কারাগারে হেলিকপ্টার নিয়ে আসামি চম্পট
হলিউডি সিনেমার অনুপ্রেরণায় রোমাঞ্চকর এক অভিযান চালিয়ে ভারী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত তিন সহযোগীর সহায়তায় হেলিকপ্টারে করে জেল থেকে পালিয়েছেন এক আসামি। গতকাল রোববার সকালে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের কারাগারে এ ঘটনা ঘটে।
অপরাধী আলজেরিয়ান বংশোদ্ভূত ৪৬ বছর বয়সী রেদোয়ান ফাইদ। ফ্রান্সের তালিকাভুক্ত অপরাধীদের একজন তিনি।
দ্য টেলিগ্রাফ জানায়, গতকাল ফ্রান্সের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ‘রু’ নামক কারাগারে ডাকাতির অপরাধে ২৫ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত গ্যাংস্টার রেদোয়ান ফাইদকে দেখতে যান তাঁর ভাই। ঠিক সেই সময় পূর্বপরিকল্পনা অনুসারে রেদোয়ানের সহযোগীরা মুহূর্তের মধ্যে তাঁর কক্ষে প্রবেশ করেন।
জানা যায়, দুই সহযোগী যখন রেদোয়ানকে আনতে গিয়েছিলেন, সেই সময় তৃতীয় সহযোগী কড়া নজর রাখছিলেন হেলিকপ্টারের পাইলটের ওপর, কেননা অভিযানে আনা পাইলটসহ সেই হেলিকপ্টারটি ছিল তার কিছুক্ষণ আগেই ছিনতাই করা।
এরপর রীতিমতো কমান্ডো স্টাইলে গ্যাংস্টার রেদোয়ানকে নিয়ে হেলিকপ্টারযোগে পালিয়ে যান তাঁরা। পরে কারাগার থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে গোনেসা নামক এলাকায় পুড়িয়ে ফেলা অবস্থায় হেলিকপ্টারটিকে খুঁজে পায় পুলিশ। তাঁরা সম্ভবত সেখান থেকে কোনো গাড়িতে করে পরবর্তী গন্তব্যের দিকে গেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো কারাগার থেকে পালালেন রেদোয়ান ফাইদ। এর আগে ২০১৩ সালে চার কারারক্ষীকে জিম্মি করে জেলখানা থেকে পালিয়ে যান তিনি। সে সময় রেদোয়ান ডায়নামাইট ব্যবহার করেছিলেন।
সংবাদ সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, বর্তমানে রেদোয়ানকে গ্রেপ্তারের জন্য দুই হাজার ৯০০ সশস্ত্র পুলিশ কাজ করছে।
রোববার সন্ধ্যায় রু কারাগার পরিদর্শনে এসে ফ্রান্সের বিচার বিষয়কমন্ত্রী নিকোল বেলুবে জানিয়েছেন, কমান্ডোরা তাঁদের পালানোর পথ ও স্থানগুলো ড্রোন ব্যবহার করে পর্যবেক্ষণ করেছেন, তদন্ত প্রতিবেদন এলে সবটা জানা যাবে।
উল্লেখ্য, ২০১০ সালে এক ডাকাতি অভিযান পরিচালনাকালে রেদোয়ানকে গ্রেপ্তার করা হয়। সে সময় এক পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হন। ডাকাতির ঘটনাকে কেন্দ্র করে চলতি বছরের এপ্রিলে ২৫ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয় রেদোয়ানকে। তার পর গতকাল এ ঘটনা ঘটল।
প্যারিসের এক শহরতলির অপরাধপ্রবণ এলাকায় বেড়ে ওঠা ও জীবনের নানা অভিজ্ঞতা নিয়ে ২০০৯ সালে একটি বই লিখেছিলেন রেদোয়ান। কীভাবে ধীরে ধীরে অপরাধ জগতে ঢুকে পড়েছিলেন তিনি, সেসব বর্ণনা পাওয়া যায় সে বইয়ে। সেখান থেকেই জানা যায়, হলিউডি সিনেমা, গ্যাংস্টার সিনেমা কী মারাত্মক প্রভাব বিস্তার করেছে রেদোয়ানের অপরাধী জীবনে।
রেদোয়ান ফাইদের লেখা থেকে জানা যায়, হলিউডের ছবি ‘স্কারফেস’ দেখে মাফিয়া জীবনে তিনি ব্যাপকভাবে উৎসাহিত হয়েছিলেন।
রেদোয়ানের লেখা থেকে জানা যায়, ২০০৯ সালে প্যারিস ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে আল পাচিনো ও রবার্ট নিরো অভিনীত গ্যাংস্টার ছবি ‘হিট’র নির্মাতা মাইকেল মানকে রেদোয়ান বলেছিলেন, ‘আপনি ছিলেন আমার কারিগরি উপদেষ্টা।’
ব্যাংক ডাকাতি যাতে সফলভাবে সম্পন্ন করা যায়, সে জন্য ‘হিট’ ছবিটি অন্তত ১২ বার দেখেছেন বলে নিজের লেখায় উল্লেখ করেছিলেন রেদোয়ান। সিনেমার প্রভাবে আচ্ছন্ন থাকা রেদোয়ান নিজেই যেন পরিণত হয়েছেন সিনেমার চরিত্রে।
রু কারাগারে রেদোয়ানের তত্ত্বাবধানে থাকা এক কারারক্ষী জানিয়েছেন, রেদোয়ান ছিলেন খুবই নম্র একজন বন্দি। তিনি কখনো রাগারাগি, উচ্চবাচ্য বা তর্ক করতেন না। ঠান্ডা মাথার এই বন্দি সব সময় চুপ করেই থাকতেন, যাতে তাঁর মাথায় সাজানো পালানোর পরিকল্পনার কথা কেউ বুঝতে না পারে। সব মিলিয়ে রেদোয়ান যেন হার মানান সিনেমাকে।