ট্রাম্পকে জলবায়ু চুক্তিতে ফেরাতে ব্যর্থ বিশ্বনেতারা
জার্মানির হামবুর্গ শহরে অনুষ্ঠিত জি২০ সম্মেলনে শিল্পোন্নত ২০টি দেশের মধ্যে ১৯টিই জলবায়ু পরিবর্তন-সংক্রান্ত ‘প্যারিস চুক্তি’ বাস্তবায়নে একমত হয়েছে। তবে ওই চুক্তি থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়ে সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুতে অবস্থান নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
স্থানীয় সময় গতকাল শনিবার এক যৌথ বিবৃতির মাধ্যমে প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নে নিজেদের একমত হওয়ার কথা জানানো হয় ১৯ দেশের পক্ষ থেকে। জলবায়ু পরিবর্তন চুক্তি বাস্তবায়নের পক্ষে হামবুর্গ শহরে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সমাবেশের পর পরই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো।
বিবৃতিতে বলা হয়, জলবায়ুর বিষয়ে দেশগুলোর এ নিবিড় অবস্থান জীবাশ্ম জ্বালানি আরো পরিচ্ছন্ন ও দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহার করতে সাহায্য করবে। এ ছাড়া বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি রোধে প্রস্তাবিত প্যারিস চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে যাওয়ার বিষয়টি মাথায় রাখা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।
তবে এ চুক্তির বিষয়ে একেবারেই নেতিবাচক ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর ধারণা, এ চুক্তির ফলে অসুবিধায় পড়বে দেশটির শ্রমিকরা। এ ছাড়া চুক্তির বিপরীতে অবস্থান করে যুক্তরাষ্ট্রের কয়লাশিল্পকে আবার দাঁড় করানোর আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
চুক্তির বিষয়ে জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল বলেন, প্যারিস চুক্তিতে ট্রাম্পের অবস্থানে তিনি এখনো দুঃখিত। তবে বাকি ১৯টি দেশের এ বিষয়ে একত্রে থাকার সিদ্ধান্তে তিনি খুশি হয়েছেন।
এদিকে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাকরোঁর আশা, নিজের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করবেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে ট্রাম্পকে বোঝানোর ক্ষেত্রে কখনোই ক্ষান্ত হব না। কারণ, আমি মনে করি এটা আমার দায়িত্ব।’
চলতি বছর ১২ ডিসেম্বর ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া জি২০-এর পরবর্তী সম্মেলনে এ বিষয়ে অগ্রগতি হবে বলে মনে করেন ম্যাঁকরো।
ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর নির্বাচনী প্রচারের সময় থেকেই প্যারিস জলবায়ু চুক্তির বিরোধিতা করে আসছিলেন। গত মে মাসের শেষে ইতালির সিসিলির তাওরমিনাতে অনুষ্ঠিত বিশ্বের শিল্পোন্নত সাত দেশের জোট জি-সেভেনের শীর্ষ সম্মেলনের অন্যতম আলোচনা বিষয় ছিল প্যারিস জলবায়ু চুক্তি।
জি-সেভেনভুক্ত দেশগুলোর নেতারা সেই বৈঠকে চেষ্টা করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছ থেকে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি নিয়ে অগ্রসর হওয়ার অঙ্গীকার আদায় করতে। কিন্তু ট্রাম্প জানান, তিনি দেশে ফিরে এ ব্যাপারে জানাবেন।
পরে ১ জুন হোয়াইট হাউসে এক বক্তৃতায় জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় করা প্যারিস চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর 'অর্থনৈতিক বোঝা' চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘এটি এমন একটি চুক্তি, যার কারণে যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে; কিন্তু লাভবান হবে অন্য দেশ।’
ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা। পরে শিল্পোন্নত সাত দেশের জোট জি-সেভেনভুক্ত দেশ চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত আরো পাঁচটি দেশ যুক্তরাষ্ট্রকে বাদ দিয়েই এ ব্যাপারে একটি যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করেছে। এতে প্যারিস চুক্তি কার্যকর করার জন্য ‘সর্বোচ্চ রাজনৈতিক সদিচ্ছার’ ওপর জোর দেন তাঁরা।
প্রাণ-প্রকৃতি-পরিবেশ রক্ষায় ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে প্যারিসের ‘কপ-২১’ জলবায়ু চুক্তিতে আমেরিকাসহ আরো ১৮৭টি দেশ মিলে অঙ্গীকার করেছিল যে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের মাত্রা তারা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম রাখবে; এমনকি দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি নামিয়ে আনতে চেষ্টা করবে।
চুক্তিটিকেও পুরোনো ধারণা বলে নির্বাচনী প্রচারের সময় মতপ্রকাশ করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর যুক্তি দেখিয়ে ট্রাম্প জলবায়ু নীতি থেকে সরে আসার কথা জানিয়েছিলেন। কারণ, এ চুক্তির আলোকে যে জলবায়ু তহবিল গঠিত হয়, তার বড় জোগানদাতা যুক্তরাষ্ট্র। এই তহবিল থেকেই জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো সাহায্য পায়।