এই দ্বীপ শুধু নারীদের, পুরুষরা নিষিদ্ধ কেন জানেন?
ফিনল্যান্ডের হেলসিংকির কোল ঘেঁষে চলে গেছে বাল্টিক সাগর। শীতল এই নীল জলরাশির উপকূলে সবুজে ঘেরা ছোট্ট একটি দ্বীপ; শান্ত, স্নিগ্ধ। তার নাম ‘সুপার-শি’। ‘শি’ দেখেই আপনার মনে কৌতূহল জাগতে পারে এই দ্বীপ নিয়ে। এর সঙ্গে নারীদের কোনো সম্পর্ক আছে কি?
‘সুপার-শি’-এর সঙ্গে নারীদের সম্পর্ক আছে তো বটেই। তবে তার চেয়ে বড় তথ্য হচ্ছে, এই দ্বীপের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পুরুষদের চোখে অধরাই থেকে যাবে। মানে এখানে ‘পুরুষ নিষিদ্ধ’।
ভাবছেন এটা কী করে সম্ভব? আর কেন-ই বা এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে?
পৃথিবীতে তো এমন অনেক স্থান আছে যেখানে নারীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আর ‘সুপার-শি’ দ্বীপে কি না তার উল্টো! এই যেমন ধরুন, জাপানের ওকিনোশিমা দ্বীপের কথা। এখানে নারীদের প্রবেশ কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। এই দৃষ্টান্ত মাথায় রেখেই কি শুধু নারীদের জন্য দ্বীপটি তৈরি করা হয়েছে? বা দ্বীপে পুরুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে?
এর উত্তর জানতে হলে শুনতে হবে দ্বীপটির মালিক আমেরিকান উদ্যোক্তা ক্রিস্টিনা রোথের কাছে। তিনিই এই দ্বীপটিতে পুরুষ নিষিদ্ধের মতো অভিনব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাহলে শোনা যাক, রোথের কথা।
ক্রিস্টিনা রোথ একবার অবসর কাটাতে আমেরিকার একটি রিসোর্টে যান। সেখানেই রোথের মাথায় এই অভিনব চিন্তাটা আসে। কারণ, সেখানে গিয়ে পর্যটকদের আচার-আচরণ দেখে রোথের উপলব্দি হয়, নারী পর্যটকদের প্রতি পুরুষ পর্যটকদের আচরণটা ঠিক স্বাভাবিক না। কোথায় যেন একটা অবহেলা, ক্ষোভ কাজ করছে। পাশাপাশি তিনি খুব গভীরভাবে খেয়াল করেন, নারীদের নিজের প্রতি যত্ন বা মনোযোগ কোনোটিই নেই। তাদের সব মনোযোগ পুরুষ সঙ্গীদের ওপর। তিনি দেখতে পান, কোনো নারী পর্যটক হয়তো মনোযোগ দিয়ে একটি কাজ করছেন। কিন্তু কোনো সুদর্শন পুরুষ দেখলেই লিপিস্টিক দিতে শুরু করলেন।
সেই থেকেই রোথের চিন্তা শুধু নারীদের জন্যই তিনি একটি দ্বীপ বানাবেন। যেখানে নারী তাঁর নিজের মতো থাকবেন এবং নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকবেন। রোথের প্রথম চিন্তা ছিল অবকাশকেন্দ্রটি নিজের দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে করবেন। সেই অনুযায়ী একটি পরিকল্পনাও করে ফেলেন।
কিন্তু এরই মাঝে রোথের সঙ্গে এক ফিনিশিয় যুবকের দেখা হয়, তারপর দুজনের কথায়-কথায় তা হৃদয় দেয়া-নেওয়ার পর্যায়ে যায়। প্রেমিকের সঙ্গে তাঁর দেশ দেখতে গিয়ে ফিনল্যান্ডের প্রেমে পড়ে যান রোথ। কালবিলম্ব না করে সিদ্ধান্ত পাল্টে ফেলেন রোথ, মার্কিন মুল্লুকে নয়, স্বপ্নের রিসোর্টটি তিনি বানাবেন ফিনল্যান্ডেই।
দেরি না করে আট দশমিক চার একরের ‘সুপার-শি’ দ্বীপকে বিশালবহুল অবসরকেন্দ্রে রূপ দিতে কাজ শুরু করে দেন রোথ। জানিয়েছেন, নারীদের অবসর যাপন ও স্বাস্থ্যগত যত্নের সব ব্যবস্থাই থাকবে এই দ্বীপে। নারীদের জন্য স্পা, ইয়োগার পাশাপাশি রান্নার ক্লাসও চলবে এখানে।
তাহলে রোথের ‘শুধু নারীদের জন্য’ এই অভিনব দ্বীপ বানানোর ক্ষেত্রে কোনো ‘পুরুষ-বিদ্বেষ’ মনোভাব কী কাজ করেছে? রোথ বলছেন,না। পুরো ভাবনার পেছনে পুরুষদের প্রতি কোনো বিদ্বেষ কাজ করেনি। বরং ক্রিস্টিনা রোথ জানিয়ে রেখেছেন, ভবিষ্যতে নারীদের অতিথি হয়ে পুরুষরাও হয়তো তাঁর এই দ্বীপে আসবেন। কিন্তু দ্বীপে প্রাধান্য পাবেন নারীরাই।
এরই মধ্যে ‘সুপার-শি’ দ্বীপে পাঁচটি বিলাশবহুল কেবিন তৈরি হয়ে গেছে। লক্ষ্য দশটি কেবিনের। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী জুনেই যাত্রা শুরু করবে বিশ্বের প্রথম শুধু নারীদের জন্য এই দ্বীপ।