এবারও চীনে রোজা রাখায় নিষেধাজ্ঞা
মুসলমানদের সিয়াম সাধনার মাস পবিত্র মাহে রমজানে এবারও রোজা রাখতে পারছেন না চীনের জিনজিয়াং প্রদেশের সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়। প্রদেশটির সরকার এক ঘোষণায় জানিয়েছে, উইঘুর জনগোষ্ঠীর মুসলিমরা এবার পবিত্র রমজান মাসে কোনো রোজা রাখতে পারবেন না।
জিনজিয়াং কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সরকারি চাকরিজীবী, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা রোজা রাখতে পারবেন না। সেইসঙ্গে মুসলিম মালিকানার সব রেস্টুরেন্ট খোলা রাখতে হবে। চীনের সরকারি ওয়েবসাইটগুলোতে রমজানের প্রথম দিন আজ বৃহস্পতিবার এ ঘোষণা প্রকাশিত হয়েছে।
জিনজিয়াংয়ের জিংহি এলাকার সরকারি খাদ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ক ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ঘোষণায় বলা হয়েছে, ‘পুরো রমজান মাসে হোটেল, রেস্টুরেন্টসহ খাদ্য পরিবেশনকারী স্থানগুলোর স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় থাকবে।’ একই প্রদেশের বোলে এলাকার কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করেছে, ‘রমজানে কেউ রোজা রাখবেন না বা রাত্রিতে জাগাসহ অন্য কোনো ধর্মীয় কাজকর্ম করবেন না।’
প্রদেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত বোজৌ রেডিও এবং তারফাং শহরের বাণিজ্যবিষয়ক ব্যুরো একই ঘোষণা দিয়েছে বলে জানায় সংবাদমাধ্যম দ্য ইনডিপেনডেন্ট।
চীনের জিনজিয়াং প্রদেশটিতে মূলত চীনের সংখ্যালঘু মুসলিম উইঘুর সম্প্রদায়ের বাস। ২০১০ সাল থেকে ওই অঞ্চলের কয়েকটি জেলায়, এবং ২০১৩ সাল থেকে প্রদেশটিতে রোজা রাখার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রেখেছে চীনের কমিউনিস্ট সরকার।
কাজাকিস্তানের সীমান্তবর্তী এলাকার রেস্টুরেন্টগুলো রোজার সময় খোলা রাখার জন্য নানাভাবে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছে সরকারি ওয়েবসাইটগুলো। এ ছাড়া মুসলিম মালিকানাধীন দোকানগুলোতে সিগারেট এবং মদ বিক্রি অব্যাহত রাখতে কড়া নির্দেশ দিয়েছে বেইজিং সরকার। এ নির্দেশ অমান্য করা হলে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দেওয়া হবে বলেও হুমকি দেওয়া হয়েছে।
উইঘুর কংগ্রেসের মুখপাত্রের বরাতে সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, কর্তৃপক্ষ উইঘুররা রমজান পালন করছে কি না তা তদন্ত করতে বাড়ি বাড়ি খোঁজ নিচ্ছে।
এই ঘোষণায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন উইঘুর নেতা দিলজাত রাজিত। এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, ‘এটি ধর্মীয় বিশ্বাসের ওপর হামলা এবং এ ধরনের কড়াকড়ি আরোপের কারণে উইঘুর জনগোষ্ঠী চীনা সরকারের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠতে পারে।’ তিনি আরো বলেন, কয়েক বছর ধরে উইঘুরদের ধর্ম নিয়ে রাজনীতি শুরু করেছে চীন। ধর্ম পালনে এ ধরনের বিধি-নিষেধের ফলে সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে ওঠতে পারে।’
উইঘুরের মানবাধিকার সংগঠনগুলোর বরাতে দ্য ইনডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, জিনজিয়াং অঞ্চলে মুসলমানদের ওপর চীন সরকারের এ বিধিনিষেধ আরোপের ফলে জাতিগত উত্তেজনা বাড়বে। গত কয়েক বছরে এ অঞ্চলে জাতিগত দাঙ্গায় শত শত মানুষ নিহত হয়েছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং সমাবেশ লক্ষ্য করে বিচ্ছিন্নতাবাদী উইঘুররা একাধিক সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ চীনের। তবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়টি বারবার এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।
এর আগে ২০১৪ সালে চীনের মুসলিম অধ্যুষিত জিনজিয়াং প্রদেশে লম্বা দাড়ি রাখা এবং বাসে ভ্রমণের সময় ইসলামী পোশাক পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। আল-জাজিরার খবরে বলা হয়েছে- একই বছর আগস্টে জিনজিয়াংয়ের কারাম অঞ্চলে হিজাব, বোরখা ও লম্বা দাড়ি নিষিদ্ধ করা হয়।