শ্রীলঙ্কায় গণকবরের সন্ধান
শ্রীলঙ্কার তামিল অধ্যুষিত শহর মান্নারে নতুন একটি গণকবর খুঁজে পাওয়া গেছে। সেখান থেকে ৯০টির বেশি মানুষের কঙ্কাল উদ্ধার করা হয়েছে।
বিবিসি জানায়, গতকাল সোমবার শহরের প্রধান বাসস্ট্যান্ডের কাছে পাওয়া গণকবরটির কঙ্কালগুলো পরীক্ষা করে সেগুলোর পরিচয় শনাক্ত করার চেষ্টা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এ বছর শুরুর দিকে নতুন ভবন নির্মাণের জন্য ওই স্থানে খোঁড়াখুঁড়ি শুরু হলে শ্রমিকরা প্রথম কঙ্কালগুলো দেখতে পান। পরে শ্রীলঙ্কার একটি আদালত রাসায়নিক বিশেষজ্ঞদের গণকবরটি বিস্তৃতভাবে খুঁড়ে দেখার নির্দেশ দিলে গণকবরটি খোঁড়াখুঁড়ি ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ শুরু হয়। কঙ্কালগুলো যেভাবে পাওয়া গেছে, সেগুলো প্রচলিত পন্থায় কবর দেওয়া হয়নি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। গণকবরটির আশপাশে আরো কঙ্কাল খুঁজে পাওয়া যাবে বলে মনে করছেন তাঁরা।
খননকাজের নেতৃত্ব দেওয়া কেলানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও ফরেনসিক পুরাতাত্ত্বিক রাজ সোমদেব বলেন, ‘পুরো এলাকা দুই ভাগে ভাগ করা যায়। এক ভাগে আমরা স্বাভাবিক সমাধিক্ষেত্র পেয়েছি। আরেক অংশে মানুষের কঙ্কাল রয়েছে, যেগুলো নিয়ম অনুযায়ী সমাহিত করা হয়নি।’ তিনি বলেন, আরো কিছু জায়গা রয়েছে, যেখানে খনন চলবে। সেখানে ছয়টা কঙ্কাল পাওয়া যাবে।
অধ্যাপক সোমদেব বলেন, ‘যেভাবে এগুলো রাখা হয়েছে, তা নিয়ে আমরা চিন্তিত। সম্পূর্ণ বিশৃঙ্খল অবস্থা—কঙ্কালগুলো দুটি স্তরে পাওয়া গেছে।’ অধ্যাপক সোমদেব ও তাঁর দল এখনো নিশ্চিত হতে পারেননি, কীভাবে এরা মারা গেছে।
আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সরকার স্বতন্ত্র কমিটি গঠন করে, যেটা অফিস অব দ্য মিসিং পারসনস (ওএমপি) নামে পরিচিত। মান্নারে খননকাজের আংশিক অর্থায়ন করেছে ওএমপি।
ওএমপির চেয়ারম্যান সালিয়া পিয়েরিস বলেন, ‘ওএমপির প্রাথমিক কাজ হলো, নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিচয় শনাক্ত করা এবং তাদের নিখোঁজ হওয়ার ব্যাপারে স্বজনদের জানানো।’
শ্রীলঙ্কায় সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী তামিল গেরিলাদের দীর্ঘ ২৬ বছর ধরে গৃহযুদ্ধ চলে। ওই যুদ্ধে এক লাখের বেশি মানুষ নিহত হন। নিখোঁজ রয়েছে আরো অনেকে। ২০০৯ সালে গৃহযুদ্ধের অবসানের পর যুদ্ধাঞ্চলে খুঁজে পাওয়া এটি দ্বিতীয় বৃহৎ গণকবর। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর অভিযোগ, গৃহযুদ্ধের সময় সেনাবাহিনী এবং তামিল গেরিলা উভয়ই বেসামরিক নাগরিকদের ওপর নিষ্ঠুর গণহত্যা চালিয়েছে।