দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অভিবাসী সংকটের মূলে
দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে অভিবাসী সংকট এখন অন্যতম প্রধান সমস্যা। পুরো অঞ্চলে এই সমস্যা ছড়িয়ে পড়েছে। অভিবাসনপ্রত্যাশী মানুষকে পুঁজি করে বেড়েছে মানবপাচার ও জিম্মি-বাণিজ্য। থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় পাওয়া যাচ্ছে একের পর এক গণকবর, যেখানে নির্যাতনের পর মানুষ হত্যার প্রমাণ মিলেছে। অভিবাসনপ্রত্যাশী মানুষকে জিম্মি করে হত্যার ঘটনা বিশ্ব মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচার হয়েছে। সরব হয়েছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। কেন ঘটছে এসব ঘটনা, আর পুরো এলাকার এ সংকট মোকাবিলায় কেন সরকারগুলো হিমশিম খাচ্ছে। অভিবাসী সমস্যার মূল কোথায়?
সংকট যেভাবে জনসমক্ষে এলো?
চলতি মাসের শুরুর দিকে থাইল্যান্ডের গভীর জঙ্গলে একের পর এক গণকবরের সন্ধান পাওয়া যায়। এসব গণকবরে কয়েকশ অভিবাসীর লাশ মেলে। এ ঘটনার পর আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে গভীর জঙ্গলে অভিযান চালায় থাই সরকার। গভীর জঙ্গলে অভিবাসীদের জিম্মি করে রাখা অনেক ক্যাম্পের সন্ধান পাওয়া যায়। এ ঘটনার পর থাই উপকূলে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের বহনকারী নৌকা ভেড়া বন্ধ হয়। জিম্মি-বাণিজ্য বন্ধ হলেও শুরু হয় নতুন সংকট। খাবার ও পানিস্বল্পতায় থাকা অভিবাসীবাহী নৌকা সাগরে ফেলে রেখেই পালিয়ে যায় পাচারকারীরা। প্রথম দিকে দেশগুলো অভিবাসীদের প্রতি কঠোর নীতি অবলম্বন করায় তাদের কূলে ভিড়তে না দিয়ে সাগরে ঠেলে দেওয়া হয়। পরে আন্তর্জাতিক চাপে তাদের সাময়িকভাবে আশ্রয় দেয় মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া।
থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় অভিবাসীদের গণকবর
থাইল্যান্ডের গভীর জঙ্গলে অন্তত ৬০টি গণকবর পাওয়া যায়। থাইল্যান্ডের রোহিঙ্গা সংগঠনের সাবেক প্রেসিডেন্ট আবুল কালাম বলেন, প্রতিটি গণকবরে ৩০০ বা এর বেশি লাশ থাকার কথা। ২৫ মে মালয়েশিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় থাই সীমান্তের পারলিস রাজ্যের গভীর জঙ্গলে ১৩৯টি কবরের সন্ধান পাওয়ার কথা জানায় কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া মিলেছে ২৮টি বন্দিশিবির বা নির্যাতন ক্যাম্পেরও সন্ধান। এর আগের সপ্তাহে সেখানে ৩০টির বেশি গণকবরের সন্ধান পাওয়া যায়। গণকবরে পাওয়া লাশগুলো রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি বলেই ধারণা করা হচ্ছে। লাশের পরিচয় জানতে চলছে ফরেনসিক রিপোর্ট তৈরির প্রক্রিয়া।
মালয়েশিয়ার পারলিস রাজ্যের পেদাং বেসারে পাওয়া গণকবরের নেপথ্যে জড়িতরা পার পাবে না বলে হুঁশিয়ার করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রীর নাজিব রাজাক। নিজের টুইটার অ্যাকাউন্টে নাজিব রাজাক বলেন, মালয়েশিয়ার মাটিতে গণকবর পাওয়ায় তিনি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এর সঙ্গে মানবপাচারকারীরা জড়িত।
উদ্ধার হওয়া অভিবাসী
জাতিসংঘের সর্বশেষ তথ্যমতে, তিন হাজার ৭০০-এর বেশি অভিবাসীকে উদ্ধার করা হয়েছে। এদের মধ্যে ১৭০টির বেশি শিশু। এ ছাড়া উদ্ধারকৃতদের মধ্যে আছেন অনেক নারী। মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড ও মিয়ানমার উপকূল থেকে এসব অভিবাসনপ্রত্যাশীদের উদ্ধার করা হয়। সর্বশেষ মিয়ানমারের রাখাইন উপকূল থেকে উদ্ধার করা হয় ২০০-এর বেশি মানুষ, যাদের বেশির ভাগই বাংলাদেশি।
কারা অভিবাসী
উদ্ধারকৃত অভিবাসীরা মূলত মিয়ানমারের নির্যাতিত রোহিঙ্গা মুসলমান ও বাংলাদেশের দরিদ্র মানুষ। আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো বলছে, অভিবাসনপ্রত্যাশীদের অধিকাংশই মিয়ানমারের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমান। এর সঙ্গে বাংলাদেশিরাও আছে।
কেন দেশ ছেড়ে গভীর সমুদ্রে
প্রথমত, দীর্ঘদিন ধরে নির্যাতন আর নিষ্পেষণের শিকার হয়ে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজন দেশ ছাড়ছে। সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয় না। সব ধরনের নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত রোহিঙ্গা সম্প্রদায় মানবেতর জীবন-যাপন করে।
দ্বিতীয়ত, মিয়ানমারের বৌদ্ধ সরকারের বৈষম্য আর সরকারি বাহিনীর পাশাপাশি স্থানীয় লোকদের নির্যাতনের শিকার হয়ে রোহিঙ্গারা দেশ ছেড়ে যেতে বাধ্য হচ্ছে। উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গা মুসলমানদের কাছ থেকে এসব তথ্য জানা যায়। মালয়েশিয়ায় গত সপ্তাহে উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গারা জানান, রাখাইন রাজ্যে তাদের ওপর ভয়াবহ নির্যাতন চালানো হতো। অনেকের সামনেই পরিবারের সদস্যদের নির্যাতন করে মেরে ফেলা হতো। তাদের কিছুই করার ছিল না। জাতিসংঘের মতে, রোহিঙ্গারা পৃথিবীর সবচেয়ে নির্যাতিত সম্প্রদায়।
রাষ্ট্রের মদদে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন চালানো হয়। তাদের চলাফেরায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। তাদের নেই শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের সুযোগ। দুইয়ের বেশি সন্তান নেওয়ার অধিকার নেই তাদের। নেই কাজ ও চাকরির সুযোগ। রোহিঙ্গাদের ‘বাঙালি’ বলে দাবি করে মিয়ানমার সরকার। তাদের দাবি রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ থেকে এসেছে। রোহিঙ্গাদের দেশ ছেড়ে দেওয়ার চাপ দেওয়া হয়।
সমুদ্র পাড়ি দিয়ে ইন্দোনেশিয়া বা মালয়েশিয়ায় যেতে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশের দরিদ্র জনগণ। উন্নত জীবন ও দারিদ্র্য ঘোচাতে তারা এমন ঝুঁকি নিচ্ছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, অভাবের কারণে ও দেশে কাজ না পেয়ে দরিদ্র মানুষ দালালের খপ্পরে পড়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিদেশে পাড়ি দিচ্ছে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্বেগ
চলমান অভিবাসী সংকট নিয়ে নিয়মিতই গভীর উদ্বেগ জানিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। গত বুধবার নিয়মিত ব্রিফিংয়ে স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র মেরি হার্ফ এ নিয়ে উদ্বেগ জানান। পরদিন বৃহস্পতিবার মিয়ানমার সফরে আসেন মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যানথনি ব্লিনকেন। তিনি প্রেসিডেন্ট থেইন সেইনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সংকট সমাধানের তাগিদ দেন। রোহিঙ্গাদের মূল সমস্যা চিহ্নিত করে তাদের মৌলিক অধিকার ফিরিয়ে দিতে তিনি প্রেসিডেন্টের প্রতি আহ্বান জানান।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের আইন প্রণেতারাও এক বিবৃতিতে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন বন্ধ করে সংকট সমাধানে এগিয়ে আসতে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। পাশাপাশি মানবপাচারকারীদের প্রতি দ্রুত ব্যবস্থা নিতে থাইল্যান্ডের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
জাতিসংঘ শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর, আন্তর্জাতিক অভিবাসী সংস্থা আইওএমসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন রোহিঙ্গাসহ অভিবাসীদের দুরবস্থা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে। বাংলাদেশ সরকারকেও দেশের জনগণকে ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানানো হয়েছে।
মানবপাচারের মূল কেন্দ্র থাইল্যান্ড
বিবিসির এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উঠে এসেছে ভয়াবহ চিত্র। জানা যায়, থাইল্যান্ডের পুরো এলাকার স্থানীয়রা পাচারকারীদের সহায়তা করছে। দিন দিন মানবপাচার আরো লাভজনক হয়ে উঠেছে। মানবপাচার ও জিম্মি-বাণিজ্যের কেন্দ্রস্থল হিসেবে থাইল্যান্ডের গভীর জঙ্গল ব্যবহৃত হয়। জঙ্গলে আটক রেখে জনপ্রতি দু-তিন হাজার ডলার আদায় করা হতো। টাকা না পেয়ে অনেক মানুষকে হত্যা করে পাচারকারীরা। থাইল্যান্ডের স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা এসব দেখেও না দেখার ভান করে। দীর্ঘদিন ধরেই এ অবস্থা চলে আসছে।
সংকটের মূল কারণ
দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অভিবাসী সংকটের মূল কারণ মূলত মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের সংখ্যালঘু আট লাখ রোহিঙ্গা মুসলমানকে নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত রাখা। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, মানবাধিকার সংগঠন ও জাতিসংঘ এমনকি বিভিন্ন দেশের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে বারবার উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে। নাগরিকত্ববিহীন জীবন ও নানা নির্যাতনের কারণে রোহিঙ্গারা দেশ ছাড়ছে।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা রোহিঙ্গার সংখ্যা ১৪ লাখ ২৪ হাজার। যার আট লাখ মিয়ানমারে, চার লাখ সৌদি আরবে, তিন থেকে পাঁচ লাখ বাংলাদেশে, দুই লাখ পাকিস্তানে, এক লাখ থাইল্যান্ডে এবং মালয়েশিয়ায় রয়েছে ২৪ হাজার রোহিঙ্গা।
রোহিঙ্গা কারা
রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যের উল্লেখযোগ্য নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী। এরা ইসলাম ধর্মাবলম্বী। রোহিঙ্গাদের আলাদা ভাষা থাকলেও তা অলিখিত। মিয়ানমারের রেথেডাং, বুথিডাং মংডু, কিয়ক্টাও, মামব্রা ও পাত্তরকিল্লা এলাকায় এদের বাস।
বর্তমান মিয়ানমারের রোহিং (আরাকানের পুরোনো নাম) এলাকায় এ জনগোষ্ঠীর বসবাস। ইতিহাস ও ভূগোল বলছে, রাখাইন প্রদেশের উত্তর অংশে বাঙালি, পার্সিয়ান, তুর্কি, মোগল, আরবীয় ও পাঠানরা বঙ্গোপসাগরের উপকূল বরাবর বসতি স্থাপন করেছে। তাদের কথ্য ভাষায় চট্টগ্রামের স্থানীয় উচ্চারণের প্রভাব রয়েছে। উর্দু, হিন্দি, আরবি শব্দও রয়েছে। রাখাইনে দুটি সম্প্রদায়ের বসবাস ‘মগ’ ও ‘রোহিঙ্গা’। মগরা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী।
যুগে যুগে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন
১৪৩০ থেকে ১৭৮৪ সাল পর্যন্ত ২২ হাজার বর্গমাইল আয়তনের রোহিঙ্গা স্বাধীন রাজ্য ছিল। মিয়ানমারের রাজা বোদাওফায়া এ রাজ্য দখল করার পর বৌদ্ধ আধিপত্য শুরু হয়। একসময়ে ব্রিটিশদের দখলে আসে এ ভূখণ্ড। তখন বড় ধরনের ভুল করে তারা এবং এটা ইচ্ছাকৃত কি না, সে প্রশ্ন জ্বলন্ত। ব্রিটিশরা মিয়ানমারের ১৩৯টি জাতিগোষ্ঠীর তালিকা তৈরি করে। কিন্তু তার মধ্যে রোহিঙ্গাদের নাম অন্তর্ভুক্ত ছিল না।
১৯৪২ সালের ২৮ মার্চ, মিয়ানমারের মিনবিয়া ও ম্রক-ইউ শহরে রাখাইন জাতীয়তাবাদী ও কারেনপন্থীরা প্রায় পাঁচ হাজার মুসলমানকে হত্যা করে। রাখাইন রাজ্যের উত্তরাঞ্চলে প্রায় ২০ হাজার মুসলমানকে হত্যা করা হয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানিরা হাজার হাজার রোহিঙ্গাকে নির্যাতন, ধর্ষণ ও হত্যা করেছিল। এই সময়ে প্রায় ২২ হাজার রোহিঙ্গা সংঘর্ষ এড়াতে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলায় চলে গিয়েছিল। জাপানি ও বার্মিজ দ্বারা বারবার গণহত্যার শিকার হয়ে প্রায় ৪০ হাজার রোহিঙ্গা স্থায়ীভাবে চট্টগ্রামে চলে আসে।
১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি মিয়ানমার স্বাধীনতা অর্জন করে এবং বহুদলীয় গণতন্ত্রের পথে যাত্রা শুরু হয়। সে সময়ে পার্লামেন্টে রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধিত্ব ছিল। এ জনগোষ্ঠীর কয়েকজন পদস্থ সরকারি দায়িত্বও পালন করেন। কিন্তু ১৯৬২ সালে জেনারেল নে উইন সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করলে মিয়ানমারের যাত্রাপথ ভিন্ন খাতে প্রবাহিত হতে শুরু করে। রোহিঙ্গাদের জন্য শুরু হয় দুর্ভোগের নতুন অধ্যায়। সামরিক জান্তা তাদের বিদেশি হিসেবে চিহ্নিত করে। তাদের নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়।
১৯৭৮ সালে ‘কিং ড্রাগন অপারেশন’ পরিচালিত হয়। এর ফলে অনেক মুসলমান প্রতিবেশী বাংলাদেশে পালিয়ে আসে এবং শরণার্থী হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দাবি অনুসারে, ১৯৭৮ সাল থেকে মিয়ানমারের মুসলিম রোহিঙ্গারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হচ্ছে এবং তারা প্রতিবেশী বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হচ্ছে।
১৯৯১-৯২ সালে একটি নতুন দাঙ্গায় প্রায় আড়াই লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে চলে আসে।
সবশেষ রাখাইনে ২০১২ সালের দাঙ্গা হচ্ছে রাজ্যের রোহিঙ্গা মুসলিম ও বৌদ্ধ রাখাইনদের মধ্যে চলমান সংঘর্ষের ঘটনাপ্রবাহ। দাঙ্গা শুরু হয় জাতিগত কোন্দলকে কেন্দ্র করে এবং উভয় পক্ষই এতে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় বহু রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করে। অনেকে অন্য দেশে চলে যায়।
কেন নীরব অং সান সু চি
অভিবাসী সংকট নিয়ে যখন গোটা বিশ্ব মাথা ঘামাচ্ছে, তখন মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি রয়েছেন নীরবে। রোহিঙ্গাদের নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো কথাই বলেননি তিনি, যাঁকে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার এমনকি উপজাতি গোষ্ঠীদের নিয়ে কথা বলার জন্য ১৯৯১ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করেছিল নরওয়ের নোবেল কমিটি। সু চির নীরবতা নিয়ে আল-জাজিরার এক বিশ্লেষণে জানা যায়, আসন্ন ২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দাঁড়াতে যাচ্ছেন সু চি। যেখানে মিয়ানমারের সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর ভোটব্যাংকের দিকে তাকিয়ে নীরব রয়েছেন তিনি।
সংকটের সমাধান যেভাবে সম্ভব
মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদের মেয়ে মেরিনা মাহাথিরের মতে, এসব সংকটের মূল মিয়ানমার। তাই বিশ্ববাসীর উচিত মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ করা। রোহিঙ্গারা নাগরিকত্ব পেলে অবশ্যই তারা সেখানে ফিরে যাবে। তা ছাড়া দেশও ছাড়বে না। অভিবাসী সংকট নিয়ে চলমান পরিস্থিতিতে গত ১৯ মে কুয়ালালামপুরে ত্রিদেশীয় বৈঠকে মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া সাত হাজার অভিবাসীকে আশ্রয় দেওয়ার কথা জানায়। এতে সাময়িকভাবে সংকট কিছুটা হ্রাস পেলেও স্থায়ী সমাধান এখনো হয়নি। আগামী ২৯ মে থাইল্যান্ডে আঞ্চলিক অভিবাসী সংকট নিয়ে একটি বড় ধরনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এতে যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসংঘ, ইইউ, বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনসহ আঞ্চলিক দেশগুলো অংশ নেবে। প্রথম দিকে এতে অংশ নিতে মিয়ানমার রাজি না হলেও পরে চাপের মুখে ব্যাংকক বৈঠকে অংশ নেওয়ার কথা নিশ্চিত করেছে নাইপিদো। আর এ বৈঠকে অভিবাসী সংকট সমাধানে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে বলেই আশা করছেন সবাই।