বিদেশে থাকা কাতারি উটের দুঃখগাথা
সৌদি আরবের মরুভূমি ধরে টানা ছয় দিন হেঁটেছে উটগুলো। কাতার সীমান্তে পৌঁছে তীব্র গরমে পশুগুলোর শরীর দিয়ে দরদর করে ঘাম ঝরেছিল। সীমান্ত ক্রসিংয়ে এসেছে, পারাপারের জন্য অপেক্ষা করতে হলো আরো তিন দিন। অবশেষে যখন সীমান্ত খুলল, তখন তাড়াহুড়ো করে কাতারে ঢুকতে থাকল হাজার হাজার উট।
সৌদি-কাতার সীমান্তে এই কথাগুলো আলজাজিরার প্রতিবেদককে বলছিলেন কাতারের উট মালিকদের একজন মোহাম্মদ আবু সালেম আল-মারি। ভোগান্তির কথা বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘এভাবে হুড়োহুড়ি করে সীমান্ত দিয়ে ঢুকতে গিয়ে আমি একটি উটের বাচ্চা হারিয়েছি। আমার মতো অনেকেই তাদের পশু হারিয়েছে। আমি সেখানে কয়েকটি মৃত উটও দেখেছি।’
তিন মাসের বেশি সময় আগে কাতারের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদে মদদ দেওয়ার অভিযোগ এনে সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই), বাহরাইন ও মিসর। এর পর থেকেই কাতারে স্থলপথে খাবারসহ প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী ঢোকা বন্ধ হয়ে যায়।
আলজাজিরার খবরে বলা হয়, কূটনৈতিক চাপের অংশ হিসেবেই সৌদি আরবে থাকা কাতারের সব উটও ফেরত পাঠানো হচ্ছে। এমন বাস্তবতায় সৌদি থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হাজার হাজার উটের জায়গা সংকুলান করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কাতারকে। এই উটগুলো আগে সৌদির মরুতে মুক্তভাবে বিচরণ করত। কিন্তু ছোট দেশ কাতারে জনস্বার্থে উটগুলোকে মুক্তভাবে চলাফেরা করতে দেওয়া হয় না। দেশটিতে গাছপালা রক্ষার জন্য উটকে বেড়ার মধ্যে রাখতে হয়।
শুধু সৌদি নয়, ইউএই থেকে ফেরত পাঠানো হচ্ছে কাতারের মালিকানাধীন উটগুলোকে। এ ক্ষেত্রে পুরো ব্যয় বহন করতে হচ্ছে কাতার সরকারকে। প্রতিবেশী দেশগুলোর অবরোধের পর ওই উটগুলোকে ইউএইতে অনুষ্ঠিত দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নিতেও দেওয়া হয়নি।
বর্তমান পরিস্থিতিতে কাতার সরকার উটকে মুক্তভাবে চলাচলের সুযোগ দেবে বলে আশা প্রকাশ করেন আবু সালেম আল-মারি। ৭০টির মতো উট নিয়ে পাহাড়ি সীমান্তে থাকা কাতারের এই নাগরিক বলেন, ‘মানুষের মতো উটের প্রয়োজন হয় চলাফেরা করার। তারা বেড়ার মধ্যে আটকে থেকে বাঁচতে পারে না।’
মিসরের কায়রোতে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত আরব লিগের এক সম্মেলনে কাতারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সাদ আল-মুরাইখি বলেন, অবরোধ দেওয়া দেশগুলো প্রাণীদেরও ছাড় দিচ্ছে না। নির্দয়ভাবে উটগুলোকে তাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।