দুর্নীতির বিরুদ্ধে তারুণ্যের জাগরণ দেখাল গ্রিস
ইউরোপের মানুষের আলোচনা এখন শুধু একজনকে ঘিরে। তিনি ৪০ বছর বয়সী গ্রিক বীর আলেক্সিস চিপ্রাস। গ্রিসের নতুন আলো, নতুন প্রধানমন্ত্রী। সরকার গঠনকারী বামপন্থী দল সিরিজার সভাপতি।
চিপ্রাস ইউরো অঞ্চলের কৌশলগত সংকট, গ্রিসের অভিজাতদের দুর্নীতি ও তরুণদের সম্ভাবনা নিয়ে কাজ করার অঙ্গীকার করেছেন। শপথের সময় নিজেকে তিনি আরো দৃঢ়রূপে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, গ্রিসের বেলআউট শর্ত যতক্ষণ না পুনর্নির্ধারণ হচ্ছে, সে সময় পর্যন্ত তিনি গলায় টাই বাঁধবেন না।
চিপ্রাসকে নিয়ে মেতে আছে ইউরোপসহ বিশ্বের গণমাধ্যম। নির্বাচনের আগে থেকেই তাঁর দর্শন নিয়ে চলছে বিশ্লেষণ। বলা হচ্ছে, চিপ্রাসের বিজয় গ্রিসের অভিজাত শ্রেণীর দুর্নীতির বিরুদ্ধে তরুণদের বিদ্রোহের ফল। মূলত ব্যয় সংকোচনের কঠোর নীতি ও অভিজাতদের কর-ফাঁকির বিরুদ্ধে সিরিজা প্রথম থেকেই অবস্থান নিয়ে এসেছে। এসব বিষয় দেশটির সামষ্টিক অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। পুঁজিপতিদের দুঃশাসন দীর্ঘ সংকট সৃষ্টি করেছে। এতে গ্রিস ঋণখেলাপি রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে বলে মনে করেন তরুণরা। জয়ী হওয়ার পর তাই চিপ্রাস বলেন, ‘এখন সর্বনাশা কৃচ্ছ্রনীতি ত্যাগ করে নতুন গন্তব্যে পা বাড়াব আমরা।’
গ্রিসের ২৪০ বিলিয়ন ইউরো ঋণ নিয়ে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সঙ্গে ফের আলোচনা চালানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন চিপ্রাস। তিনি বলেন, ‘একটি যৌক্তিক, বাস্তবসম্মত ও সব পক্ষের জন্য সুবিধাজনক সমাধানে আসতে আলোচনার জন্য আমরা এখন প্রস্তুত।’
দীর্ঘ দুঃশাসন সয়েছে গ্রিস। নাৎসি বাহিনীর দখলদারত্ব, গৃহযুদ্ধ ও সামরিক জান্তার শাসনের সময়ের সুবিধাভোগীদের উত্তসূরীরা এখনো বহাল তবিয়তে। পুঁজিপতিদের ফাঁকি দেওয়া করের বোঝা সাধারণের ঘাড়ে চেপেছে এত দিন।
চিপ্রাস জেতায় তরুণরা উচ্ছসিত। এবার পুরো অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির পুনর্গঠনের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন গ্রিক তরুণরা।
তখন ২০১০ সাল। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ভবিষ্যদ্বাণী করল গ্রিসের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হবে। হলো উল্টো। সে বছর প্রবৃদ্ধি কমল ২৫ শতাংশ। বেকারত্ব ঠেকেছিল ৬০ শতাংশে। জেদ চেপে বসে চিপ্রাসের মধ্যে।
সাত বছর ধরে সিরিজার নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন চিপ্রাস। সাধারণ নির্বাচনের জন্য কাজ করেছেন গত আড়াই বছর। তরুণদের উদ্বুদ্ধ করে নির্বাচনে জিতেছেন। তবে রণক্ষেত্রে তাঁকে শিশু বলেই মনে করছেন তাঁর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ।
১৯৭৪ সালের ২৮ জুলাই এথেন্সে চিপ্রাসের জন্ম হয়। এর ঠিক তিন দিন আগে অবসান হয় সামরিক জান্তার দুঃশাসনের। হাই স্কুলে পড়ার সময় শিক্ষা ব্যবস্থার পুনর্গঠন নিয়ে আন্দোলনে তিনি জড়িয়ে পড়েন। সে সময়ই বামপন্থী যুব সংগঠনে তিনি যোগ দেন। কিন্তু এরপর এথেন্সের জাতীয় কারিগরী বিশ্ববিদ্যালয়ে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পড়াশুনার চাপে তাঁকে রাজনীতি ত্যাগ করতে হয়। এ পাঠ চুকিয়ে আবারও বামপন্থী যুবজোটে যোগ দেন, যা তাঁকে আজকের পরিচিতি এনে দিয়েছে। তবে তাঁকে অনেক চরাই-উতরাই পার করতে হয়েছে।
২০০৬ সালে চিপ্রাস এথেন্সের মেয়র পদে নির্বাচন করলেও জিততে পারেননি। ২০০৮ সালে অনেক ভোটের ব্যবধানে তিনি বামপন্থী যুবজোটের সভাপতি নির্বাচিত হন। গ্রিসের পার্লামেন্টের সাবেক সদস্য এবং কোয়ালিশন অব দ্য লেফ্ট মুভমেন্টস ও ইকোলজির সাবেক সভাপতি আলেক্সান্দ্রোস আলেকোস আলোভানোসের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। ২০০৯ সালে আলাভানোস দল থেকে পদত্যাগ করলে তিনি লেফট মুভমেন্টের সভাপতি পদে অধিষ্ঠিত হন। এরপর থেকে চিপ্রাসের কথা ও কাজের কোনো পরিবর্তন হয়নি বলেই দলের নেতা-কর্মীরা মনে করেন। জোটের নেতা ও কর্মীরা তাঁকে সব সময় সুশীল মেজাজের ও সহাস্য মানুষ বলেই দেখে এসেছেন।