মাসে ১০০ বই পড়েন এই নারী, আপনিও পারবেন!
জার্মানির বার্লিনের বাসিন্দা তেরেজ কাজ করেন বিজনেস ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার হিসেবে। আশ্চর্যজনক কর্ম করে ফেলেছেন তিনি। এক মাসে মনস্তত্ত্ব, রাজনীতি ও নেতৃত্ব বিষয়ক শতাধিক বই পড়েছেন। অবিশ্বাস্য হলেও এটা সত্যি।
ঘটনাটা শুরু হয় একটা বাজি ধরা থেকে। তেরেজের এক সহকর্মী তাঁকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন এবং ম্যালকম গ্ল্যাডওয়েলের লেখা বিখ্যাত বই ‘দ্য স্টোরি অব সাকসেস’ মাত্র দুই ঘণ্টায় পড়ে শেষ করতে বলেন। কিন্তু সে অনুযায়ী যথাসময়ে তেরেজ বইটি শেষ করে উঠতে পারেননি। প্রথম কয়েক অধ্যায় তুলনামূলক দ্রুত পড়ে উঠতে পারলেও মাত্র দুই ঘণ্টায় পুরো বই শেষ করা অসম্ভব। ফলে বাজিটা হেরে যান তেরেজ। কিন্তু সেটা থেকেই তার মাথায় একটা বুদ্ধি খেলে যায়।
তেরেজ খুঁজে খুঁজে বেশ অনেক ওয়েবসাইট, ব্লগ আর অ্যাপস বের করেন। সবগুলো থেকে শেষমেশ তিনি ব্লিংকিস্ট অ্যাপটাই বেছে নেন। এটার মাধ্যমে বইকে বাইট-সাইজ কনটেন্টে রূপান্তর করেন।
একদম শুরুর দিকের সেবাদাতা হিসেবে দুই হাজারের ওপর বই দ্রুত পাঠ পদ্ধতির আওতায় আনা আছে ব্লিংকিস্টের, যার ভেতর ছিল ম্যালকম গ্লাডওয়েলের বইটিও। তেরেজ এই জেনে আস্থা পান যে প্রত্যেক বইয়ের সারসংক্ষেপ তৈরি এবং উন্নত সেবা নিশ্চিত করতে ব্লিংকিস্টের সঙ্গে কাজ করেন শতাধিক বিশেষজ্ঞ। বইগুলোর অডিও তেরেজকে আরো বেশি আগ্রহী করে। দিনভর যেকোনো সময় খুব সহজেই সেগুলো শোনা যায়।
এই প্রক্রিয়ায় বই পড়তে পারার অনুপ্রেরণা থেকে তেরেজ আরেকটা লক্ষ্য ঠিক করেন যে, এবারে সারসংক্ষেপ পড়ার ভেতর দিয়ে এক মাসে ১০০টি বই পড়ে শেষ করবেন।
কতগুলো বই পড়েছেন—এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তেরেজ বলেন, ‘সত্যি বলতে সঠিক সংখ্যাটা হলো ১০২। শুনতে অনেক মনে হলেও এটা সম্ভব। ব্লিংকিস্ট দিয়ে একটা বই পড়তে মাত্র ১০ থেকে ১৫ মিনিট সময় লাগে। আমি নিজের মতো করে সময়-সুযোগ অনুযায়ী দিনে অন্তত তিনটা বই পড়ে ফেলি, তাও সেটা যাত্রাপথেই।’
এর ভেতর কী কী মজাদার বই পড়া হলো—জানতে চাইলে তেরেজার উত্তর ছিল, ‘প্রায় অনেক। যেমন ড্যান এরিয়েলির লেখা ‘প্রেডিক্ট্যাবলি ইর্যাশনাল’ বইটি পড়ে শিখলাম যে আমি যদি বন্ধুদের সঙ্গে দল বেঁধে কোথাও রাতের খাবার খেতে যাই, তাহলে আমার উচিত হবে নিজের খাবারটা নিজেই এবং আগেভাগে অর্ডার করা। তাতে করে নিজের সিদ্ধান্তে এবং নিজের পছন্দে খাবার নির্বাচনের একটা আনন্দ আমি পাব। শুনতে কিছুটা উদ্ভট লাগলেও এটা সত্যি।’
তেরেজ বলেন, “ডেভ অ্যাসপ্রির ‘বুলেটপ্রুফ ডায়েট’ বই পড়ে মনে হচ্ছে আমার কফিতে দুধের বদলে বাটার দেওয়াই মনে হয় বেশি স্বাস্থ্যকর হবে, যদিও আমি এখনো এটা চেষ্টা করিনি।” তিনি বলেন, “ক্রিস্টোফার রায়ান ও চাচিল্ডা জেথার লেখা বই ‘সেক্স অ্যাট ডন’ পড়ে জানতে পারলাম, কৃষি সভ্যতা সূত্রপাতের আগে পুরুষের চেয়ে নারীর যৌন স্বাধীনতা বেশি ছিল।”
তেরেজা বলেন, “আমি এখন গাছের দিকে ভিন্ন দৃষ্টিতে তাকাই। তাদেরও সত্তা আছে, এবং তারা অনেক কিছুই ক্রমাগত শিখতে থাকে। সে জন্যই দেখা যায় প্রত্যকে গাছ নিজের পাতাগুলো আলাদা আলাদা বিন্যাসে সাজায়। পিটার ওলবেনের ‘দ্য হিডেন লাইফ অব ট্রিজ’ বইটা থেকে আমি এসব জেনেছি।”
প্রিয় লেখক কে? এমন প্রশ্নের জবাব ছিল, ‘এর উত্তর অনেক কঠিন। আমি ডেল কার্নেগির বই পড়তে ভালোবাসি। আত্মনির্ভরতা জন্য এগুলো ক্ল্যাসিক বই। মানব প্রজাতি নিয়ে রিচার্ড ডকিন্সের বইও খুবই দারুণ।’
তেরেজ বলেন, “ড্যান এরিয়েলির ‘প্রেডিক্ট্যাবলি ইর্যাশনাল’ বইটা আমার কাজ নিয়ে অন্তর্দৃষ্টি অর্জনে এ পর্যন্ত আমাকে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করেছে।”
ব্লিংকিস্টের মাধ্যমে এই পড়ার ব্যাপারটা অন্যদেরও উৎসাহিত করতে চান কিনা জানতে চাইলে তেরেজ বলেন, ‘অবশ্যই, আমি, আমরা নানাভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে এমনিতেই তো প্রচুর সময় কাটাই। তার চেয়ে এটা অনেক ভালো।’ তিনি বলেন, ‘আমার কাজটা অনেক পরিশ্রমের। কাজ শেষে মাথাটা একদম ফাঁকা হয়ে যায়। তখন ব্লিংকিস্টে ঢুকে একটা বই পড়া আমার মস্তিষ্কের জন্য স্ন্যাকসের মতো কাজ করে। আমি প্রায়মুহূর্তেই ৪০০ পাতার একটা বই পড়ে ফেলি। এই ভেবে এখন আমি খুশি যে আমার সময়টাকে এখন ভালো একটা কাজে লাগাতে পারছি। এখন প্রতিদিনই আমি আগের দিনের চেয়ে জ্ঞানী হয়ে ঘুম থেকে জেগে উঠি।’