডার কারি ওয়াকিলকে আটক করা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে। উজবেক ও তাজিক তালেবান যোদ্ধারা পশতুন যোদ্ধাদের নিরস্ত্র করার চেষ্টা করেন।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে তালেবান নেতৃত্বকে সাঁজোয়া যান, স্পেশাল ফোর্স (বদরি ইউনিট) ও ‘মনসুরি’ ব্রিগেডের আত্মঘাতী হামলাকারীসহ ৩০০ জনেরও বেশি লোক পাঠাতে হয়েছিল সেখানে। সে সময় তারা যেকোনোভাবেই হোক পরিস্থিতি সফলভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছে। কিন্তু, উত্তরের অ-পশতুন স্থানীয়দের মধ্যে বিশ্বাসঘাতকতার বোধ প্রকট।
ইসরায়েলি একটি প্রকাশনা বলছে—একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠায় সরকারের ব্যর্থতার পরিপ্রেক্ষিতে, আহমদ মাসুদের নেতৃত্বে কাবুলের কাছে একটি বিশ্বাসযোগ্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করার জন্য জন্ম নেওয়া জাতিগত ফাটলগুলো কাজে লাগানোর চেষ্টা করতে পারে।
উত্তর প্রদেশে উদ্ভূত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তালেবানের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কারণ, তারা এখনও আন্তপশতুন ক্ষমতার লড়াই চালিয়ে যেতে পারেনি।
টাইমস অব ইসরায়েলের মতে, এ ঘটনাগুলো তালেবানের শাসন ক্ষমতার ওপর খুব বেশি প্রভাব হয়তো ফেলবে না, তবে আফগানিস্তানের জন্য ভবিষ্যতে বিভক্তি ও অস্থিতিশীলতার উত্স হয়ে উঠতে পারে।
এদিকে, তালেবান প্রশাসন পশ্চিম থেকে তহবিল ও সহায়তা পাওয়ার চেষ্টায় ব্যস্ত। তালেবান ঐক্যবদ্ধ গোষ্ঠী হিসেবে শেষ পর্যন্ত টিকে থাকে কি-না, সেটাই দেখার বিষয়।