ধর্ষণচেষ্টার সময় স্বামীকে হত্যা, সেই সুদানি তরুণীর ফাঁসি রদ
ধর্ষণচেষ্টার সময় নিজের স্বামীকে হত্যার দায়ে আলোচিত সুদানি তরুণী নওরা হোসাইনকে ইসলামী আদালতের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডাদেশ খারিজ করে দিয়েছেন দেশটির আপিল আদালত।
আজ বুধবার বিবিসির এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সুদানের আপিল বিভাগ নওরার (১৯) মৃত্যুদণ্ডাদেশ তুলে দিয়ে তাঁকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন।
এর আগে গত মে মাসে দেশটির একটি ইসলামিক আদালত ফাঁসিতে ঝুলিয়ে নওরার মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করার আদেশ দেন। রায়ে বলা হয়, নওরা তাঁর স্বামী আবদুলরাহমান মোহাম্মদ হাম্মাদকে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী হত্যা করেছেন।
আদালতে দেওয়া জবানবন্দির বরাত দিয়ে নওরার আইনজীবী জানান, মাত্র ১৬ বছর বয়সে কিশোরী নওরাকে জোর করে পারিবারিকভাবে আবদুলরাহমান মোহাম্মদ হাম্মাদের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয়। হাম্মাদ ছিলেন নওরার নিকটাত্মীয়, কাজিন। তিনি ছিলেন নওরার থেকে ১৬ বছরের বড়।
একদিন নওরাকে তাঁর স্বামী হাম্মাদ অন্য কাজিনদের সামনে ধর্ষণ করেন। পরের দিনও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি করার চেষ্টা করলে নওরা ছুরিকাঘাতে হাম্মাদকে হত্যা করেন। পরে নওরাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এবং ইসলামী আদালতে তাঁর বিচার শুরু হয়।
এদিকে, বিশ্বের বিভিন্ন তারকা হ্যাশট্যাগ জাস্টিজফরনওরা (#JuticeforNoura) নামে অনলাইনে নওরার মুক্তির দাবিতে প্রচার চালান।
২০১৭ সালের ইউনিসেফের তথ্যমতে, এক-তৃতীয়াংশ সুদানি মেয়েদের ১৮ বছর বয়সের আগেই বিয়ে দেওয়া হয়।
আপিল বিভাগের রায়ে স্বভাবতই খুশি নওরার মা জয়নব আহমেদ। তিনি বিবিসিকে জানান, মেয়ের জীবন বেঁচে যাওয়ায় তিনি অত্যন্ত খুশি।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালও আদালতের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। কিন্তু পাঁচ বছরের এই সাজাকে ‘অসামঞ্জস্য’ উল্লেখ করেছে মানবাধিকার সংস্থাটি। তাদের দাবি, দেশটির বিবাহ আইন এবং বিবাহ-পরবর্তী আইনের সংস্কার করা দরকার, যাতে ভুক্তভোগীদের সাজা না হয়।
নওরার মা বিবিসিকে আরো জানান, ধর্ষণের পর থেকে নওরা নিজেকে ঘৃণা করতে শুরু করে এবং আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয়। স্বামীকে হত্যার পর সে পরিবারের কাছে পালিয়ে যায় এবং সবকিছু খুলে বলে।
পরিবারের ওপর হামলা হতে পারে এমন ভয়ে ঘটনার পর পরই নওরার বাবা পুরো পরিবারকে নিয়ে পুলিশের কাছে আশ্রয় নেন। কিন্তু সুরক্ষার বদলে পুলিশ উল্টো নওরাকে গ্রেপ্তার করে।
নওমি ক্যাম্পবেল ও এমা ওয়াটসনের মতো বিশ্বের তারকারা নওরার হয়ে এই সাজার বিরুদ্ধে টুইট করেন।