পাথর সরাতেই মিলল সারি সারি সোনার থালা
দেখে যে কেউ বলবে প্রাচীন কবর। পাথরচাপা দেওয়া মাটির ঢিবি। আবার মনে হবে যেন একটা পুরোনো ঘর। সব সরিয়ে ওই পুরোনো ঘরে প্রবেশ করেই চক্ষু ছানাবড়া! থালা, ঝুড়ি, কল্কি। সবই খাঁটি সোনার! আছে অলংকার আর আংটিও।
সম্প্রতি এমনই কাণ্ড ঘটেছে রাশিয়ার দক্ষিণে জেত্রস্ক শহরে। সোনায় সাজানো ওই লুকানো ঘর আবিষ্কার করেছেন প্রত্নতত্ত্ববিদ আন্দ্রেই বেলনস্কি।
আন্দ্রেই বেলনস্কি সংবাদ মাধ্যম দ্য মিররকে বলেন, ‘আমরা বেশ কিছুদিন ধরেই ওই এলাকায় প্রাচীন নিদর্শনের খোঁজে অভিযান চালাচ্ছিলাম। গয়নাগুলো একটি প্রাচীন কবরের মতো ঘরের মধ্যে ছিল। বিশাল আকৃতির একটি পাথর দিয়ে তা চাপা দেওয়া ছিল। পাথরটি সরাতেই সারি সারি সোনার থালা দেখে আমার সহকর্মীদের চোখ কপালে।’
আবিষ্কৃত ওই গুপ্তধনের মধ্যে সোনার নির্মিত থালাগুলোর ওজন প্রায় সাত পাউণ্ড। এই গুপ্তধনের মধ্যে আছে খাঁটি সোনার তৈরি দুটি ঝুড়ি, একটি প্রাচীন জাহাজের ভাস্কর্য, আটটি খাবার থালা, তিনটি কাপ, বেশ কয়েকটি ছোট কল্কি, একটি গলার ও একটি হাতের অলংকার আর কয়েকটি আংটি।
আন্দ্রেই বেলনস্কি আরো জানান, নানা আকৃতির পাত্র ছিল সেখানে। বাটি, গ্লাস, থালা,গয়না- সবই খাঁটি সোনার।
থালাগুলো পরীক্ষা করে প্রত্নতত্ত্ববিদ ও বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, বিভিন্ন আনন্দ অনুষ্ঠানে ওই সোনার পাত্রগুলোতে সিদ্ধি, গাঁজা সেবন করত গোত্রের রাজারা। প্রত্নতাত্ত্বিকরা জানিয়েছেন, খ্রিস্টপূর্ব ৯০০ থেকে ৪০০ খ্রিস্টপূর্বের মাঝামাঝি কোনো সময়ে বেশ কিছুকাল ইউরোপ ও এশিয়ার একটা বড় অংশ শাসন করেছিল সাইথিয়ান্স নামক এক গোত্র। এরা যুদ্ধে খুবই দক্ষ ছিল। ওই রাজারা গাঁজা, ভাং ইত্যাদি পছন্দ করত। বিশেষ করে অনুষ্ঠানে বা যুদ্ধের পরিকল্পনার আগে রাজাদের নেশা করার জন্য সোনার পাত্র ব্যবহার করা হতো। উদ্ধার হওয়া সোনার থালাগুলো ওই রাজাদেরই।
বার্লিনের পারশিয়ান কালচার হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের পরিচালক আন্তন গাস বলেন, প্রাচীন গ্রিসের ইতিহাসবিদ হেরোডোটাস তাঁর বইতে সাইথিয়ান্সদের সম্পর্কে লিখেছিলেন, ‘সাইথিয়ান্সরা ধূমপানের জন্য গাঁজার চাষ করত এবং তাদের গলার আওয়াজেও খুব জোর ছিল।’
আন্দ্রেই বেলনস্কি জানিয়েছেন, সোনার পাত্র ও গয়নাগুলো আপাতত রাশিয়ার একটি জাদুঘরে রাখা হয়েছে।