‘ট্রাম্প আমাদের সবকিছু কেড়ে নিচ্ছেন’
জেরুজালেম ইস্যুতে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে চলমান দ্বন্দ্বের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শহরটিকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেন। মার্কিন প্রেসিডেন্টের এমন সিদ্ধান্তের পর বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড়। ক্ষোভের পরিমাণটা ফিলিস্তিনিদের মধ্যে অনেক বেশি। মার্কিন প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে পশ্চিম তীর, গাজা ও জেরুজালেমের রাস্তায় বিক্ষোভে নামে তারা।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার ফিলিস্তিনের বিভিন্ন শহরের রাস্তায় বিক্ষোভে নামে শত শত ফিলিস্তিনি। এ সময় তাদের অনেকের সঙ্গে কথা বলে সংবাদমাধ্যম সিএনএন।
জেরুজালেমের প্রবেশপথ দামেস্ক গেটে অবস্থানকারী নাওয়াল শাহতে সিএনএনকে বলেন, “জেরুজালেম আমার জীবন। ট্রাম্প আসলেন, আর বলে দিলেন, ‘জেরুজালেম আর তোমাদের না…।’ এর অর্থ দাঁড়ায়, তিনি আমার কাছ থেকে সবকিছু কেড়ে নিচ্ছেন।”
৪৫ বছর বয়সী এই নারী আরো বলেন, ‘জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী ঘোষণার আগেই আমরা এখানে প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতাম। আর এখন কী হবে? তৃতীয় একটি ইন্তিফাদা (গণঅভ্যুত্থান) মুখোমুখি হচ্ছি আমরা।’
ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্তের পর ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া আরো কঠিন হয়ে পড়বে বলে ধারণা করছেন জর্জ আসাদ (৪৩) নামের এক ফিলিস্তিনি। খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী এই বিক্ষোভকারী সিএনএনকে জানান, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ ইসরায়েলের পক্ষে। ইসরায়েল বারবার বলেছে, তারা শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে। তবে বাস্তবে এমন কিছুই ঘটেনি।
বৃহস্পতিবার সকালে ফিলিস্তিনের রামাল্লা শহরের আল-মানারা স্কয়ারে জড়ো হয় বিক্ষোভকারীরা। সেখানে রানিয়া (৪৮) নামের এক ফিলিস্তিনি সিএনএনকে বলেন, ইসরায়েলের সঙ্গে আর কোনো সম্পর্ক নেই। তাদের সঙ্গে সব ধরনের চুক্তি প্রত্যাহার করতে হবে। তৃতীয় একটি গণঅভ্যুত্থান শুরু হবে।
এ সময় আরব নেতাদের প্রতি ধিক্কার জানিয়ে রানিয়া বলেন, ‘তাঁরা আমাদের বিক্রি করে দিয়েছেন।’
হানা দ্রেইদি (৫০) নামের আরেক ফিলিস্তিনি নারী সিএনএনকে বলেন, জেরুজালেম মানেই ফিলিস্তিন। তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের অধিকারগুলো জানি এবং জানি যে জেরুজালেম আমাদের অধিকার। তাঁর (ট্রাম্প) ঘোষণার মাধ্যমে এটি আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নিতে পারবেন না।’
সিএনএনের খবরে বলা হয়, ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরেও ছড়িয়ে পড়েছে বিক্ষোভ। বিক্ষোভকারীদের দমনে মোতায়েন করা হয়েছে শত শত ইসরায়েলি সেনা। রেড ক্রিসেন্টের তথ্য অনুযায়ী, বেথলেহেম ও রামাল্লায় ইসরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে আহত হয়েছে কমপক্ষে ৪৯ বিক্ষোভকারী।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, গাজায় এক ভাষণে হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়া নতুন করে যুদ্ধের ডাক দিয়েছেন। এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে গাজা উপত্যকার বিভিন্ন এলাকা থেকে গুলির শব্দ শোনা গেছে।
এদিকে ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে ফিলিস্তিনি নাগরিকরা শুক্রবার ‘বিক্ষোভ দিবসের’ ডাক দিয়েছে।
গত বুধবার জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেন ট্রাম্প। ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে চলমান দ্বন্দ্বকে আরো সংকটময় করবে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা। এ ছাড়া এই পদক্ষেপ ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানের চলমান প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত করবে।
ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্তে বেশ শঙ্কিত সৌদি আরবসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতারা। এ বিষয়ে নিজেদের প্রতিক্রিয়ার কথা জানিয়েছেন তাঁরা। জেরুজালেমে ইসরায়েলের রাজধানী স্থানান্তর ‘ভয়াবহ পরিণতি’ ডেকে আনবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছে জর্ডান। একই ধরনের প্রতিক্রিয়া তুরস্কেরও। শুক্রবার এ নিয়ে আলোচনায় বসবে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ।
তবে জেরুজালেম ইস্যুতে বিশ্বব্যাপী সমালোচনার ঝড় উঠলেও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ট্রাম্পের প্রশংসা করে বলেন, জেরুজালেমের দীর্ঘদিনের ইতিহাসে তার নাম লেখা থাকবে। এ সময় তিনি ট্রাম্পকে অনুসরণ করার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান।
জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে ঘোষণার সিদ্ধান্তটি বেশ পুরোনো। ১৯৯৫ সালেই মার্কিন কংগ্রেস অনুমোদিত এক আইনে ইসরায়েলের মার্কিন দূতাবাস তেলআবিব থেকে জেরুজালেমে স্থানান্তর করার নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে সাবেক সব প্রেসিডেন্টই ক্ষমতায় থাকাকালীন ওই প্রক্রিয়া বিলম্বিত করার জন্য স্বাক্ষর করেন।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর একই পথে হেঁটেছিলেন ট্রাম্পও। তবে এবার বেঁকে বসেছেন তিনি। হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ইসরায়েলে মার্কিন দূতাবাস স্থানাস্তর বিলম্বের জন্য প্রেসিডেন্টের স্বাক্ষরের শেষ দিন। আর এদিন স্বাক্ষর করবেন না বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প।
১৯৬৭ সালে পূর্ব জেরুজালেম দখল করে নেয় ইসরায়েল। পরে ১৯৮০ সালে তারা পূর্ব জেরুজালেমকে অধিগ্রহণ করে নেয় এবং ইসরায়েলের অংশ হিসেবে ঘোষণা করে। তবে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী ওই অঞ্চলকে দখলকৃত হিসেবেই বিবেচনা করা হয়।