ভাড়ায় বিরক্ত তরুণীর জীবন কাটছে ট্রেনে!
সারা দিন কাজ শেষে বাড়ি ফেরার জন্য যখন সবাই ট্রেন থেকে নামে তখন সেই ট্রেনেই বসে থাকেন নিওন মুলার। কারণ তিনি ট্রেনেই বাস করেন। ট্রেনই তাঁর ঘরবাড়ি। আর বিষয়টা খুব উপভোগও করেন মুলার।
জার্মানির একটি কলেজের শিক্ষার্থী মুলার যে ভাড়াবাড়িতে বাস করতেন, গত বসন্তে সেটি তিনি ছেড়ে দিয়েছেন। এ বিষয়ে এক ইমেইলে ওয়াশিংটন পোস্টকে তিনি বলেন, ‘আমার বাড়িওয়ালার সাথে বিতর্কের মধ্য দিয়ে এটা শুরু হয়। সেই সময়ই আমি হঠাৎ করে সিদ্ধান্ত নিই যে এখানে আমি আর থাকব না। এর পরই আমি উপলব্ধি করি যে, আমি আসলে কোনো জায়গাতেই আর বাস করতে চাই না।’
এর পরিবর্তে মুলার রেলওয়ের একটি বিশেষ সেবা কেনেন। যার মাধ্যমে তিনি দেশের যেকোনো ট্রেনে ভ্রমণ করতে পারবেন। তাই এখন আর মুলারকে বাসা ভাড়া নিয়ে চিন্তা করতে হয় না। এখন ট্রেনের স্নানাগারেই চুল ধোয়ার কাজ সেরে নেন তিনি। আর প্রতি ঘণ্টায় ১৯০ কিলোমিটার বেগে চলতে চলতেই ক্লাসের পড়া তৈরি করেন তিনি। ভাড়া করা অ্যাপার্টমেন্টটি ছেড়ে আসার পর নিজের এই স্বাধীনতা দারুণ উপভোগ করছেন বলেও জানান মুলার। তিনি বলেন, ‘আমি ট্রেনটাকেই আমার বাড়ি ভেবে নিয়েছি। আমি খুব সহজেই আত্মীয়-বন্ধুদের বাড়িতে যেতে পারি। আমার সব সময়ই মনে হয় যে, আমি ছুটি কাটাচ্ছি।’
মুলারের জীবন একটা ছোট ব্যাকপ্যাকেই এঁটে গেছে। এই ব্যাকপ্যাকেই প্রয়োজনীয় কাপড়, তার ট্যাবলেট কম্পিউটার, কলেজের বইপত্র আর কিছু টুকটাক সামগ্রী ভরে ঘুরে বেড়ান মুলার। নিজের এই জীবন সম্পর্কে জার্মান এই তরুণী বলেন, ‘আমি লিখি, আমি পড়ি, আমি জানালা দিয়ে বাইরেটা দেখি এবং প্রতি মুহূর্তেই নতুন নতুন মানুষের সঙ্গে মিশি।’
এভাবে ট্রেনে বসবাসের কারণে মুলারের বেশ কিছু অর্থও সাশ্রয় হচ্ছে। যে টিকিটে তিনি ট্রেনে ভ্রমণ করেন সেটার দাম ৩৮০ মার্কিন ডলার। অথচ একটি ফ্ল্যাট ভাড়ার পেছনে তাকে গুনতে হতো পুরো সাড়ে চারশো ডলার। তবে শুধু সস্তায় থাকতেই তিনি এই পথ বেছে নেননি। মুলারের মতে, যা কিছু স্বাভাবিক বা অভ্যাসগত বিষয় সেসব নিয়ে মানুষকে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে উদ্বুদ্ধ করেন তিনি। কারণ আমরা যা চিন্তা করি তার বাইরেও বেঁচে থাকার আরো অনেক পন্থা আছে।
যদিও মাঝে মাঝে নিজের আত্মীয়, বন্ধু, মা, দাদি বা ছেলেবন্ধুর বাড়িতে রাত কাটান মুলার। তবে প্রায়ই রাতভর ভ্রমণ করেন তিনি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমার আত্মীয়স্বজনরা অনেক দূরে দূরে থাকেন। কিন্তু ট্রেনে বাস করার কারণে আমার প্রায়ই তাদের সঙ্গে দেখা হয়।
মুলারের এই জীবনযাপনকে অনেকেই দারুণ বলে মনে করলেও কেউ কেউ নেতিবাচক প্রতিক্রিয়াও দিয়েছেন। তবে এই জীবনযাপনের কিছু কারণও আছে তাঁর। স্নাতক শ্রেণির একটি গবেষণায় মুলার বেছে নিয়েছেন আধুনিক রেল-যাযাবরদের জীবন যাপনকে। তাই নিজের সব অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখতে পারছেন তিনি।
ট্রেনে বাস করার তাহলে কি কোনো সমস্যা নেই? ওয়াশিংটন পোস্টের এমন প্রশ্নের জবাবে মুলার বলেন, আশপাশের আওয়াজ সবচেয়ে সমস্যা করে। একটা ভালো হেডফোন থাকলেই সব গোলমাল এড়ানো যায়।