মালয়েশিয়ার গণকবর থেকে লাশ উত্তোলন চলছে
মালয়েশিয়ার থাইল্যান্ড সীমান্তবর্তী দুর্গম পার্বত্য এলাকায় জঙ্গলে সম্প্রতি সন্ধান পাওয়া ১৩৯টি কবর থেকে লাশ উত্তোলন চলছে। মঙ্গলবার বিকেলে দিকে শাবল, কোদাল ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে দেশটির পুলিশ ও ফরেনসিক বিভাগ লাশ উত্তোলন শুরু করে।
মালয়েশিয়ার সরকার জানিয়েছে, পার্বত্য জঙ্গলে মানবপাচারকারীদের সংঘবদ্ধ দলের সঙ্গে স্থানীয় বন বিভাগের কর্মীদের কোনো সংশ্লিষ্টতা আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ধারণা করা হয়, স্থানীয় প্রশাসনের জ্ঞাতসারেই মানবপাচারকারীরা সেখানে কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছিল।
উদ্ধার পাওয়া অভিবাসনপ্রত্যাশীদের সূত্রে জানা গেছে, মিয়ানমার ছেড়ে আসা সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশিদের নৌকায় করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে নেওয়ার পথে দক্ষিণ থাইল্যান্ড ও উত্তর মালয়েশিয়ার গভীর জঙ্গলে রাখা হতো।
রয়টার্স জানিয়েছে, মঙ্গলবার দুপুরে মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ একদল সাংবাদিককে মানবপাচারকারীদের একটি ক্যাম্পে নিয়ে যান। মূল সড়ক থেকে ক্যাম্পটিতে যেতে প্রায় এক ঘণ্টা পার্বত্য জঙ্গলের ঢালু পথে হেঁটে যেতে হয়। মঙ্গলবার বিকেলে দিকে গণকবর থেকে প্রথম লাশটি উত্তোলন করা হয়।
এর আগে সোমবার মালয়েশিয়ার পুলিশ জানায়, দক্ষিণাঞ্চলের পারলিস প্রদেশের পার্বত্য অঞ্চলে তারা ১৩৯টি কবরের সন্ধান পেয়েছে। ৫০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ২৮টি বন্দিশিবিরে এই কবরগুলো পাওয়া যায়। কিছু কবরের একটির বেশি লাশ থাকতে পারে বলে কর্তৃপক্ষ আশঙ্কা করছে।
অভিবাসীবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংগঠন আইওএমের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াবিষয়ক মুখপাত্র জোয়েল মিলম্যান সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, মালয়েশিয়ার পার্বত্য জঙ্গলের গণকবরে শতাধিক লাশ পাওয়ার যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মালয়েশিয়ার সীমান্তবর্তী থাইল্যান্ডের আঞ্চলিক পুলিশ উপপ্রধান পুট্টিচার্ট একাচান বলেন, দুই দেশের বন্দিশিবিরের মধ্যে কোনো ধরনের যোগাযোগ ছিল কি না, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এমনও হতে পারে, থাইল্যান্ডে ধরপাকড়ের কারণে অভিবাসীসহ পাচারকারীরা সীমান্ত পেরিয়ে মালয়েশিয়া চলে গেছে। তবে এই বিষয়টি এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
মালয়েশিয়ার পুলিশ প্রধান খালিদ আবু বকর দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম বারনামাকে জানান, ২০১৩ সাল থেকে ক্যাম্পগুলো চালানো হচ্ছিল। আলামত দেখে মনে হচ্ছে দুই এক সপ্তাহ আগে ক্যাম্প ছেড়ে চলে গেছে পাচারকারীরা। তিনি আরো বলেন, ক্যাম্পে মানুষ নির্যাতনের ভয়াবহতা দেশে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরাও বিস্মিত।
মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ড উভয় সরকারই জানিয়েছে, জঙ্গলে সংঘবদ্ধ পাচারকারীদের সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসন ও বন কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এদিকে মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রে নৌবাহিনীর সদস্যরা অভিবাসীবাহী নৌকার খোঁজে হেলিকপ্টারে সাগরে টহল শুরু করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জেফ রাথকে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, মালয়েশিয়ার স্থানীয় সরকারকে সহযোগিতার জন্য যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তুত আছে।