দুবাইয়ে ক্যানসার নিয়েও সুস্থ সন্তান প্রসব নারীর
স্বামী ও দুই সন্তান নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) দুবাইয়ে থাকেন মিসরের ৩৬ বছর বয়সী নারী রাশিদা মোহামেদ ইসমাইল মাহমুদ নামের এক নারী। স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার পর তিনি তৃতীয়বারের মতো সন্তানসম্ভবা হন। ক্যানসারের চিকিৎসার অংশ হিসেবে কেমোথেরাপি দেওয়া হয় তাঁকে। এমন বাস্তবতায় শারীরিক ক্ষতির আশঙ্কায় চিকিৎসকরা তাঁকে সন্তান ধারণ না করার পরামর্শ দেন। কিন্তু তাতে দমেননি রাশিদা। ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করেই জন্ম দিয়েছেন সুস্থ মেয়েসন্তান।
দুবাইভিত্তিক সংবাদমাধ্যম খালিজ টাইমসের খবরে বলা হয়, গর্ভধারণের ১২তম সপ্তাহে ডান স্তনে এক পিণ্ড দেখতে পান রাশিদা। এর পর মেমোগ্রাম পরীক্ষার পর তাঁর স্তনে সেই পিণ্ডের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়। তবে রাশিদা শুরুতে সেটিকে তেমন গুরুত্ব দেননি। কিন্তু কয়েক মাস পর আলট্রাসাউন্ড করেন। সেই পরীক্ষায় তাঁর স্তনে বড় ক্ষতের দেখা মেলে। এর পর কয়েকটি পরীক্ষায় দেখা যায়, তিনি স্তন ক্যানসারের দ্বিতীয় স্তরে আছেন।
ক্যানসার নির্ণয় হওয়ার পরও রাশিদা ও তাঁর স্বামী শিশুটিকে রাখতে মরিয়া হয়ে চিকিৎসার জন্য যান দুবাইয়ের এনএমসি হাসপাতালে। এর পর বিষয়টি নিয়ে বৈঠকে বসেন টিউমার বিশেষজ্ঞ বেশ কয়েকজন চিকিৎসক।
ওই হাসপাতালের অনকোলজি (টিউমারবিদ্যা) বিভাগের প্রধান ডা. মহানন্দ দিয়াব বলেন, ‘গর্ভবতী একজন নারীকে এটা বোঝানো খুবই কঠিন যে তাঁর মারাত্মক ধরনের ক্যানসার হয়েছে এবং দ্রুত এর চিকিৎসা দরকার। তিনি (রাশিদা) বিষণ্ণ হয়ে গিয়েছিলেন, তবে ভীত ছিলেন না এবং এ নিয়েই এগিয়ে যেতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন।’
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, কয়েক দফা কেমোথেরাপির পর রাশিদার অস্ত্রোপচার হয়। এর আগে-পরে চিকিৎসকরা তাঁর সন্তানের বিষয়টি দেখভাল করছিলেন। অবশেষে চলতি বছরের জুনে মেয়েসন্তানের জন্ম দেন তিনি।
ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার পরও স্ত্রী সুস্থ সন্তান প্রসব করায় আল্লাহর কাছে শুকরিয়া প্রকাশ করেন রাশিদার স্বামী। তিনি খালিজ টাইমসকে বলেন, ‘আমরা তার নাম রেখেছি নূর (আলো)। কারণ সে আল্লাহর পক্ষ থেকে পাওয়া আশার আলো। আমি সবাইকে বলতে চাই যে, আমাদের কখনোই আশাহত হওয়া উচিত নয়; শক্ত হোন, ইতিবাচক থাকুন, অসুস্থতাকে পরাজিত করতে পারবেন।’
‘আর্থিক দুরবস্থায় থাকার পরও ইউএইতে থাকা ও কাজ করায় আমি সময়ে সময়ে স্ত্রীকে চিকিৎসা করাতে পেরেছি। আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করায় হাসপাতালের কর্মী, আমার কর্মস্থলের সহকর্মী ও ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিকে (যারা আমার সব চিকিৎসা খরচ বহন করেছে) ধন্যবাদ জানাই।’