পশুপালের মতো বিক্রি হয় বাংলাদেশি শ্রমিক
মালয়েশিয়ার পাম তেল শিল্পে নিয়োজিত বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা শ্রমিকদের জোর পূর্বক ক্রীতদাসের মতো কাজ করানো হয়। অনেক সময় শ্রমিকদের অন্যের কাছে পশুর পালের মতোই বিক্রি করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ‘দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’-এ আজ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে অবৈধভাবে দেশটিতে আসা শ্রমিকদের এমন দুরবস্থার কথা জানা যায়।
দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনে বলা হয়, জোর পূর্বক পরিশ্রম ও ইচ্ছামতো বিক্রিতেই থেমে নেই মালয়েশিয়ার পাম তেল শিল্পের বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা শ্রমিকদের দুর্ভোগ। শ্রমিকদের বেতন না দেওয়ারও অভিযোগ আছে। এ ছাড়া বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হন শ্রমিকরা।
মালয়েশিয়ার পাম বাগানে কাজ করেন ২৫ বছর বয়সী এমন এক বাংলাদেশি দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে বলেন, ‘তারা আমাদের পশুর পালের মতো বিক্রি করে।’ তিনি আরো বলেন, গত ছয় মাসে তিন ঠিকাদারের হাত বদল হয়েছেন তিনি। তবে এখন পর্যন্ত কোনো মাসের বেতনই তিনি পাননি।
অপর এক বাংলাদেশি শ্রমিক বলেন, শুক্রবার জুমার নামাজ পড়ার জন্য এক ঘণ্টা ছুটি নেওয়ায় তাঁর ঠিকাদার সপ্তাহের বেতন থেকে ৩০ শতাংশ কেটে নিয়েছেন।
বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পাম বাগান নিয়ন্ত্রণ করে ফেলডা গ্লোবাল ভেঞ্চার। প্রতিষ্ঠনটির ৮৫ শতাংশ শ্রমিকই বিদেশি। ওয়াল স্টিট জার্নালের প্রতিবেদন অনুযায়ী ওই প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধেও প্রবাসী শ্রমিকদের জোর পূর্বক খাটানো, নির্যাতন ও বেতন না দেওয়ার অভিযোগ আছে।
অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় আসা শ্রমিকদের নেওয়া এবং নির্যাতন ও বেতন না দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ফেলডা গ্লোবাল ভেঞ্চার। প্রতিষ্ঠানটির দাবি, তাদের প্রতিটি শ্রমিকের পাসপোর্ট আছে এবং তারা নিয়িমিত বেতন পায়। তবে একটি তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি শ্রমিক সংগ্রহ করে।
ফেলডা জানিয়েছ, নিজেদের মাধ্যমে সরাসরি নিয়োগ পাওয়া বিদেশি শ্রমিকরা সপ্তাহে সর্বনিম্ন ৯০০ মালয়েশীয় রিংগিত (১৮ হাজার ৩১৫ টাকা) পায়। আর চুক্তি অনুযায়ী দুই বছরে একবার দেশে যাওয়ার সুযোগ পায় শ্রমিকরা। তবে ফেলডার নীতিতে সব শ্রমিক যথেষ্ট প্রশিক্ষণ, নিরাপত্তা ও চলার মতো বেতন পাবে।
বিশ্বে পাম তেল শিল্পে প্রায় তিন হাজার কোটি মার্কিন ডলারের ব্যবসা। এর মধ্যে শুধু মালয়েশিয়া থেকেই রপ্তানি হয় এক হাজার ২০০ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের পাম তেল।
বিশ্বে মানবপাচারের শীর্ষে থাকা দেশগুলোর তালিকা থেকে মালয়েশিয়াকে বাদ দিতে তিন সপ্তাহ আগে উদ্যোগ নেয় যুক্তরাষ্ট্র। তবে এই বিষয়ে সতর্ক করে দেশটির মানবাধিকারকর্মী ও আইনপ্রণেতারা।