আইএস চালু করছে নিজস্ব মুদ্রা
নিজস্ব পতাকা, আদালত, মন্ত্রণালয়, পাসপোর্ট, গাড়ির লাইসেন্স প্লেট ইত্যাদি প্রশাসনিক বন্দোবস্ত আগে থেকেই চালু করেছিল ইসলামিক স্টেট (আইএস)। এবার সেই কাঠামোয় যুক্ত হলো মুদ্রা ব্যবস্থা। গতকাল বুধবার নিজস্ব ওয়েবসাইটে নতুন এই মুদ্রার ছবি প্রকাশ করে আইএস। আগামী ২৯ জুন খিলাফত ঘোষণার প্রথম বর্ষপূর্তিতে এই মুদ্রা অবমুক্ত করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠনটি।
ওয়েবসাইট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত ছবিতে দেখা যায় মুদ্রার এক পিঠে শস্যের ছবি, অপর পিঠে আরবি হরফের লেখা। কোনো মুদ্রার পিঠে রয়েছে বিশ্বের মানচিত্রও। প্রতিটি মুদ্রায় আরবি ভাষায় ‘মহানবীর অনুসরণে পরিচালিত খেলাফত’ এই কথাটি লেখা থাকবে।
নিজেদের শক্তি ও সমৃদ্ধি বুঝাতে হাওয়ায় ওড়া শস্যের ছবি দেওয়া হয়েছে বলে দাবি আইএসের। সোনা, রূপা ও তামা- এই তিন ধরনের মুদ্রা তারা বাজারে আনবে বলে জানা গেছে।
প্রতিটি স্বর্ণমুদ্রার মূল্য ১৩৯ ডলার এবং রৌপ্য মুদ্রার মূল্য এক ডলার। বিশ্বব্যাপী ‘শয়তানি অর্থনীতির’ অবসানে এ মুদ্রার প্রচলন করা হবে বলে নিজস্ব ওয়েবসাইটে জানিয়েছে আইএস।
খিলাফত প্রতিষ্ঠার পরবর্তী ধাপ হিসেবে মুদ্রা ব্যবস্থার সংস্কার এবং নিজস্ব মুদ্রা বাজারে আনার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিল গত বছরের নভেম্বরে। সে সময় তারা জানিয়েছিল প্রায় ১৩০০ বছর আগে খিলাফত রাষ্ট্রব্যবস্থার জন্য আলাদা মুদ্রা ব্যবস্থা তৈরির কথা ছিল। সেই পূর্বোক্ত পরিকল্পনাটিকেই বাস্তবে রূপ দিয়েছে ইসলামিক স্টেট।
তবে ইসলামিক স্টেট প্রবর্তিত এই মুদ্রা ব্যবস্থা বর্তমানে প্রচলিত মুদ্রা ব্যবস্থা থেকে ভিন্ন। আইএস তাদের মুদ্রা তৈরিতে ব্যবহার করছে না পার্চমেন্ট বা অন্য কোন কাগজ। কাগজের পরিবর্তে তারা সাবেকী আমলের ব্যবস্থা অনুযায়ী স্বর্ণ, রৌপ্য এবং তামায় নির্মিত মুদ্রা চালু করবে। ‘দিনার’ নামে ওই মুদ্রা বাজারে ছাড়বে বলে জানিয়েছে আইএস।
তবে মুদ্রা বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে ইসলামিক স্টেটের পক্ষে স্বতন্ত্র মুদ্রা এবং মুদ্রা ব্যবস্থা চালু করা সম্ভব হবে না। কারণ সহস্র বছরের পুরনো পন্থায় ধাতুর মুদ্রা চালু করতে গেলে প্রথমেত ইসলামিক স্টেট সংগঠনটিকে অর্থের তারল্য সংকট মোকাবিলা করতে হবে।
কিন্তু কিছু বিশেষজ্ঞ আবার ভিন্ন কথাও বলছেন। তাঁদের বক্তব্য অনুযায়ী, ইসলামিক স্টেট যদি ধাতু নির্মিত মুদ্রা ব্যবস্থা সত্যিই চালু করতে চায় তাহলে তারা সবার আগে তেল বিক্রি থেকে প্রাপ্ত অর্থ ডলারে না নিয়ে স্বর্ণে নিতে চাইবে। সে ক্ষেত্রে বাজারে স্বর্ণের দাম একলাফে বেড়ে যাবে।
আর যেহেতু ইসলামিক স্টেটের কাছ থেকে তেল পশ্চিমা দেশগুলোই কেনে তাই একপ্রকার বাধ্য হয়েই ইসলামিক স্টেটকে স্বর্ণে তেলের দাম শোধ করতে হতে পারে তাদের। আর এই বাধ্যবাধকতার মধ্যিখানে এমনও হতে পারে যে বিশ্বব্যাংক এই ইসলামিক স্টেট দিনারকে স্বীকৃতিও দিতে পারে।