হুমকিতে আফগান অর্থনীতি : ইউএনডিপি
বহু আগে থেকেই আফগানিস্তানের অর্থনৈতিক অবস্থা ভঙ্গুর পর্যায়ে রয়েছে। ২০২১ সালের আগস্টে তালেবান সরকার ক্ষমতায় যাওয়ার পর এই অবস্থা আরও নাজুক হয়েছে। তবে, অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে কিছু আশা দেখা গিয়েছিল। সেই আশায় ভেস্তে যাচ্ছে তালেবান সরকারের হুমকিতেই। জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচিv (ইউএনডিপি) বরাতে আজ মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি।
ইউএনডিপি বলছে, ‘আফগানিস্তানের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে যে স্বল্প আশা দেখা গিয়েছিল সেগুলো এখন ঝুঁকিতে রয়েছে। এর মূলে রয়েছে নারীদের এনজিও কাজে তালেবানের নিষেধাজ্ঞা।’
ইউএনডিপি আরও বলছে, ‘নারীদের কর্মক্ষেত্রে নিষিদ্ধ করায় আফগানিস্তানে জাতিসংঘের অনুদান আশঙ্কাজনক হারে কমে যাচ্ছে। দুই বছরের ব্যবধানে দারিদ্র্য সীমার নিচে থাকা পরিবারের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে গেছে।’
তবে, তালেবান সরকার এ নিয়ে ভিন্ন মত পোষণ করছে। তাদের দাবি, রাজনৈতিক কারণেই সহায়তার পরিমাণ কমছে। তারা বলছে, ‘মানবিক সহায়তার সিদ্ধান্তের সঙ্গে রাজনীতিকে যুক্ত করা উচিত নয়।’
মার্কিন নেত্বতৃাধীন বাহিনীর কাছে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার ২০ বছর পর ২০২১ সালে ফের আফগানিস্তানের ক্ষমতা নিচ্ছে তালেবান। তবে, তালেবানদের ক্ষমতায় যাওয়ার পরই দেশটির অর্থনীতিকে পতনের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়। আগের সরকারকে দেওয়া বৈদেশিক সাহায্য স্থগিত করে দেওয়া হয়।
প্রতিবেদনে বিবিসি বলছে, বর্তমানে আফগানিস্তানে তিন কোটি ৪০ লাখ মানুষ রয়েছে। এর মধ্যে ৯০ শতাংশই দারিদ্র্য সীমার নিচে রয়েছে। প্রতি তিন আফগানিদের মধ্যে দুজনই জানে না তারা পরবর্তী খাবার কখন খাবে।
ইউএনডিপি বলছে, তালেবান সরকারের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের কিছু আশা দেখিয়েছিল। দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় উন্নতি করেছিল তারা। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ও কর আদায়ে বেশ উন্নতি দেখিয়েছিল। এর জেরে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে বৈদেশিক অনুদান বাড়ছিল। তবে, সেই আশার পাতে পানি ফেলে দেয় তালেবান সরকার। নারীদের কাজ করায় নিষেধাজ্ঞা দেয় তারা। জাতিসংঘ বলছে, ‘নারীরা কাজ না করলে অর্থনীতি পুনরুজ্জীবিত করা যাবে না। ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নারী এবং তাদের শিক্ষায় কম বিনিয়োগের দ্বারা বাধাগ্রস্ত হবে।’
গত বছরের শেষের দিকে নারীদের এনজিওতে কাজ করা নিয়ে নিষেধাজ্ঞা দেয় তালেবান সরকার। একইসঙ্গে উদ্যান, বিনোদনকেন্দ্র, ব্যায়ামাগার, সরকারি গোসলখানায় নারীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নারীদের প্রকাশ্যে আসতে হলে বোরকা পরে আসা বাধ্যতামূলক করা হয়। উচ্চ মাধ্যমিক ও বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীদের লেখাপড়া নিষিদ্ধ করা হয়। তাদের জন্য খোলা রাখা হয় প্রাথমিকের গণ্ডি।
বিবিসি বলছে, তালেবান ক্ষমতায় আসার পরই আফগানিস্তানের জন্য বৈদেশিক অনুদান স্থগিত করে দেয় আন্তর্জাতিক সংগঠন ও দেশগুলো। দেশের নিরাপত্তা, মানবাধিকার পরিস্থিতি ও নারীদের শতভাগ শিক্ষার প্রতিশ্রুতির শর্তে জুড়ে দেয় তারা। শর্ত পূরণ হলেই অনুদান পাওয়া যাবে তা সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়।
আফগানিস্তানের মানুষদের ক্ষুধার হাত থেকে রক্ষার্থে জাতিসংঘ এবং অন্যান্য বেসরকারি সংস্থাগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তবে, গত ডিসেম্বরে নারীদের কাজ বন্ধ করার পরেই ১২৭টি দেশের সংগঠনটি আফগানিস্তানে নিজেদের কার্যক্রম কমিয়ে দিয়েছে জাতিসংঘ। ইতোমধ্যে ১৫০ এনজিও ও সহায়তা সংস্থা দেশটিতে তাদের সমস্ত কার্যক্রম স্থগিত করেছে।
বিষয়টি নিয়ে তালেবান সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের জ্যৈষ্ঠ কর্মকর্তা ইয়োগিতা লিমেয়া বলেন, ‘নারীদের ওপর যেসব নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে তা আমাদের অভ্যন্তরীণ ইস্যু। দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ঠিক করতে আমরা কাজ করছি।’
অর্থ মন্ত্রণালয়ের রাজস্ব বিভাগের পরিচালক মাইরাজ মোহাম্মদ মাইরাজ বলেন, ‘সমস্ত মানবিক সহায়তা এবং অনুদান একদম তলানিতে এসে ঠেকেছে। রাজনৈতিক বিষয়গুলোরর সঙ্গে এটি সম্পর্কিত করা উচিত নয়। ইসলামের দৃষ্টিতে পুরুষ হিসেবে আমাদের কর্তব্য হলো, ঘরে বসে থাকা নারীদের যত্ন নেওয়া।’