হংকংয়ের স্থানীয় নির্বাচনে গণতন্ত্রপন্থীদের অভূতপূর্ব সাফল্য
চীনের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হংকংয়ের ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সিল (স্থানীয় পরিষদ) নির্বাচনে অভূতপূর্ব সাফল্য পেয়েছে গণতন্ত্রপন্থী বা সরকারবিরোধী আন্দোলন সমর্থিত প্রার্থীরা। যদিও এখনো আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণা হয়নি; কিন্তু নির্বাচনের প্রাথমিক ফলাফলে গণতন্ত্রপন্থীদের লক্ষণীয় সাফল্যের খবর পাওয়া গেছে।
এবারের স্থানীয় পরিষদ নির্বাচনে ৪৫২ আসনের বিপরীতে লড়ছেন এক হাজার ১০৪ জন। এ ছাড়া আরো ২৭টি আসন গ্রামীণ এলাকার প্রতিনিধিদের জন্য বরাদ্দ রয়েছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, এখন পর্যন্ত ২৭৮ আসনে গণতন্ত্রপন্থী প্রার্থীরা জয়লাভ করেছে। অন্যদিকে চীনপন্থী প্রার্থীরা জয় পেয়েছে ৪২ আসনে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
হংকংয়ে চলমান গণতন্ত্রপন্থী বিক্ষোভের নেতিবাচক প্রভাব নির্বাচনে পড়ার আশঙ্কা করা হলেও বাস্তবে শান্তিপূর্ণভাবেই ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
হংকংয়ে কয়েক মাস ধরে চলমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতি, বিক্ষোভ ও সংঘর্ষের মুখে এই নির্বাচনকে সরকারের প্রতি জনগণের সমর্থন যাচাইয়ের পরীক্ষা হিসেবে দেখা হচ্ছিল।
হংকং সরকার ও বেইজিং প্রত্যাশা করেছিল, নির্বাচনে সরকার সমর্থিত প্রার্থীদের বিজয়ী করার মধ্য দিয়ে তথাকথিত ‘নীরব সংখ্যাগরিষ্ঠ’ জনগণ সরকারের প্রতি সমর্থন জানাবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল উল্টো ঘটনা। নির্বাচনে গণতন্ত্রপন্থী প্রার্থীদের কাছে আসন খুইয়েছেন বেশ কয়েকজন ডাকসাইটে বেইজিংপন্থী প্রার্থী।
নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর এমনই এক বিতর্কিত বেইজিংপন্থী আইনপ্রণেতা বলেন, যা ধারণা করা হয়েছিল, তার সঙ্গে বাস্তবতার ‘আসমান-জমিন ফারাক’।
এমনিতে জেলা কাউন্সিলরদের তেমন রাজনৈতিক ক্ষমতা নেই। বাস রুট বা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি স্থানীয় বিষয় দেখভাল করাই কাউন্সিলরদের মূল কাজ। তাই সাধারণত এই নির্বাচন নিয়ে আগে কখনোই এতটা মাতামাতি ছিল না।
কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি একেবারেই ভিন্ন। হংকংয়ের গণতন্ত্রপন্থী বিক্ষোভ ও সংকট মোকাবিলায় হংকংয়ের প্রশাসক ক্যারি ল্যামের পদক্ষেপের বিষয়ে প্রথমবারের মতো ব্যালট বাক্সের মাধ্যমে নিজেদের মতামত জানানোর সুযোগটা লুফে নিয়েছেন হংকংবাসী।
এবারের নির্বাচনে ভোট দেওয়ার জন্য নাম তালিকাভুক্ত করেছিলেন রেকর্ডসংখ্যক হংকংবাসী। ভোট দেওয়ার জন্য রেজিস্ট্রেশন করেন ৪১ লাখ মানুষ, যা হংকংয়ের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি।
শেষ পর্যন্ত ৪৫২ আসনে ভোট দিয়েছেন প্রায় ৩০ লাখ মানুষ। গত কাউন্সিল নির্বাচনে ভোট দিয়েছিলেন ৪৭ শতাংশ ভোটার, আর এবার ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন ৭১ শতাংশ ভোটার।
নির্বাচনকে ঘিরে চলতি সপ্তাহে প্রথমবারের মতো গত কয়েক মাসের মধ্যে বিক্ষোভকারী ও পুলিশের মধ্যে কোনো ধরনের সংঘর্ষ বা সংঘাত হয়নি।
এদিকে ভোটদানের পর হংকংয়ের প্রধান নির্বাহী ক্যারি ল্যাম বলেন, ‘চরম চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতির মুখে আমি সন্তুষ্টচিত্তে বলছি... আজ নির্বাচনের দিন পরিস্থিতি তুলনামূলকভাবে শান্ত ও শান্তিপূর্ণ রয়েছে।’
একটি বিতর্কিত প্রত্যর্পণ বিলকে কেন্দ্র করে বৃহত্তর স্বাধীনতার দাবিতে কয়েক মাস ধরেই হংকংয়ে চলছে সরকারবিরোধী রক্তক্ষয়ী বিক্ষোভ।