অসুস্থ হওয়া নিষিদ্ধ!
জনগণের স্বার্থে সরকার, রাষ্ট্র বা শহর কর্তৃপক্ষ কতকিছুই তো নিষিদ্ধ করে। ধূমপান নিষিদ্ধ, মদ্যপান নিষিদ্ধ, কোনো স্থানে যাওয়া নিষিদ্ধ, কোনো কিছু করা নিষিদ্ধ—এমন কত কি। তবে ইতালির শহর সেলিয়া সব কিছুকে ছাড়িয়ে গেছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের এই শহরের মেয়র আইন করে ‘অসুস্থ হওয়া’ নিষিদ্ধ করেছেন!
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে আরটি নিউজ জানিয়েছে, দক্ষিণ ইতালির ক্যালাবরিয়া অঞ্চলের ছোট শহর সেলিয়ার মেয়র আইন করেছেন, শহরে কারো অসুস্থ হওয়া নিষিদ্ধ। এমন অদ্ভুত আইনের পেছনে অবশ্য অন্য ইতিহাস আছে।
প্রত্যন্ত অঞ্চলের ইতালীয় শহর সেলিয়ায় লোকসংখ্যা মাত্র ৫৩৭। আর এই জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশের বয়স ৬৫ বা এর ঊর্ধ্বে। অর্ধশতাব্দী আগেও সেলিয়ার জনসংখ্যা ছিল এক হাজার ৩০০ জন। ছোট শহর সেলিয়াকে বাঁচাতেই মেয়র অসুস্থ হওয়া নিষিদ্ধের আইন করেছেন। কারণ সীমিত জনসংখ্যার শহরটি বাসিন্দা হারালেই অচিরেই জনশূন্য হয়ে পড়বে।
সেলিয়ার মেয়র দাভিদে জিচ্চিনেলা পেশায় একজন চিকিৎসক। শহরকে জনশূন্যতার হাত থেকে রক্ষায় তিনি বাসিন্দাদের উদ্বুদ্ধ করেন, নিজের শরীরের দিকে প্রথম লক্ষ রাখতে হবে এবং পরবর্তী লক্ষ হবে কাছের ও প্রিয়জনের। আর অসুস্থতা নিষিদ্ধের আইন অনুযায়ী, কোনো নাগরিক চিকিৎসাকেন্দ্রে গেলে তার বার্ষিক স্বাস্থ্য কর ১০ ইউরো মওকুফ করা হবে। আর কোনো নাগরিক স্বাস্থ্যসেবা নিতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে বাড়তি কর দিতে হবে।
সেলিয়া শহরের অসুস্থ নিষিদ্ধ আইনের পাশাপাশি নতুন খোলা চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়মিত শরীর পরীক্ষা করার অনুরোধ করা হয়েছে।
ইতালির অনলাইন সংবাদমাধ্যম ‘টিজিকমটুয়েন্টিফোর’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সেলিয়ার মেয়র দাভিদে জিচ্চিনেলা বেশ গর্ব করেই বলেন, আইন হওয়ার পর পরই শতাধিক বাসিন্দা চিকিৎসাকেন্দ্রের ডাক্তারদের সঙ্গে দেখা করেছেন। তিনি আরো বলেন, নতুন আইনের প্রতি শহরের বাসিন্দাদের প্রতিক্রিয়া উৎসাহব্যঞ্জক।
শহরের বাসিন্দাদের সুস্থ রাখতে আরো কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। প্রতিদিন সেলিয়া থেকে শাটল বাস সার্ভিস চালু করা হয়েছে যা শহরবাসীকে ১০০ কিলোমিটার দূরবর্তী একটি শরীরচর্চা কেন্দ্র থেকে আনা-নেওয়া করবে।
সংবাদমাধ্যম এজিআই নিউজকে সেলিয়ার মেয়র দাভিদে জিচ্চিনেলা বলেন, ‘শহরবাসীর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আমরা চিকিৎসাসেবা প্রদান করতে চাই। বাসিন্দাদের সহায়তায় আমরা শহরকে জনশূন্যতার হাত থেকে বাঁচাতে চাই।’
ইতালির জাতীয় পরিসংখ্যান সংস্থার তথ্যমতে, দেশটিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার শূন্য, আর মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশেরই বয়স ৬৫ বা তদূর্ধ্ব।