আয়লানকে নিয়ে কার্টুন ছেপে আবার বিতর্কে শার্লি এবদো
তুরস্কের সমুদ্রসৈকতে পড়ে থাকা সিরীয় শিশু আয়লান কুর্দির ছবি দিয়ে বিতর্কিত দুটি কার্টুন ছেপেছে ফরাসি স্যাটায়ার ম্যাগাজিন শার্লি এবদো। বিতর্কিত ওই ম্যাগাজিনের এমন কাণ্ডে বিশ্বজুড়ে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
চলতি সংখ্যায় শার্লি হেবদোর প্রচ্ছদের কার্টুনে দেখা যায়, সৈকতে উপুড় হয়ে পড়ে আছে এক শিশুর মৃতদেহ। বিশ্বজুড়ে সাড়াজাগানো সৈকতে পড়ে থাকা আয়লানের ছবির অনুকরণে এই কার্টুন আঁকা হয়। কার্টুনের ডানে ফরাসিতে লেখা হয়েছে ‘সি পাই দ বাত’, যার অর্থ দাঁড়ায় ‘লক্ষ্যের খুব কাছে’। আর ডানদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ফুড চেইন ম্যাকডোনাল্ডের একটি বিলবোর্ড আঁকা হয়েছে, যেখানে ফরাসিতে লেখা বাক্যটির অর্থ দাঁড়ায়, ‘একটির দামে দুই শিশুর কম্বো’। এখানে কম্বো বলতে কয়েকটি খাবার একসঙ্গে বোঝায়।
শার্লি এবদোর অপর বিতর্কিত কার্টুনে দেখা যায়, পানিতে ডুবে গেছে একটি শিশু, যার দুই পা পানির ওপরে দিকে। পাশেই আঁকা হয়েছে যিশুখ্রিস্টের কার্টুন। এর শিরোনাম দেওয়া হয়েছে, ‘ইউরোপ যে খ্রিস্টান তার প্রমাণ।’ যিশুখ্রিস্টের কার্টুনে বলা হচ্ছে, ‘খ্রিস্টানরা পানির ওপর হাঁটতে পারে।’ আর ডুবে শিশুর কাছে লেখা হয়েছে, ‘মুসলিম শিশুরা ডুবে যায়।’
গত ২ সেপ্টেম্বর তুরস্কের সমুদ্রের সৈকতে পড়ে ছিল তিন বছরের শিশু আয়লানের নিথর দেহ। ইউরোপে যাওয়ার জন্য মা-বাবা ও পাঁচ বছরের এক ভাইয়ের সঙ্গে নৌকায় পাড়ি জমিয়েছিল আয়লান। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ থেকে বাঁচতে চেয়েছিল তারা। কিন্তু তুরস্কের উপকূলে ডুবে যায় তাদের নৌকা। ডুবে যাওয়া নৌকার ১১ যাত্রীর মৃতদেহ উদ্ধার করেছে তুরস্কের পুলিশ। আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার পান আয়লানের বাবা আবদুল্লাহ। মা ও ভাইয়ের সঙ্গে শিশু আয়লানের মৃত্যু যেন ইউরোপে অভিবাসী সংকটের প্রকৃত অবস্থা তুলে ধরে। আর ওই ঘটনায় সারা বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তোলে। মধ্যপ্রাচ্যের শরণার্থীদের বিষয়ে বিশ্বজুড়ে জনমত সৃষ্টি হয়।
টুইটার ও ফেসবুকসহ সব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শার্লি এবদোর বিতর্কিত কার্টুন নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে। আয়লানের হৃদবিদারক ঘটনাকে নিয়ে স্যাটায়ার কার্টুন শার্লি এবদোর প্রকৃত পরিচয় বলে দেয় বলে মন্তব্য করেছেন অনেকে।
এর আগেও মহানবী হজরত মুহাম্মদ (স.) এর কার্টুন ছেপে বিতর্কে জড়ায় শার্লি এবদো। এই কার্টুনের কারণেই চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি প্যারিসে ম্যাগাজিনটির কার্যালয়ে হামলার ঘটনা ঘটে। একদল জঙ্গির গুলিবর্ষণে শার্লি এবদোর কর্মীসহ ১২ জন নিহত হন।