নিজের ছেলেকে বাঁচাতে প্রতিবেশীর ছেলেকে বলি!
ছেলে অনেক দিন ধরেই অসুস্থ। গ্রামের কোনো ডাক্তার কবিরাজের চিকিৎসায় ফল হচ্ছিল না। শেষে স্থানীয় এক ওঝাকে ডেকে ছেলের চিকিৎসা করায় বাবা কোদাই হরিজন। ঝাড়ফুঁক, তাবিজ-কবচেও যখন ফল হচ্ছিল না, তখন সেই ওঝা ছেলেকে সুস্থ করার এক অব্যর্থ উপায় বাতলালেন। কোদাইকে ওঝা জানান, সুস্থ উপায়টি ‘দেবী’ সরাসরি বলে দিয়েছেন স্বপ্নে। তাই এটি উপেক্ষা করার প্রশ্নই আসে না।
ওঝার বলে দেওয়া ওই অব্যর্থ উপায়টি ছিল, অসুস্থ ছেলেকে সুস্থ করতে হলে দেবীর চরণে ‘শিশুবলি’ দিতে হবে। আর তাতেই প্রসন্ন হয়ে অসুস্থ ছেলেকে সুস্থ করে দেবেন দেবী। এরপর, ওঝার সেই ঘৃণিত-নির্মম পরামর্শটি মেনে ছেলেকে সুস্থ করতে ১০ বছর বয়সী একটি শিশুকে নির্মমভাবে হত্যা করে কোদাই। ঘটনাটি ঘটেছে দেশটির সীমান্তবর্তী নাওয়ালপারাসি জেলার কুদিয়া গ্রামে।
ওই অঞ্চলের পুলিশের কর্মকর্তা নাল প্রসাদ উপাধ্যায় সিএনএনকে বলেন, গত শুক্রবার ১০ বছরের শিশু জীবন কোহারের গলাকাটা লাশ একটি ঝোঁপে পাওয়া যায়। এর আগে তিনদিন ধরে নিখোঁজ ছিল সে।
ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ানে জানতে পারে কয়েকদিন আগে শিশু জীবনকে খেলার মাঠ থেকে নিয়ে যায় প্রতিবেশী কোদাই হরিজন। তাকে আটক করার পরই বেরিয়ে আসে আসল ঘটনা। পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘৃণ্য হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে কোদাই। স্থানীয় এক পুরোহিতের পরামর্শে নিজের অসুস্থ ছেলের দেহ থেকে ‘অশুভ আত্মা তাড়াতে’ দশ বছর বয়সী শিশুটিকে বলি দেওয়া হয়েছে বলেও জানায় সে।
পুলিশ কর্মকর্তা নাল প্রাসাদ উপাধ্যায় জানিয়েছেন, ২১ জুলাই জীবন কহর নামের পড়শীর ওই শিশু সন্তানকে অপহরণ করে হত্যা করে সে ও তার সহযোগীরা। কোদাই পুলিশকে আরো জানায়, ঘটনার দিন বিকেলে গ্রামের মাঠে খেলছিল জীবন। এ সময় সে শিশুটিকে বিস্কুটের লোভ দেখিয়ে একটি মন্দিরে নিয়ে যায়। সেখানে জীবনকে ঘিরে বলিদানের যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা সারে ওই ওঝা এবং স্থানীয় এক পুরোহিত। সন্ধ্যা হতেই শিশুটিকে গ্রাম থেকে একটু দূরে একটি মাঠে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তিনজনে মিলে জীবনের হাত পা চেপে ধরে গলা কেটে দেয়।
এ ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃত ওই পাঁচজনের বিরুদ্ধেই খুনের অভিযোগ আনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপাধ্যায়।
উল্লেখ্য, নেপালের দুই কোটি ৮০ লাখ লোকের মধ্যে ৮০ শতাংশ হিন্দু ধর্মাবলম্বী। এদের অনেকেই দেবতাদের সন্তুষ্টির জন্য প্রায়ই ছাগল ও মহিষ বলি দিয়ে থাকে।