কাতারে প্রচণ্ড গরমে জীবনঝুঁকিতে হাজারো নির্মাণশ্রমিক
কাতারে ২০২২ সালে অনুষ্ঠেয় বিশ্বকাপ ফুটবলকে সামনে রেখে বিভিন্ন স্থাপনায় কাজ করছেন হাজার হাজার শ্রমিক। প্রচণ্ড গরমের দিনে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে কাজ করতে গিয়ে নাভিশ্বাস উঠছে তাঁদের। সেখানে তীব্র তাপদাহে বহু শ্রমিক আছেন মৃত্যুঝুঁকিতে। নির্মাণশ্রমিকদের অনেকে মারাও গেছেন। তবে ঠিক কী কারণে, তাঁদের মৃত্যু হয়েছে, সে ব্যাপারে স্বচ্ছ কোনো তথ্য জনসমক্ষে প্রকাশ করেনি কাতার সরকার।
মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) এক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে।
ওই গবেষণায় কাতারসহ উপসাগরীয় সহযোগিতা সংস্থার (জিসিসি) সদস্য রাষ্ট্রগুলোতে প্রচণ্ড গরমে কাজ করা শ্রমিকদের অবস্থা তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, মৃত্যুঝুঁকিতে থাকা শ্রমিকদের মধ্যে বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালের নাগরিকরা রয়েছেন।
গবেষণায় বলা হয়, ২০১২ সালে কাতার সরকার ৫২০ জনের মৃত্যুর তালিকা প্রকাশ করে। তাদের মধ্যে ৩৮৫ জনের মৃত্যুর কারণই উল্লেখ নেই কিংবা কেন মারা গেল, তা তদন্ত করে দেখেনি দেশটির সরকার।
এইচআরডব্লিউর গবেষণা প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, মাত্রাতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতারে প্রতি বছর হাজারো শ্রমিক মারা যায়। কিন্তু কাতার সরকার এ বিষয়ে পর্যাপ্ত তথ্য প্রকাশ করে না এবং মৃত্যুর কারণও খতিয়ে দেখে না দেশটি।
২০১৬ সালের কাতার সরকার এইচআরডব্লিউকে জানায়, ওই সময়ে ৩৫ জন নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু হয়। এসব মৃত্যুর অধিকাংশের কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয় নির্মাণাধীন ভবন থেকে পড়ে যাওয়া।
তবে দেশটির দূতাবাস ও সরকারি সূত্রের বরাত দিয়ে এইচআরডব্লিউ বলছে, হার্ট অ্যাটাক ও অন্যান্য প্রাকৃতিক কারণে শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়, যা কাতার সরকার জানায়নি।
২০২২ সালে অনুষ্ঠেয় বিশ্বকাপ ফুটবলের নির্মাণ কাজ করতে গিয়ে এ বছরের জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১০ জনের মতো নির্মাণ-শ্রমিক মারা যায় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে মৃত্যুর বিভিন্ন কারণ উল্লেখ করা হলেও সেগুলো ভিত্তিহীন। তাদের মৃত্যুর মূল কারণ হৃদরোগ।
বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়ার দরিদ্র দেশগুলো থেকে প্রায় আট লাখ লোক কাতারে কাজ করতে এসেছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
শ্রমিকদের নিয়ে করা এইচআরডব্লিউর এই প্রকল্পের অন্যতম গবেষক নিকোলাস ম্যাকজিহান বলেন, ‘তাপমাত্রা বৃদ্ধিজনিত কারণে যেসব মৃত্যু হচ্ছে সেগুলো না লুকিয়ে সরকারের উচিত এ নিয়ে বিস্তারিত গবেষণা করা। তা নাহলে মৃত্যুর হার দিন দিন বাড়তেই থাকবে।’