২৩ বছর জেল খাটার পর নির্দোষ প্রমাণিত
জীবনের টানা ২৩ বছর কারাগারের গারদের ভেতর কাটিয়েছেন শিকাগোর নেভেস্ট কোলম্যান (৪৯)। ১৯৯৪ সালে আন্টুইনিকা ব্রিজম্যানকে (২০) ধর্ষণ ও নির্মমভাবে হত্যার দায়ে কোলম্যানকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
কিন্তু ২৩ বছর পর তাঁর জীবনে এক ‘মিরাকল’ ঘটে গেল। ডিএনএ টেস্টে বেরিয়ে এলো তিনি সেই হত্যার সঙ্গে জড়িতই ছিলেন না ! তিনি নির্দোষ !
‘ইনোসেন্ট প্রজেক্ট’ নামে শিকাগোর এক সংস্থার সূত্রে জানা যায়, কোলম্যান এবং আরো দুই ব্যক্তির কাছ থেকে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায় করেছিল শিকাগো পুলিশ। এরপর তাঁদের রায় ঘোষণা করতে আরো তিন বছর লেগে যায়।
আইনজীবীরা বারবারই তাঁর রায়কে মৃত্যুদণ্ডের দিকে ঢেলে দিচ্ছিলেন। কিন্তু তাঁর বন্ধু পো, স্মিথসহ অন্যদের সাক্ষ্যের কারণে তিনি মৃত্যুদণ্ড থেকে বেঁচে যান। তবে তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
২০১৬ সালে নেভেস্টের মামলাটির পুনঃতদন্ত শুরু হয়। মামলার আলামত ডিএনএ পরীক্ষার জন্য অপরাধ গবেষণাগারে পাঠানো হয়। পরীক্ষায় তাঁর নির্দোষ হওয়ার প্রমাণ বেরিয়ে আসে। এরপর ওই বছরেরই নভেম্বরে তিনি কারাগার থেকে বেরিয়ে আসেন।
হোয়াইট সক্স স্টেডিয়ামে খেলতেন নেভেস্ট কোলম্যান। জেল থেকে বেরিয়েই বললেন, ‘আমি কিছুক্ষণের জন্য সেখানে আবার বসতে চাই। আমার পরিবারের খোঁজ নিতে চাই। এরপর কোমিস্কি পার্কে আবারও ফিরতে চাই আমি।’
শিকাগোর হোয়াইট সক্সের সঙ্গে আবারও কাজ করতে পেরে খুবই খুশি কোলম্যান। তিনি বলেন ‘আমাকে নতুন করে নিয়োগ দিতে হবে না তাদের। হোয়াইট সক্স আমাকে যে সুযোগ দিল তাতে আমি খুবই আনন্দিত।’
হোয়াইট সক্স কর্তৃপক্ষ থেকে বলা হয়, ‘দুই দশক পরে হলেও কোলম্যান সুবিচার পেয়েছে এতে আমরা কৃতজ্ঞ। একটা লম্বা সময় পেরিয়ে গেছে, কিন্তু আমরা হোয়াইট সক্স পরিবার তাঁকে আবারও স্বাগত জানানোর সুযোগ পেয়েছি, এটা বিশাল। এতেই আমরা রোমাঞ্চিত।
তবে এত বছরের অহেতুক কারাভোগে কোনো ক্ষোভ নেই কোলম্যানের মনে। তিনি বলন ‘আমি কষ্ট পেলে, আমার চারপাশের মানুষগুলো কষ্ট পাবে। রাগ করলে, তারাও রাগ করবে। রাগ কেন করব? এটা নতুনভাবে বাঁচার সময়। আমার ছেলে, মেয়ে নাতি, নাতনী আছে। আমার কষ্টের কারণে তাদের কেন কষ্ট দেব? আমি এতদিন বেঁচেছি এবং আমার সর্বোচ্চটা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। কখনো তো রাগ করিনি।’
কোলম্যানের দুই বন্ধু জেরি পো এবং হ্যারি স্মিথ ১৯৯০ সাল থেকে তাঁকে সঙ্গ দিয়ে আসছে। তাঁরা এখনো হোয়াইট সক্সেই আছেন। মামলা চলাকালীন তাঁরাই বারবার কোলম্যানের সৎচরিত্রের সাক্ষ্য দিচ্ছিলেন। এই ২৩ বছর বন্ধুর জন্যে অপেক্ষা করছিলেন এই দুই বন্ধু।
বন্ধুদের দেখে আপ্লুত হন কোলেম্যানও। তিনি বলেন, ‘আমাকে স্বাগত জানাতে ওরা দাঁড়িয়ে ছিল। এটা খুব আনন্দের একটা মুহূর্ত। তাঁরা শুধু আমার জন্য অপেক্ষা করছিল। এটা অসাধারণ অনুভূতি। মাঠে হাঁটা, এটাও সম্পূর্ণ আলাদা অনুভূতি।’