অভিবাসী মুসলিমদের ধর্মান্তরিত হওয়ার হার বাড়ছে
জার্মানির একটি গির্জার দৃশ্য। মোহাম্মদ আলী জুনুবি মাথা নিচু করে বসে আছেন আর একজন যাজক তাঁর কালো চুলের ওপর ছিটিয়ে দিচ্ছেন পবিত্র জল। যাজক গটফ্রাইড মার্টেনস বলছেন, ‘তুমি কি শয়তান ও অন্য সব অপশক্তি থেকে দূরে যেতে চাও? তুমি কি ইসলাম ধর্ম থেকে দূরে যেতে চাও?’
জুনুবি উত্তরে বলেন, ‘হ্যাঁ’।
এরপর জুনুবির মাথার ওপর হাত রেখে আশীর্বাদ করলেন যাজক। বললেন, ‘বাবার নামে, ছেলের নামে ও পবিত্র আত্মার নামে আশীর্বাদ করছি।’
মুহাম্মদ জুনুবির নাম এখন মার্টিন। তিনি এখন আর মুসলিম নন বরং একজন খ্রিস্টান।
ইরাসের সিরাজ শহরের কাঠমিস্ত্রি ছিলেন জুনুবি। পাঁচ মাস আগে স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে জার্মানিতে আসেন তিনি। বার্লিনের কাছের ট্রিনিটি গির্জায় গত কিছুদিনে খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত হওয়া শতাধিক ইরান ও আফগান শরণার্থীর মধ্যে জুনুবিও একজন। এঁরা সবাই বলছেন, খ্রিস্টান ধর্ম সম্পর্কে জেনে তাঁরা স্বেচ্ছায় এই ধর্ম গ্রহণ করছেন। তবে এটা অস্বীকার করা যায় না যে, জার্মানিতে বসবাসের সুযোগ পেতেই এই কাজ করছেন তাঁরা।
এদিকে শুধুমাত্র খ্রিস্টান হয়ে যাওয়াই জার্মানিতে থেকে যাওয়ার পথ সুগম করবে না। এ বিষয়ে কিছুদিন আগে জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মের্কেল বলেছেন, জার্মানিতে ইসলাম ধর্মও থাকবে। তবে আফগানিস্তান ও ইরানে মুসলমান থেকে খ্রিস্টান হয়ে যাওয়া দণ্ডণীয় অপরাধ। কেউ এই কাজ করলে তাঁর মৃত্যদণ্ড বা কারাদণ্ড হতে পারে। তাই খ্রিস্টান হয়ে যাওয়া এসব শরণার্থীকে যদি আবার দেশে ফেরত পাঠায় জার্মানি, তাহলে নিশ্চিত বিপদের মধ্যে গিয়ে পড়বেন তাঁরা। তাই খ্রিস্টান হওয়ার পরেও অনেকে ভয়ে নিজেদের নাম সবাইকে বলছেন না। কারণ যদি তাঁরা শেষ পর্যন্ত আশ্রয় না পান তাহলে নিজ নিজ দেশে ফিরে গিয়ে তাঁদের পরিবারগুলোকে সমস্যায় পড়তে হবে।
তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঠিক কতজন মুসলমান শরণার্থী খ্রিস্টানধর্ম গ্রহণ করেছেন সে বিষয়ে সঠিক কোনো তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি। তবে একজন যাজক জানান, হঠাৎ করে খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষিত হওয়ার বর্তমান হার আশ্চর্যজনক।
জার্মানিতে হঠাৎ করেই শরণার্থী ও আশ্রয় চাওয়া মানুষের সংখ্যা বেড়ে গেছে। এ বছর অন্তত আট লাখ শরণার্থী দেশটিতে প্রবেশ করেছে। এঁদের মধ্যে বেশির ভাগই সিরিয়া, ইরাক, আফগানিস্তান অথবা পাকিস্তান থেকে এসেছেন। গৃহযুদ্ধ চলায় সিরীয় নাগরিকদের আশ্রয় পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তবে ইরান ও আফগানিস্তান থেকে আসা মানুষদের জন্য পরিস্থিতি বিশেষ ভালো না। গত কয়েক বছরের হিসাবে দেখা গেছে, এই দুই দেশের খুব বেশি হলে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ মানুষ জার্মানিতে থাকার অনুমতি পেয়েছেন। কিছু মানুষকে আবার সাময়িকভাবে থাকার অনুমতিও দেওয়া হয়েছে।
তবে ধর্মের ওপর ভিত্তি করে কত মানুষকে জার্মানিতে থাকার অনুমতি দেওয়া হবে সে বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু জানায়নি জার্মানির অভিবাসন ও শরণার্থীবিষয়ক দপ্তর।