আরব লিগের বৈঠকে সৌদি-কাতার কাজিয়া
কাতারের সঙ্গে বন্ধুপ্রতিম চার আরব দেশ সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই), বাহরাইন, মিসর ও মিত্রদের সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হওয়ার তিন মাস পার হয়েছে। এ সময়ে দুটি পক্ষের মধ্যে বহু নাটকীয়তা ও বাক্যবাণ ছোড়া হয়েছে। কিন্তু সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়ার আলামত মেলেনি। সর্বশেষ মিসরের রাজধানী কায়রোতে আরব লিগের বৈঠকেও কাতারের নেতাদের সঙ্গে সৌদি ও মিত্র দেশগুলোর কর্তাব্যক্তিদের উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়েছে।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার হওয়া বৈঠকে এমন দৃশ্য দেখা যায়।
সন্ত্রাসে পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগে গত ৫ জুন কাতারের সঙ্গে সব ধরনের সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করে চারটি দেশ। পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যের প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ দেশটির ওপর স্থল, নৌ ও আকাশপথে অবরোধ দেয় প্রতিবেশীরা।
এই অবরোধ তুলে নিতে উপসাগরীয় সহযোগিতা সংস্থার (জিসিসি) মিত্র তিন দেশ সৌদি, বাহরাইন ও ইউএইএ এবং সহযোগীরা কাতারকে ১৩টি শর্ত দেয়। কিন্তু সেগুলো মেনে নেয়নি কাতার।
অচলাবস্থার একপর্যায়ে শর্তগুলো শিথিল করে চার দেশ। এর পরও সংকট সমাধানের আভাস মেলেনি। এমন বাস্তবতায় দ্বন্দ্ব নিরসনে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে নিয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে জিসিসির সদস্য রাষ্ট্র কুয়েত।
গতকালের বৈঠকে স্বাগত বক্তব্যে কাতারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সুলতান বিন সাদ আল-মুরাইখি ইরানকে ‘সম্মানিত দেশ’ হিসেবে আখ্যা দেন। তিনি বলেন, অবরোধের পর থেকে প্রতিবেশী দেশটির (ইরান) সঙ্গে কাতারের সম্পর্কের উন্নতি হয়েছে।
সুলতানের এই বক্তব্যের জবাবে আরব লিগে নিযুক্ত সৌদির দূত আহমেদ আল-কাত্তান বলেন, ‘ইরানের প্রতি অভিনন্দন এবং আল্লাহ চাহে তো শিগগিরই আপনারা এর জন্য অনুশোচনা বোধ করবেন।’
‘কাতারের ভাইয়েরা যদি মনে করেন, ইরানের সঙ্গে সুসম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠায় তাঁরা উপকৃত হবেন, সে ক্ষেত্রে আমি বলতে চাই, তাঁরা প্রতিটি পদক্ষেপে এই পর্যালোচনার ভুল খুঁজে পাবে। এ ধরনের সিদ্ধান্তের জন্য কাতারিরা দায়ী হবে।’
আহমেদ আল-কাত্তান আরো বলেন, ‘আগামী দিনগুলোতে তারা ভুল প্রমাণিত হবে। কারণ আমরা জানি, কাতারে ইরানের ভূমিকা কখনোই মেনে নেবে না কাতারি জনগণ।’
ইউএইর পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আনোয়ার গারগাশ বলেন, শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাতারের অনিচ্ছার কারণে উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে সংকট চলছে।
জবাবে কাতারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সুলতান বিন সাদ আল-মুরাইখি বলেন, সংকট শুরু করেছে ইউএই। দেশটির সমর্থনে দুর্বৃত্তরা কাতার সংবাদ সংস্থা (কিউএনএ) হ্যাক করে কাতারের আমিরের নামে ভুল সংবাদ ছড়িয়েছে।
ওই সময় সৌদির দূত আহমেদ আল-কাত্তানের বক্তব্যের সমালোচনা করে কাতারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এগুলো হুমকি এবং আমি মনে করি, তাঁর (আল-কাত্তান) এমন হুমকি ও বক্তব্য দেওয়ার কোনো অধিকার নেই।’
এর পর আল-কাত্তান ও সুলতানের মধ্যে ব্যক্তিগত রেষারেষি শুরু হয়। তাঁরা পরস্পরকে চুপ করতে বলেন।