নৌ দুর্ঘটনায় ১৩ জনকে বাঁচিয়ে নিজেই ডুবে মরলেন উদ্ধারকারী
নাইজেরিয়ার রিভার্স রাজ্যে এক নৌ দুর্ঘটনায় কবলিত ১৩ যাত্রীকে একের পর এক উদ্ধার করেন একজন উদ্ধারকারী। এরপর বাকিদের বাঁচাতে গিয়ে শক্তি নিঃশেষিত হয়ে নিজেই ডুবে মারা গেছেন তিনি। গত শনিবার রাজ্যের দেগেমা অঞ্চলে নদীতে ওই মর্মস্পর্শী দুর্ঘটনা ঘটে বলে জানা যায়।
সিএনএন জানায়, যাত্রাপথে কোনো কিছুর সঙ্গে সজোরে ধাক্কা খেলে যাত্রীবাহী নৌকাটি থেকে ছিটকে নদীতে পড়ে যান যাত্রীরা, একই নৌকায় থাকা জোসেফ ব্ল্যাকসন নামের উদ্ধারকারী সে সময় দেরি না করে বিপদ্গ্রস্ত যাত্রীদের উদ্ধারে ঝাঁপিয়ে পড়েন।
একা হাতেই জোসেফ একের পর এক ১৩ জনকে নদী থেকে টেনে তোলেন, ততক্ষণে তাঁর শক্তি নিঃশেষ প্রায়, তারপরও ক্লান্ত শরীর নিয়ে ১৪তম যাত্রীকে উদ্ধারে ছুটে যান তিনি। কিন্তু এবারে শেষ রক্ষা হয় না, ক্লান্তিজনিত কারণে শক্তি হারিয়ে নদীতে ডুবে যান ব্ল্যাকসন নিজেই।
রিভার্সের পুলিশ বিভাগের এক মুখপাত্র নামদি অমোনি সিএনএনকে নিশ্চিত করে বলেন, ২৪ জন যাত্রী নিয়ে চলার সময় নদীতে কোনো কিছুর সঙ্গে ধাক্কা লেগে ওই দুর্ঘটনা ঘটে।
অমোনি আরো জানান, দুই সন্তানের বাবা ৩৬ বছর বয়সী ব্ল্যাকসন যাত্রীদের জীবন বাঁচাতে গিয়ে নিঃস্বার্থভাবে প্রাণ দিয়েছেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি নিঃস্বার্থ ও বন্ধুবৎসল বলেই পরিচিত ছিলেন। এখন সবাই তাঁকে সত্যিকারের ‘মহানায়ক’ হিসেবে মনে রাখবেন।
ব্ল্যাকসনের স্ত্রী মার্সি স্বামীর ব্যাপারে শ্রদ্ধার সঙ্গে বলেন, ‘সে ছিল খুব যত্নশীল আর প্রেমময় একজন মানুষ, সন্তানদের কাছে খুব ভালো বাবা। তাঁর কাছে সব সময়ই নিজের আগে অন্যদের জায়গা, সে ছিল নিঃস্বার্থ।’
দুর্ঘটনার শিকার ওই নৌকায় ব্ল্যাকসন তাঁর বোনদের নিয়ে উঠেছিলেন বলে জানান মার্সি। বোনেরা উদ্ধার পেলেও ব্ল্যাকসনের আর স্বজনদের মাঝে ফিরে আসা হয়নি।
ব্ল্যাকসনই তাঁর পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন বলে জানান স্ত্রী মার্সি। তাঁর অকালমৃত্যুতে পরিবারটি কীভাবে চলবে, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন তিনি। মার্সা আশা করেন, আত্মত্যাগী জোসেফ ব্ল্যাকসনের পরিবারকে সমাজ বা প্রশাসন নিশ্চয়ই একটা কাজের ব্যবস্থা করে দেবে।
ছোট ছোট ছেলেমেয়ে দুটো বাবার অনুপস্থিতিকে এখনো স্বাভাবিকভাবে নিতে পারছে না। তারা বাবার খোঁজে, তাঁর সঙ্গে কথা বলার ব্যাকুলতায় কান্নাকাটি করছে বলে জানান মার্সা।
এদিকে, সত্যিকারের মহানায়ক জোসেফ ব্ল্যাকসনকে নিয়ে শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় আপ্লুত নাইজেরিয়ার নাগরিকরা।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একজন লিখেন, ‘ব্ল্যাকসন দুনিয়াকে দেখিয়ে দিয়ে গেছে যে সত্যিকারের নায়করা আছে।’