খালার কাছ থেকে ফুলের তোড়া নেব, কল্পনা করিনি : টিউলিপ
যুক্তরাজ্যে লেবার পার্টির এমপি ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনি টিউলিপ রেজওয়ান সিদ্দিক বলেছেন, মঞ্চে এসে তাঁর খালা শেখ হাসিনার কাছ থেকে ফুলের তোড়া নেবেন এ কথা কখনো কল্পনা করেননি তিনি।
রোববার সন্ধ্যায় লন্ডনের পার্ক লেন হোটেলে এক নাগরিক সংবর্ধনায় টিউলিপ বলেন, ‘আমি কখনো এটা স্বপ্নে দেখিনি যে, মঞ্চে এসে আমি আমার খালার কাছ থেকে ফুলের তোড়া নিচ্ছি।’
সংবাদসংস্থা বাসস জানায়, ভারতের সাথে সীমান্তচুক্তি বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনন্য অর্জনের জন্য তাঁর সম্মানে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ এই সংবর্ধনার আয়োজন করে।
যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ সভাপতি সুলতান মাহমুদ শরীফের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম ও যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক আনোরুজ্জামান চৌধুরী বক্তৃতা করেন।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রবাসী বাংলাদেশী ও যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেয়া সম্মাননা পাঠ করেন বিশিষ্ট সাংবাদিক আবদুল গাফফার চৌধুরী। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজেদুর রহমান ফারুক।
যুক্তরাজ্যের হাউস অব কমন্সের কয়েকজন এমপিও সংবর্ধনায় বক্তৃতা করেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁদের ফুলের তোড়া ও বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী গ্রন্থ দিয়ে স্বাগত জানান। হ্যাম্পস্টেড ও কিল্লবার্নের লেবার পার্টির এমপি টিউলিপ ছাড়াও অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া ব্রিটিশ এমপিদের মধ্যে ছিলেন, কার্ডিফের লেবার পার্টির এমপি জো স্টিভেন্স, ইলফোর্ড নর্থের লেবার পার্টির এমপি ওয়েস স্ট্রির্টিং, ইলফোর্ড সাউথের লেবার পার্টির এমপি মাইক গ্যাপস এবং সুথান ও চীফ থেকে নির্বাচিত কনজারভেটিভ পার্টির এমপি পল স্কাউলি।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, ঝিনাইদহের আওয়ামী লীগের এমপি নবী নেওয়াজ, প্রধানমন্ত্রীর মিডিয়া উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, প্রেসসচিব এ কে এম শামীম চৌধুরী এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশের আওয়ামী লীগ নেতারা অংশ নেন।
সংবর্ধনার শুরুতে ১৫ আগস্টের হত্যাযজ্ঞে বঙ্গবন্ধু ও অন্যান্য শহীদ, শহীদ জাতীয় চার নেতা, মুক্তিযুদ্ধে শহীদ এবং বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শহীদদের স্মৃতির সম্মানে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি টিউলিপ যুক্তরাজ্যে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতি তার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, তাঁদের সমর্থন ছাড়া তিনি ব্রিটিশ পার্লামেন্টে নির্বাচিত হতে পারতেন না।
কর্মী-সমর্থকদের মুহুর্মুহু করতালির মধ্যে আবেগাপ্লুত টিউলিপ বলেন, ‘আপনারা অনেক করেছেন। আপনাদের সমর্থন, স্নেহ ও ভালোবাসা ছাড়া আমি এ অবস্থানে আসতে পারতাম না।’
অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য তাঁর নির্বাচনী এলাকার জনগণকে ধন্যবাদ জানিয়ে লেবার পার্টির এই এমপি বলেন, গত ৭ মের নির্বাচনে এক হাজার ভোটের ব্যবধানে জিতেছেন। তাঁর এই নির্বাচনী আসনে বাঙালি ভোটার রয়েছেন এক হাজার।
নির্বাচনে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত অপর দুই পার্লামেন্ট সদস্য রুশনারা আলী ও ড. রূপা হকের নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে টিউলিপ বলেন, তিনি গর্বিত যে, যুক্তরাজ্যের এবারের নির্বাচনে তিনজন বাঙালি নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি বলেন, আগামি ডিসেম্বরে তিনি বাংলাদেশ সফরে আসবেন এবং এ সময় তিনি প্রথম সিলেট ও পরে ঢাকা যাবেন।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী ফুলের তোড়া ও বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী হস্তান্তরকালে তাঁর ভাগ্নি টিউলিপকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু দেন।
অন্যান্য ব্রিটিশ এমপি অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে আর্থ-সামাজিক খাতে বাংলাদেশের বিস্ময়কর সাফল্যের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
তাঁরা ব্রিটিশ অর্থনীতির পাশাপাশি রাজনীতি, সমাজ ও সংস্কৃতিতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ব্যাপক অবদানেরও প্রশংসা করেন। ব্রিটিশ হাউস অব কমন্সের সদস্যরাও ‘জয় বাংলা’ বলে অনুষ্ঠানে তাঁদের বক্তৃতা শেষ করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, বাংলাদেশ প্রত্যেক খাতে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। গত ছয় বছরে দেশ এভাবে এগিয়ে যাবে এটা কেউ কল্পনা করতে পারেনি।
জয় ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে তাঁর নিজস্ব চিন্তা-ভাবনার কথা উল্লেখ করে বলেন, পাঁচ থেকে ছয় বছর আগে দেশে ডিজিটালের মতো কোনো কিছুর অস্তিত্ব ছিল না। কিন্তু বাংলাদেশ এখন ডিজিটালাইজেশনে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে।
প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের স্বপ্ন অনেক বড়। আমরা শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও উন্নয়নের মতো প্রত্যেক খাতে দেশকে এগিয়ে নিচ্ছি।’ তিনি আরো বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশের জন্য অনেক কিছু করতে হবে। এখন আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত অপটিক্যাল ফাইবার নিয়ে যাওয়া। প্রত্যেক স্কুলে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম এবং প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ে আইসিটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা।’
সম্মাননা হস্তান্তরের সময় আবদুল গাফফার চৌধুরী তাঁর হাত প্রধানমন্ত্রীর মাথায় রাখেন।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে গাফফার চৌধুরীকেও ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, গাফফার চৌধুরীর লেখা বিভিন্ন সংকটে তাঁকে সাহস জুগিয়েছে।