ফিরতে চায় তিন শতাধিক বাংলাদেশি
সমুদ্রপথে পাচার হওয়া তিন শতাধিক মানুষ এখনো আটকে আছে মালয়েশিয়ার বিভিন্ন ক্যাম্পে। তাদের মধ্যে দুই শতাধিক মানুষের পরিচয় এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বাংলাদেশ থেকে পাঠানো নাগরিকত্ব সনদের অপেক্ষায় পরিচয় নিশ্চিত করার অভাবেই ঝুলে আছে এসব মানুষের ভাগ্য। কবে দেশে ফেরার ডাক পড়বে, কখন প্রিয় স্বজনের কাছে যেতে পারবেন সেই আশাতেই শরণার্থী শিবিরগুলোতে প্রহর গুনছেন মানব পাচারের শিকার হওয়া অসহায় মানুষ।
মালয়েশিয়ার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সামনের ফুটপাতে কয়েকদিন ধরেই দেখা মিলছে খালি পা, পরনে একই রঙের গেঞ্জি আর হাড্ডিসার চেহারার কিছু মানুষের। এদের চোখেমুখে ভয়ের ছাপ। গভীর রাতে চাকচিক্যময় বিমানবন্দরের বিপরীতে হতদরিদ্র মানুষগুলোকে বেমানান দেখায় অনেক।
শরণার্থী শিবির থেকে মালয়েশিয়ার বিমানবন্দরে পৌঁছাতে সময় লাগে ১১ ঘণ্টা। এই দীর্ঘ সময়ের বাস ভ্রমণের পুরো সময় এদের প্রত্যেকের হাতে থাকে হাতকড়া আর পায়ে শেকল। সাগরযুদ্ধে প্রাণে বেঁচে যাওয়া মানবপাচারের শিকার এসব মানুষের প্রত্যেকের জীবনের গল্পটাই প্রায় অভিন্ন। যাদের মুক্তি মিলেছে,তাদের সামনে অপেক্ষা কেবল অনিশ্চিত এক জীবন।
যে দালালদের জন্য এসব মানুষের আজ এই দশা, দেশে ফিরে তাদের বিচার দাবি করেন এসব ভাগ্য বিতাড়িত মানুষ। এদের একজন বললেন, ‘এখন আমার যে দালাল টাকা নিছে প্রতারক আমরা যেন সুষ্ঠ বিচার পাই।’
অভাব ঘোচাতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সমুদ্রপথে স্বপ্নের দেশে পাড়ি দেওয়ার উদ্দেশে ঘর থেকে বেরিয়েছিল হাজারো মানুষ। সাগরে ভাসা ট্রলারে খাবার আর পানির অভাব। সঙ্গে দালালদের ভয়াবহ নির্যাতন। পানি না পেয়ে কেউ প্রস্রাব খেয়েছেন, কেউ বা চোখের সামনে সহযাত্রীর মৃত্যু দেখে অপেক্ষা করেছেন নিজের মৃত্যুর। শেষ পর্যন্ত উপকূলরক্ষীদের হাতে মালয়েশিয়ায় আটক ৭১৬ জনের মধ্যে পরিচয় নিশ্চিত হয়েছে ৪৪৬ জনের।
মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার হুমায়ুন কবির বলেন, ‘যে-ই এসেছে আমরা কিন্তু কয়েকদিনের ভেতর সবগুলো পৌঁছে দিয়েছি। বাদবাকিগুলা আমরা আশা করছি খুব সহসাই এসে যাবে। এসে গেলে এদেরকেও আমরা খুব তাড়াতাড়ি আসামাত্র আমরা পাঠিয়ে দেব।’
সামনে ঈদ। মানবপাচারের শিকার এসব মানুষের অপেক্ষায় বাংলাদেশে তাদের প্রিয় স্বজনরা। সব প্রস্তুতিও সম্পন্ন। তবে দেশ থেকে এখনো অবশিষ্ট মানুষগুলোর পরিচয় সংক্রান্ত প্রতিবেদন হাইকমিশনের হাতে না আসায় ঝুলে আছে আটকে পড়াদের বাংলাদেশে আসার বিষয়টি।
এ বিষয়ে হাইকমিশনার আরো বলেন, ‘ঈদের আগে আমরা আরো কিছু সংখ্যক লোককে পাঠাতে পারব। তারপরে যে কিছু লোক থাকবে, আমরা চেষ্টা করব ঈদের পরপরই যত তাড়াতাড়ি বাংলাদেশে পাঠানো যায়। আমি যদি বলি সব প্রস্তুতি আমাদের হাতে আছে, শুধু ওই ভেরিফিকেশনটা এসে গেলেই আমরা এদেরকে পাঠিয়ে দিতে পারব।’
মালয়েশিয়ার শরণার্থী শিবিরে মানবপাচারের শিকার এসব অসহায় মানুষ এখন তাকিয়ে রয়েছেন নাগরিকত্ব সনদের অপেক্ষায়। আর যাঁরা সব হারিয়ে দেশে ফিরছেন, তাঁরা অপেক্ষা করছেন সরকারের নীতি সহায়তার দিকে। যাতে করে সর্বস্বান্ত হওয়ার পরও তারা ফের ঘুরে দাঁড়াতে পারেন জীবনের পথে।