গ্রিসের নতুন প্রধানমন্ত্রীর প্রথাবিরোধী শপথ
প্রথার বাইরে গিয়ে শপথ নিলেন গ্রিসের নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী অ্যালেক্সিস চিপ্রাস। ধর্মের নামে নয়, তিনি গ্রিক জনগণের নামে সব সময় তাদের স্বার্থরক্ষায় কাজ করার শপথ নিয়েছেন।
এই প্রথমবারের মতো কোনো গ্রিক প্রধানমন্ত্রী আর্চবিশপের কাছ থেকে পবিত্র পানি গ্রহণ না করেই শপথ নিলেন। গ্রিসের ১৫০ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে কমবয়সী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়া চিপ্রাস অনুষ্ঠানে স্যুটের সঙ্গে টাইও পরেননি।
শপথ নেওয়ার পর প্রথমেই চিপ্রাস ছুটে যান অ্যাথেন্সের কাইসারিয়ানিতে। সেখানে জাতীয় প্রতিরোধ স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে কমিউনিস্ট আন্দোলনের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। ১৯৪৪ সালের ১ মে এই স্থানে কমিউনিস্ট আন্দোলনের দুইশ গ্রিক যোদ্ধাকে হত্যা করেছিল নাৎসি বাহিনী। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর প্রথমেই সেই শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানালেন বামপন্থী দল সিরিজা পার্টির এই নেতা। এ সময় হাজারো সমর্থক সেখানে উপস্থিত থেকে নতুন প্রধানমন্ত্রীকে অভিবাদন জানান।
অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যম গ্রিনলেফট তাদের এক প্রতিবেদনে বলেছে, শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর এ ঘটনা গ্রিকদের আবেগী করলেও জার্মানির জন্য এটি এক কঠিন বার্তা।
রোববার অনুষ্ঠিত গ্রিসের সাধারণ নির্বাচনে বিজয়ী হয় ব্যয়-সংকোচন নীতিবিরোধী বামপন্থী সংগঠন সিরিজা পার্টি। তবে সরকার গঠনের জন্য ১৫১টি আসন প্রয়োজন হলেও তারা পায় ১৪৯টি। সরকার গঠনের জন্য রক্ষণশীল গ্রিক ইনডিপেনডেন্ট পার্টির সঙ্গে জোট গঠন করে তারা। এর পরই সোমবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন অ্যালেক্সিস চিপ্রাস।
ইনডিপেনডেন্ট পার্টির নেতা পান্নোস ক্যামোনোসের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা জানিয়েছে, সরকার গঠনের জন্য চিপ্রাসকে আস্থা ভোট দিয়েছেন তারা। তবে কী শর্তে এই সমর্থন, সে সম্পর্কে কিছু পরিষ্কার করেননি তিনি। গ্রিসের রাজনীতিতে এ দুটি দলের মতাদর্শে বিস্তর ফারাক রয়েছে।
ব্যয়-সংকোচন করে ঋণের বোঝা কমিয়ে আনতে কাজ করছিল দেনায় জর্জরিত গ্রিসের আগের সরকার। তবে নিজের নির্বাচনী ইশতেহারে ব্যয়-সংকোচন ও চাকরি থেকে ছাঁটাইয়ের কড়া বিরোধিতা করেছেন চিপ্রাস। জয়ের পর এসব বাস্তবায়ন করাই হবে তাঁর মূল চ্যালেঞ্জ। কারণ, কাজ শুরুর আগেই বিরোধিতার মুখে পড়েছেন তিনি। বিবিসি বাংলা তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, চিপ্রাস ক্ষমতায় এসে আগের সরকারের ব্যয়-সংকোচন নীতির অবসান ঘটানোর ঘোষণা দিলেও ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা বলেছেন, গ্রিসের আগের সরকারের কর্মকাণ্ডের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। পুরো বিষয়টি কীভাবে মোকাবেলা করে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবেন চিপ্রাস, সেটাই এখন দেখার বিষয়।