৩২০০ কোটি ডলার ‘বিলালেন’ সৌদি বাদশাহ
ইউরোপীয় নেতারা এখনো সব ক্ষেত্রে ব্যয় কমানোর জন্য লড়াই করে যাচ্ছেন। মার্কিন কংগ্রেসে বাজেট নিয়ে আরেকটি বাকবিতণ্ডার আভাসও পাওয়া যাচ্ছে। তবে সৌদি আরবে আপনি বাদশাহ হলে এ ধরনের কোনো ঝামেলায় পড়বেন না, রাজ-আদেশে সাধারণ সৌদি নাগরিকদের জন্য শত শত কোটি মার্কিন ডলার খরচ করতে পারবেন। করেছেনও। নতুন সৌদি বাদশাহ অভিষিক্ত হওয়ার পর জনগণকে উপহার দিতে এখন পর্যন্ত ব্যয় করেছেন তিন হাজার ২০০ কোটি ডলার!
রিয়াদভিত্তিক বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান অ্যাশমোর গ্রুপের মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলের পরিচালক জন স্ফিকিয়ানকিস বলেন, সৌদি আরবে এখন আনন্দ-ফুর্তির সময়। তাঁর প্রতিষ্ঠানের হিসাবে বাদশাহর অভিষেকের পর সব মিলিয়ে উপহারের খরচ গিয়ে দাঁড়াবে তিন হাজার ২০০ কোটি মার্কিন ডলারে।
এটি আফ্রিকার বৃহৎ অর্থনীতির দেশ নাইজেরিয়ার বার্ষিক বাজেটের সমান।
গত মাসে বাদশাহ সালমান সিংহাসনে আরোহণের পর বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও মন্ত্রীদের ছাঁটাই করেন। তবে কোনো পদক্ষেপই আলোচনার ঝড় তোলেনি। তার পেছনে সৌদি জনগণের জন্য বিশাল অঙ্কের অর্থ বরাদ্দ করার ভূমিকা আছে বলে মনে করা হচ্ছে।
বাদশাহর দানের তালিকা : পেশাদার সমিতি, সাহিত্য ও খেলার ক্লাব, পানি ও বিদ্যুতে বিনিয়োগ, সরকারি কর্মকর্তাদের দুই মাসের বেতনের সমান বোনাস, সেনাসদস্য, পেনশনধারী ও দেশ-বিদেশে সরকারি বৃত্তি পাওয়া ছাত্ররা এসব অর্থ পেয়েছে। কিছু বেসরকারি কোম্পানিও বাদশাহর মতো পদক্ষেপ নেওয়ায় আরো কয়েকশ কোটি টাকা জনগণের পকেটে ঢুকেছে।
কিছু সরকারি ব্যয় কয়েক বছরের জন্য, তবে বেশির ভাগই এই মাসেই সৌদি বাজারে প্রভাব ফেলবে। জন স্ফিকিয়ানকিস জানান, ৫৫ লাখ সৌদি জনশক্তির মধ্যে প্রায় ৩০ লাখ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী।
মানবাধিকার লঙ্ঘন বা রাজনৈতিক সংস্কার নিয়ে আলাপ-আলোচনা এখন প্রায় বন্ধ রয়েছে। লোকজন নিজের জন্য নতুন মোবাইল ফোন কিনছে, কেউ হাতব্যাগ, কেউ বা বিদেশ ভ্রমণ করছে। অনেকে ঋণ পরিশোধ করেছে, চ্যারিটিতে দান করছে বা মায়ের জন্য স্বর্ণের মালা আনছে। কেউ কেউ টাকা জমিয়ে রেখেছে প্রথম, দ্বিতীয় বা তৃতীয় বিয়ে করবে বলে। কড়কড়ে নোট দিয়ে ছেলেকে ‘গোসল’ করিয়েও কেউ কেউ খুশি।
রিয়াদের উত্তরে বুরাইদায় ক্যাম্প তৈরির সরঞ্জাম সরবরাহকারী আবদুর রহমান আলসানিদি বলেন, ‘প্রথমে আমি যা করেছি তা হলো স্টোররুমে গিয়ে দেখে এসেছি (মালপত্র আছে কিনা)।’ ৩০ শতাংশ বিক্রি বাড়বে বলে তিনি আশা করছেন।
বিশ্বের শীর্ষ তেল রপ্তানিকারক দেশ সৌদি আরবের শাসকরা তেল বিক্রির মুনাফা জনগণের মধ্যে বিলিয়ে দেন। এটা তাঁদের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য। বাদশাহর এই বদান্যতা সৌদি নাগরিকরা শাসক ও প্রজাদের সম্পর্ককে পরিবারের সম্পর্কের মতোই বিবেচনা করে।
এনডিটিভি অবলম্বনে।