সৌদি আরবে প্রতি দুদিনে একজনের মৃত্যুদণ্ড!
গেল এক বছরে কমপক্ষে ১৭৫ জন ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে সৌদি আরবে। অর্থাৎ দেশটিতে গড়ে প্রতি দুদিনে অন্তত একজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সদ্য প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
৪৩ পৃষ্ঠার এ প্রতিবেদনটির শিরোনাম ‘কিলিং ইন দ্য নেম অব জাস্টিস : দ্য ডেথ পেনাল্টি ইন সৌদি অ্যারাবিয়া’। প্রতিবেদনটির ভাষ্যমতে, ১৯৮৫ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৫ সালের জুন মাস পর্যন্ত কমপক্ষে দুই হাজার ২০৮ জন ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে দেশটিতে।
এ বছরের জানুয়ারি মাস থেকে এখন পর্যন্ত ১০৯ জন ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে দেশটিতে, বলছে এপির খবর। ২০১৪ সালের পুরো বছর মিলিয়ে এই সংখ্যা ছিল ৮৩, সেখানে এ বছর অর্ধেক পেরোতেই আগের বছরের সংখ্যা অতিক্রম করে গেছে। গত ১২ মাস মিলিয়ে এই সংখ্যা কমপক্ষে ১৭৫। দেশটি কড়াভাবে ইসলামী আইন মেনে চলে। এই মৃত্যুদণ্ডগুলোর পেছনে কারণ ছিল খুন, ধর্ষণ, মাদকদ্রব্য, চোরাচালানের মতো অপরাধ। এ ছাড়া ছিল কিছু ‘ভিন্ন’ ঘরানার ‘অপরাধ’, যেমন—বিবাহবহির্ভূত যৌন সম্পর্ক, ধর্মান্তর এবং ডাকিনীবিদ্যার চর্চা। এই ‘অপরাধ’গুলোর জন্যও ওই দেশে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে।
শুধু তাই নয়, ১৮ বছরের কম বয়সী কোনো ব্যক্তিও যদি এসব অপরাধ করে, মৃত্যুদণ্ড থেকে রেহাই নেই তারও। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকাবিষয়ক প্রোগ্রামের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক বুমিদউহা এক বিবৃতিতে বলেন, ‘সৌদি আরবের ত্রুটিপূর্ণ বিচারব্যবস্থার কারণে বিশাল মাপে বিচারিক রায়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হচ্ছে।’
প্রতিবেদনে আলোকপাত করা একটি ঘটনা এমন, হাশিশ সেবনের অপরাধে একই পরিবারের দুই ভাইকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। অ্যামনেস্টির প্রতিবেদন উল্লেখ করেছে, মৃত্যুদণ্ডের আগে কঠিনভাবে নির্যাতন করা হয় দুজনকেই। এ নির্যাতনের মাধ্যমেই তাদের কাছ থেকে স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়েছিল। এ প্রতিবেদন সৌদি আরবের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠালেও এখনো তার কোনো জবাব পায়নি অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় শিরশ্ছেদের মাধ্যমে, মাঝেমধ্যে ফায়ারিং স্কোয়াডে গুলি করেও কাজ সারা হয়। বিশেষ ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পর মৃত ব্যক্তির দেহ সাধারণ মানুষের সামনে দেখানো হয়, এর মাধ্যমে অন্য মানুষের অপরাধের বিষয়ে সতর্ক করা হয়।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে সৌদি আরবে প্রচলিত ইসলামী আইনে ভিকটিমের পরিবার শাস্তির বিষয়ে নিজেদের মতামত রাখতে পারে। তারা ক্ষমা করে দিলে মৃত্যুদণ্ড রদ হতে পারে, আবার চাইলে তারা দণ্ড বহালও রাখতে পারে, আবার ‘রক্তের দাম’ হিসেবে ক্ষতিপূরণও নিতে পারে অপরাধীর কাছ থেকে।
২০১২ সালে একজন বাবা তাঁর ছেলের হত্যাকারীকে ক্ষমা করে দেন। এতে মৃত্যুদণ্ড থেকে রেহাই পায় সেই দণ্ডিত ব্যক্তি।
প্রতিবেদন অনুসারে, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে অর্ধেকই বিদেশি নাগরিক। এদের অধিকাংশই সৌদি আরবের ভাষা বা আদালত বা আইনের রীতিনীতি জানতেন না। এই মৃত্যুদণ্ডগুলোর এক-তৃতীয়াংশ ছিল মাদকদ্রব্য চোরাচালান বা ব্যবহার-সংক্রান্ত।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল উল্লেখ করে, এই প্রতিবেদনের গবেষকদের দেশটিতে ঢুকতে দেয়নি সৌদি কর্তৃপক্ষ। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের (মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আগে) সঙ্গে, তাঁদের পরিবার এবং আইনজীবীদের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে লন্ডনকেন্দ্রিক এই আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা। সে সঙ্গে সহজলভ্য আদালতের নথিপত্রের সহায়তাও নেওয়া হয়েছে।