হিজাব আইন লঙ্ঘনকারী নারীদের শনাক্তে ক্যামেরা বসাচ্ছে ইরান
কুর্দি তরুণী মাহসা আমিনির মৃত্যুর পর থেকে হিজাব নিয়ে অনীহা ইরানি নারীদের। দেশটিতে হিজাব পড়া বাধ্যতামূলক হলেও, এখনও অনেক নারী পাবলিক প্লেসে হিজাব ছাড়াই চলাফেরা করছেন। এবার হিজাব না পড়া নারীদের শনাক্তে পাবলিক প্লেসে ক্যামেরা বসানোর ঘোষণা দিয়েছে ইরান। দেশটির পুলিশের বরাতে আজ শনিবার (৮ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে এনডিটিভি।
ভারতীয় গণমাধ্যমটি বলছে, বাধ্যতামূলক হিজাব পড়ার জন্য আরও একটি কঠোর পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে ইরান। হিজাব না পড়া নারীদের শনাক্তে পাবলিক প্লেসে ক্যামেরা বসানোর ঘোষণা দিয়েছে আজ ইরানি পুলিশ। এতে করে আইন অমান্যকারী নারীদের সহজেই শনাক্ত ও শাস্তির আওতায় আনতে পারবে তারা।
এক বিবৃতিতে ইরানি পুলিশ জানিয়েছে, শনাক্তকৃত নারীদের একটি সতর্কতামূলক ক্ষুদে বার্তা দেওয়া হবে। ওই বার্তায় আইন অমান্যকারীদের শাস্তির কথা উল্লেখ করা হবে।
হিজাব আইন পালনে এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে দেশটির গণমাধ্যমগুলো। বিবৃতির বরাতে ইরানের গণমাধ্যমগুলো বলছে, হিজাবের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ দেশের ভাবমূর্তিকে কলঙ্কিত করে ও নিরাপত্তাহীনতা বাড়িয়ে তুলে।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে হিজাব ইস্যুতে ইরানের নৈতিকতা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন ২২ বছরের কুর্দি তরুণী মাহসা আমিনি। পুলিশি হেফাজতেই মারা যান এই তরুণী। এরপরেই দেশটিতে বিক্ষোভ শুরু হয়, যা ছড়িয়ে পড়ে গোটা ইরান জুড়ে। এই বিক্ষোভ থেকে হাজার হাজার বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে চার বিক্ষোভকারীকে। এতোকিছুর পরেও এখনও নমনীয়তা দেখাচ্ছে না ইরানি প্রশাসন।
বাধ্যতামূলক হিজাব পড়া আইন এখনও রয়েছে ইরানে। তবে, সাম্প্রতিক সময়ে শপিং মল, রেস্টুরেন্ট, রাস্তাসহ বিভিন্ন পাবলিক প্লেসে হিজাব না পড়া নারীদের সংখ্যা চোখে পড়ার মতো। এর জেরেই ক্যামেরা বসানোর মতো পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি।
এদিকে, শনিবারের বিবৃতিতে ইরানি পুলিশ ব্যবসায়ীদের সতর্ক করেছে। দেশের সামাজিক রীতিনীতিসহ আইন মেনে চলার কথা স্মরণ রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
১৯৭৯ সালে ইরানে ঘটে এক রাজনৈতিক বিপ্লব, যা ইসলামি বিপ্লব নামে পরিচিতি পায়। এরপর থেকেই দেশটিতে হিজাব আইন করা হয়। ওই আইন অনুযায়ী, নারীদের মাথার চুল ঢেকে রাখতে এবং লম্বা ও ঢিলেঢালা পোশাক পরতে হয়। আইনটি লঙ্ঘনের দায়ে ইরানের অনেক নারীকেই তিরস্কার, জরিমানা ও গ্রেপ্তারের শিকার হতে হয়েছে।
হিজাবকে ইরানি জাতির সভ্যতার ভিত্তিগুলোর মধ্যে একটি ও ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের ব্যবহারিক নীতিগুলোর অন্যতম বর্ণনা করে গত ৩০ মার্চ দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি বিবৃতিতে দেয়। ওই বিবৃতিতে হিজাব ইস্যুতে পিছু না হটার কথা জানানো হয়।